ডেস্ক নিউজ : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারতের কাছে একটি নোট ভার্বাল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর এ অনুরোধ পাঠানো হয়। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়নের সময় প্রায় ১,৪০০ মানুষের মৃত্যুর জন্য তাদের দায়ী করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই বিভিন্ন বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার দিয়ে আসছেন। গত এক বছরে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে একাধিকবার অনুরোধ জানালেও ভারত সেসবের সরাসরি জবাব দেয়নি। গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম নোট ভার্বাল শুধুমাত্র গ্রহণের স্বীকারোক্তি পেয়েছিল। দ্বিতীয় অনুরোধেরও কোনো উত্তর আসেনি।
হাসিনার ফাঁসির আদেশ শোনানোর পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু জানায় যে তারা ‘রায়টি সম্পর্কে অবহিত আছে’ এবং বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার পক্ষে কাজ করবে—কিন্তু প্রত্যর্পণ বিষয়ে কোনো অবস্থান জানায়নি। বিশ্লেষকদের মতে, ভারত এ মুহূর্তে কোনো বড় পদক্ষেপে যাবে না। ভারতীয় গবেষক স্মৃতি এস. পট্টনায়ক বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ‘অস্থায়ী ও সীমিত ম্যান্ডেটের’ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। দিল্লি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে কেবল নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর।
ভারতে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিরোধিতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা, ১৯৭৫–পরবর্তী আশ্রয় প্রদান এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা সহযোগিতার কারণে শেখ হাসিনাকে দিল্লি দীর্ঘদিন ধরে ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ হিসেবে দেখে এসেছে। ফলে একজন ‘বন্ধুকে’ মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি পাঠানো ভারতের জন্য রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও ভারত ‘রাজনৈতিক অপরাধ’ ধারার কারণে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। যদিও খুনের মতো অপরাধ এই ধারার আওতায় পড়ে না, তবু শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে। এছাড়া ভারত বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে। এমনকি ভারত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও, পূর্ণ প্রত্যর্পণ শুনানি হবে ভারতীয় আদালতে, যেখানে শেখ হাসিনা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।
বাংলাদেশে ভারতের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাগত স্বার্থ উল্লেখযোগ্য হওয়ায় দিল্লি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সতর্ক কৌশল অবলম্বন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতকে ‘ধীরে ও নীরবে’ সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এগোতে হবে। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে ভারতবিরোধী বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
লেখক: সুধা রামচন্দ্রন। দ্য ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সম্পাদক।
কিউএনবি/আয়শা/২৭ নভেম্বর ২০২৫,/বিকাল ৪:৩৩