ডেস্ক নিউজ : আল্লাহ মুমিনদের জন্য জান্নাতকে এবং অবিশ্বাসী ও পাপীদের জন্য জাহান্নামকে ঠিকানা করেছেন। মুমিন জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস করে এবং জান্নাতে প্রবেশের আশা করে। বিপরীতে অবিশ্বাসীরা জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস করে না এবং আল্লাহর পুরস্কার ও শাস্তির পরোয়া করে না। একবার কোনো এক নাস্তিক আমাকে প্রশ্ন করেছিল, আমরা এত ভূগোল পড়লাম, কোথাও জান্নাতের সন্ধান পেলাম না।
উত্তরে আমি বলেছিলাম, আপনি দৃশ্য জগতের ভূগোল পড়েছেন, অদৃশ্য জগতের ভূগোল পড়েননি। সেটা আমাদের পড়া আছে। আপনি যদি উভয় জগতের ভূগোল তথা কোরআন পড়তেন, তবে জান্নাতের সন্ধান পেতেন। যারা এই ভূগোল পড়েছে তারা জান্নাত, জাহান্নাম, পুলসিরাত, আরশ ও মিজানের জ্ঞান লাভ করেছেন।
তাদের কেউ কেউ এগুলো দুনিয়াতে অবস্থানকালেই ‘স্পষ্টত দেখতে পেয়েছেন’।
শায়খ আবদুল করিম জায়লি (রহ.) দিব্যজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের জরিপ পর্যন্ত করেছিলেন। কেননা উভয়টি অনেক বিস্তৃত হলেও এগুলোর সীমাবদ্ধতাও আছে।
আর সীমাবদ্ধ বিষয়ের জরিপ অসম্ভব নয়। তিনি যদি দেহের ইন্দ্রিয় শক্তির মাধ্যমে জরিপ করতেন, তবে অনেক সময়ের প্রয়োজন হতো। তিনি জরিপ করেছেন আত্মিক শক্তির সাহায্যে, যা ইন্দ্রিয় শক্তির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ফলে তিনি অল্প সময়েই তা করতে পেরেছেন। শায়খ আবদুল করিম জায়লি (রহ.) তাঁর দিব্যদৃষ্টি দিয়ে এক মহাসমুদ্র অবলোকন করেছিলেন, যার একেকটি তরঙ্গের ব্যাপ্তি আসমান ও জমিনের তুলনায় ১০ গুণ বড়।
ফেরেশতারা সেসব তরঙ্গ আটকে রেখেছেন। নতুবা আসমান ও জমিনের সব কিছু ডুবে যেত। (বিস্তারিত দেখুন : উর্দু ভাষায় অনূদিত শায়খ আবদুল করিম জায়লির জান্নাত ও দোজখ কি হাকিকত)
কোনো কোনো অজ্ঞ ব্যক্তি এমন সন্দেহও প্রকাশ করে যে জান্নাত যখন এতই বিস্তৃত, যার পরিসর আসমান ও জমিনের সমান, তখন তা কোথায় রাখা হয়েছে? উত্তরে আমি বলি, এই প্রশ্ন করার অধিকার কারো নেই। কেননা তোমাদের বৈজ্ঞানিকদের মতে শূন্যমণ্ডল অসীম। সুতরাং অসীম মহাকাশের কোথাও জান্নাত রাখা হলে ক্ষতি কি? মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা, তেমনি হয়তো অসীম শূন্যতার কোথাও সজীব জান্নাতকে গ্রহের মতো রেখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিক দূরত্বের কারণে তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। বিজ্ঞানীদের মতবাদের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীদের নিরুত্তর করার জন্যই এই উত্তর দেওয়া হলো। নতুবা আমাদের মতে, আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী শূন্যমণ্ডলের বাইরে সাত আসমানের ওপর জান্নাত অবস্থিত। কোরআনের আয়াত থেকেও জানা যায়, জান্নাত আসমানগুলোর ওপরে। আল্লাহ বলেন, ‘উট সুইয়ের ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ না করা পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৪০)
হাদিসের বর্ণনা থেকেও জানা যায়, জান্নাত সাত আসমানের ওপরে এবং আরশের নিচে। আরশ সর্বাপেক্ষা বড়। এর থেকে বড় কোনো সৃষ্টি নেই। শায়খ আবদুল করিম জায়লি (রহ.) দিব্যচোখে যে সমুদ্র দেখতে পেয়েছিলেন, যার ঢেউ আসমান ও জমিনের চেয়েও ১০ গুণ বড় ছিল তাও আরশের নিচে অবস্থিত। আরশ যদিও সর্বাপেক্ষা বড় সৃষ্টি, তবু তা সীমাবদ্ধ। শুধু আল্লাহ তাআলার মহান সত্তার কোনো সীমা নেই। শুধু তিনি অসীম ও অন্তহীন।
যাহোক, বেহেশতের অবস্থাসমূহ চিন্তা করুন। এতে পরকালের প্রত্যাশা ও তার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। মহান আল্লাহর দয়া সীমাহীন। তিনি আমাদের সামান্য পরিশ্রমের বিনিময়ে এমন বিরাট জান্নাত দান করবেন। পরকালের প্রত্যাশা করারও পুরস্কার আছে। দুনিয়ার প্রত্যাশার বিনিময়ে কোনো পুরস্কারের অঙ্গীকার করা হয়নি। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরকালের ফসল আশা করে আমি তার ফসলে বরকত দিই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল আশা করে তাকেও আমি তা থেকে সামান্য দান করি।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ২০)
মাওয়ায়িজে আশরাফিয়া থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর
কিউএনবি/অনিমা/৩০ নভেম্বর ২০২৫,/বিকাল ৩:৫১