বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০১ অপরাহ্ন

স্বাস্থ্য, স্বাদ ও সতর্কতা—ঘি নিয়ে যা জানা জরুরি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৬৮ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : উপমহাদেশী রান্না, আয়ুর্বেদ কিংবা কিছু কিছু ধর্মীয় আচার—সব জায়গাতেই ঘি একটি অপরিহার্য উপাদান। শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় বলেই নয়, এই সোনালি তরল চর্বি আসলে পুষ্টিগুণে ভরপুর। আপনি কি জানেন, প্রতিদিন সামান্য ঘি খাওয়া শরীরের মেটাবলিজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এমনকি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও বাড়াতে পারে?

ঘি যেভাবে তৈরি হয়
ঘি আসলে ক্ল্যারিফায়েড বাটার, অর্থাৎ দুধের মাখনকে ধীরে ধীরে গরম করে তার পানি ও দুধের কণা আলাদা করে ফেলা হয়। ফলে যা থাকে, তা হলো খাঁটি, সোনালি ঘি—যার গন্ধ ও স্বাদ দুটোই গভীর ও বাদামের মতো।

ঘি-এর ৮ প্রমাণিত উপকারিতা

স্বাস্থ্যকর চর্বির উৎস
ঘিতে আছে মনো-আনস্যাচুরেটেড ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট—যা হরমোন উৎপাদন, কোষের গঠন, ও ভিটামিন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মস্তিষ্কের পুষ্টি
ঘির স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মস্তিষ্কে জ্বালানির মতো কাজ করে। এটি স্মৃতি, মনোযোগ ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

হজম ও অন্ত্রের যত্ন
ঘিতে থাকা বিউট্রেট অন্ত্রের কোষকে পুষ্টি দেয়, প্রদাহ কমায় এবং ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে।

রোগ প্রতিরোধে সহায়ক
ঘির ভিটামিন A ও E শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

Ghee inner 4

নিয়মিত ঘি খেলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি ও প্রাকৃতিক জেল্লা বাড়ে

ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
ঘির ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে আর্দ্র, কোমল ও উজ্জ্বল রাখে। নিয়মিত ঘি খেলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি ও প্রাকৃতিক জেল্লা বাড়ে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
সব চর্বিই খারাপ নয়—ঘির স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পেট ভরিয়ে রাখে, অতিরিক্ত ক্ষুধা কমায় এবং মেটাবলিজম ঠিক রাখে।

হৃদস্বাস্থ্যে উপকারী
ঘি খেলে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে এবং শরীরের প্রদাহ কমে। ফলে হৃদযন্ত্রের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়।

ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার জন্য নিরাপদ
ঘি তৈরির সময় দুধের কণা ও ল্যাকটোজ আলাদা হয়ে যায়। তাই দুধে যাদের সমস্যা, তারাও ঘি খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

এছাড়াও, ঘি-র স্বাস্থ্যকর ফ্যাট হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতেও সাহায্য করে—বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।

Ghree Inner 1

তরল অবস্থায় ঘি ।। ছবি: সংগৃহীত

ঘি-র সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি
যে কোনো ভালো জিনিসই অতিরিক্ত হলে ক্ষতিকর হতে পারে, ঘি-ও তার ব্যতিক্রম নয়।

অতিরিক্ত ক্যালোরি
ঘির এক টেবিল চামচে থাকে প্রায় ১২০ ক্যালোরি ও ১৪ গ্রাম ফ্যাট। নিয়মিতভাবে অতিরিক্ত ঘি খেলে ওজন দ্রুত বাড়তে পারে এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে।

স্যাচুরেটেড ফ্যাটের আধিক্য
ঘিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। অতিরিক্ত গ্রহণে এটি LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) বাড়াতে পারে, যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ধমনী সংকোচনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

ডায়াবেটিস ও হার্ট রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
যাদের আগে থেকেই হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার, ফ্যাটি লিভার বা ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের ঘি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পেটের অস্বস্তি বা অ্যাসিডিটি
খালি পেটে বা খুব বেশি পরিমাণে ঘি খেলে কিছু মানুষের গ্যাস, অম্বল বা হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

Ghree Inner 3

ঘিয়ের পুষ্টিগুণ অনেক, তবে এটি ক্যালোরি সমৃদ্ধ। তাই পরিমিত খাওয়াই শ্রেয়

কতটা ঘি খাবেন দৈনিক?
ঘিয়ের পুষ্টিগুণ অনেক, তবে এটি ক্যালোরি সমৃদ্ধ। তাই পরিমিত খাওয়াই শ্রেয়। সাধারণত প্রতিদিন ১–২ টেবিল চামচ (১৫–৩০ গ্রাম) ঘি খাওয়া যথেষ্ট।

দৈনন্দিন খাবারে ঘি যোগ করার সহজ উপায়
রান্নায় ব্যবহার করুন: ভাজা, মেরিনেট বা রোস্ট করার সময় তেল বা মাখনের পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করুন।
রুটিতে মাখান: রুটি, পরোটা বা পিঠায় অল্প ঘি মাখলে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই বাড়ে।
খাবারে মেশান: ভাত, ডাল, খিচুড়ি বা স্যুপে এক চামচ ঘি মেশালে খাবারের ঘ্রাণ ও গুণ বাড়ে।

পরিশেষে
সোনালি রঙের এই ঘি শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যের দিক থেকেও এক অনন্য উপাদান। পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত খেলে এটি মস্তিষ্ক, ত্বক, হৃদযন্ত্র ও হজমের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করতে পারে। তাই আগামীবার খাবারে ঘি ঢালার সময় মনে রাখবেন—এটি কেবল রান্নার উপাদান নয়, বরং আপনার শরীর ও মন দুটোই পুষ্ট করার এক প্রাচীন উপহার।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৮ নভেম্বর ২০২৫,/দুপুর ২:৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit