মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম

প্রবারণায় রামুর নদীতে ভাসল ‘পঙ্খিরাজ, হাতি, ময়ূরপঙ্খি’

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : পেখম মেলা ময়ূরের ভেসে যাওয়া, পঙ্খিরাজ ঘোড়া কিংবা হাতির এদিক-ওদিক ছোটাছুটি, আর নাগরাজ বীরদর্পে নদীর বুকে ভেসে চলা-প্রাণহীন কল্প জাহাজ যেন হয়ে ওঠে জীবন্ত শিল্পকর্ম। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে মহামতি বুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে এসব প্রতীকী জাহাজ ভাসানো হয়। নদীতে ভাসানো হয় দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে তৈরি ৭টি জাহাজ। প্রতিটি জাহাজ তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় এক মাস।

সুনীল বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই উৎসব শুরু করেছেন। শত বছর ধরে এটা চলছে। আমরা চাই নতুন প্রজন্মও যেন এই ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে।’রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ ও কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ মহাথের বলেন, ‘২০০ বছর আগে মিয়ানমারের মুরহনঘা এলাকায় একটি নদীতে সংঘরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম জাহাজ ভাসানো উৎসবের আয়োজন করেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের রামুতে এই উৎসব প্রচলন হয়। রামু ছাড়া দেশের কোথাও স্বর্গ জাহাজ ভাসানো উৎসব হয় না। এই উৎসবের মাধ্যমে বৌদ্ধধর্মের অনুসারীরা মহামতি বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।’

শতবছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে নিয়মিত প্রচলনের কথা জানালেন আয়োজকরা। কল্প জাহাজ ভাসা উৎসবের আহ্বায়ক মিথুন বড়ুয়া বোথাম বলেন, ‘প্রতিবছর প্রবারণার পরের দিন বাঁকখালী নদীতে এই কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব হয়ে আসছে। সামনে দিনগুলোতে আরও বড় পরিসরে এই আয়োজন হবে। এটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই উৎসব করে আসছে। আমরা সারাবিশ্ব শান্তি বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই।’

মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে জাহাজ ভাসানো উৎসবের উদ্বোধন করেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান, পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দিন শাহীন, কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল।

এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে এই দেশের পথচলা। আসুন- ঐতিহ্য, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যকে আমরা লালন করি। আগামীও আমরা এটা লালন করতে থাকবো। তবে কোন দুষ্টু চক্র যাতে আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।’

আ ফ ম খালিদ হোসেন আরও বলেন, ‘শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ই নয়, সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষই অংশ নেয় এই উৎসবে। যা পরিণত হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় উদাহরণ। এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক মিলনমেলা। এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সম্প্রীতির প্রতীক।’

ইতিহাস বলছে, দুইশো বছর আগে মিয়ানমারে কল্প জাহাজ ভাসানোর প্রথা শুরু হলেও, রামুতে তা চলে আসছে শত বছর ধরে। প্রবারণা পূর্ণিমায় এই আয়োজন যেন নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সন্ধান করিয়ে দেয় বারবার। রিগ্যান বড়ুয়া বলেন, ‘আমি আমার পরিবার নিয়ে এসেছি। প্রতিবছর আসি। এটা আমাদের এলাকার গর্ব। শুধু উৎসব না, একটা অনুভূতি।’

রামুর বাঁকখালী নদীতীরে প্রতি বছরই এই আয়োজনের মাধ্যমে নতুন করে জেগে ওঠে পুরনো সংস্কৃতি আর বিশ্বাস। কল্প জাহাজ ভাসানোর মাধ্যমে বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনা করা হয় শান্তিময় পৃথিবীর জন্য। ধর্মীয় উৎসব হলেও এই আয়োজন পরিণত হয়েছে সকল সম্প্রদায়ের মিলনমেলায়। ঐতিহ্য, সংস্কৃতিক আর সম্প্রীতির এক অপূর্ব সম্মিলন ‘কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব’।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৭ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit