শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

তাঁতের চাকা ঘুরছে, থামছে বাল্যবিয়ে

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১২৫ Time View

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী গ্রামে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোতে বদলে যাচ্ছে চিত্র। তাঁতের চাকা ঘুরছে, থামছে বাল্যবিয়ে। আর্থিক সংকটে মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হওয়ার প্রবণতা কমছে এখানকার নারীদের নিজস্ব আয়মুখী উদ্যোগে। এমন কয়েকটি পরিবারের গল্পই তুলে ধরে এলাকাজুড়ে আলোচনায় এসেছে তাঁতশিল্পভিত্তিক নারীদের কর্মসংস্থান।

গ্রামের গৃহবধূ জুঁই আক্তার জানালেন, একাদশ শ্রেণিতে পড়া মেয়ের বিয়ে নিয়ে আর ভাবছেন না তিনি। দারিদ্র্যের চাপে আগে বাধ্য হয়ে বিয়ের কথা ভাবলেও এখন অবস্থান পাল্টেছে। বাড়িতে নিজস্ব তাঁত মেশিন বসিয়ে শাড়ি বুনছেন জুঁই। সেই আয়েই চলছে দুই মেয়ের পড়াশোনা। তিনি বলেন, ‘মেয়েরা যতদিন পড়তে চায়, ততদিন পড়াইবো। এখন আর বিয়ের চিন্তা করি না।’একই গ্রামের চায়না বেগমও তাঁদের মতোই। পাঠখড়ির ছোট ঘরে তিন মেয়েকে নিয়ে তার বসবাস। স্বামী ভাটার শ্রমিক। সংসার খরচে গলদঘর্ম হলেও মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেননি তিনি।

আরডিআরএস থেকে তাঁত প্রশিক্ষণ ও মেশিন কেনার আর্থিক সহায়তা পেয়ে চায়না শাড়ি বোনা শুরু করেন। বড় মেয়েকে পাশে
নিয়ে প্রতি দুই দিনে একটি করে শাড়ি তৈরি করছেন। শাড়িপ্রতি ৬৫০ টাকা আয় হয়। মাসে ১৮–২০টি শাড়ি বিক্রি করে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন তিনি। চায়না বলেন, ‘স্বামীর রোজগারে সংসার চলে না। তাই প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁতের কাজ শুরু করেছি। এখন নিজেদের আয়েই মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছি।’ 

 

চর শৌলমারী ইউনিয়নে এ রকম প্রায় ৫০টি পরিবারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে আরডিআরএস বাংলাদেশের ‘চাইল্ড নট
ব্রাইড’ (সিএনবি) প্রকল্পের মাধ্যমে। নারী সদস্যদের তাঁত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে মেশিন কেনার অনুদান। নারীরা ঘরে বসে শাড়ি তৈরি করে আয় করছেন। সিএনবি প্রকল্প সূত্র জানায়, গত এক বছরে চর শৌলমারী গ্রামে ৬০ শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। সবই দরিদ্র পরিবারের। বর্তমানে অন্তত ১৮০ পরিবার এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে।

তবে প্রকল্পের সহায়তায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫০ নারী নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হওয়ায় কন্যাশিশুদের পড়াশোনা বজায় রাখা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সিএনবি প্রকল্পের কুড়িগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী অলিক রাংসা বলেন, ‘এনআরকে-টেলিনথ ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহায়তায় আমরা বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর আয়বৃদ্ধিতে কাজ করছি।

পরিবারের আয় বাড়লে মেয়েদের বোঝা মনে করার প্রবণতা কমে। এতে বাল্যবিয়েও কমছে।’চর শৌলমারীর নারীদের উদ্যোগ দেখাচ্ছে, পরিবারের আয় বৃদ্ধি পেলে মেয়েরা ফিরে পায় পড়াশোনার অধিকার—আর কমে যায় বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক ঝুঁকি। ছবির ক্যাপশন ১. নিজের তাঁত মেশিনে শাড়ি বুনছেন জুঁই আক্তার। ২. তাঁত মেশিনে শাড়ি বুনছেন চায়না বেগম। পাশে সহায়তা করছে বড় মেয়ে মলি আক্তার। ৩. নিজ কুড়ে ঘরের সামনে চায়না বেগম।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৫ নভেম্বর ২০২৫,/রাত ৮:০০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit