এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও নানা অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ফাইলে টাকা ছাড়া স্বাক্ষর করেন না তিনি। বিজ্ঞানাগারের নামে বরাদ্দ অর্থ লুটপাট, কলেজ ফান্ড ও জিনিসপত্র কেনাকাটায় ভুয়া-বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের একটি শক্ত সিন্ডিকেট ভেঙ্গে কলেজে শৃঙ্খলা, শিক্ষার পরিবেশ ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছি। ফলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাছ না পেয়ে ছিপে কাঁমড় দিচ্ছেন। এ মহলটি কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও উন্নয়ন কাজ চাই না। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া অভিযোগ সরবরাহ করছেন।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর চৌগাছা সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন রেজাউর রহমান। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর পিএস ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিত কুমার বসু জোর তদবির করে আসছিলো। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি চৌগাছা সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদেন।
যোগদান করেই অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান কলেজের সিনিয়র শিক্ষকদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই ক্লিন ক্যা¤পাস নির্মাণের নামে শতাধিক বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ কেটে বিক্রি করেন। গাছ কাটার কিছুদিন পরেই সবুজ ক্যা¤পাস নির্মাণের নামে বৃক্ষরোপণে ভুয়া শ্রমিক বিল-ভাউচার দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা পকেটে নেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কলেজের সাধারণ তহবিলে জমা ছিল ১১ লাখ ১০ হাজার ৭৭ টাকা। কিন্তু জুন মাসে কলেজের সাধারণ তহবিলে জমা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩০ টাকা। তিনি বিভিন্ন খাত দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা তুলে নেন ফান্ড থেকে।
কলেজের পিআরএলে থাকা অবস্থায় মৃত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জিন্নাহ দফাদারের স্ত্রীর নিকট থেকে অবসরভাতা স্থায়ীকরণের জন্য ১৫ হাজার টাকা নজরানা নেন। রফিকুজ্জামান এ কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তার অবসরভাতা উত্তোলনের কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে ১০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনার্সের ১১ জন শিক্ষকের ২০১৮ সাল থেকে এরিয়া বেতন-ভাতায় স্বাক্ষর করতে ২ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞানাগার উন্নয়নের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি কাগজে-কলমে ক্রয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানাগারের একটি যন্ত্রপাতিও কেনা হয়নি। এছাড়া, ক¤িপউটার সামগ্রী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী, লাইব্রেরির বই ও আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকার বিল-ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাত করেছেন তিনি, এমন অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান কারও মতামত না নিয়েই পকেট কমিটি করে সরকারি বরাদ্দের টাকা ব্যয়ে দেখিয়েছেন। যদিও সকল শিক্ষককের মতামতের ভিত্তিতে স্বাধীন ও স্বচ্ছ একটি ক্রয় কমিটির মাধ্যমে
করার নিয়ম। কেনাকাটার বিষয়টি ক্রয় কমিটির সদস্যরাও জানেন না।
সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১৮ জুন ৬০ হাজার টাকা, ২২ জুন ৭৫ হাজার টাকা ও ২৬ জুন এক লাখ টাকাচেকের মাধ্যমে তুলে তিনি ব্যবহারের জন্য একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করেছেন। ২০ হাজার টাকার অতিরিক্ত যে কোনো বিল ক্রস চেকের মাধ্যমে পরিশোধের বিধানও মানা হয়নি। তিনি চৌগাছা সোনালী ব্যাংক শাখায় প্রিন্সিপাল চৌগাছা সরকারি কলেজ শিরোনামের হিসাব থেকে চেকের মাধ্যমে কয়েকবারে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত তুলে নিয়েছেন।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞান ভবনের পুরাতন ২৯টি লোহার জানালা ও কলাপসিবল গেটের প্রায় ১৬০০ কেজি লোহা ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। যার মোট দাম হয় ৬৭ হাজার টাকা। কলেজ ফান্ডে ৯৩৭ কেজি ৩২ টাকা হিসাবে ৩০ হাজার টাকাজমা দেখানো হয়েছে ।
বিজ্ঞানাগারের মালামাল ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিউর রহমান বলেন, কেনাকাটার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা, অধ্যক্ষ আমাকে ভাউচারে স্বাক্ষর করতে বলেছেন, আমি করেছি। পরে জানতে পেরে আমি ক্রয় কমিটি থেকে পদত্যাগও করেছি। ক্রয় কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান শাকিল বলেন, ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক যা বলেছেন এটাই সত্য।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান বলেন, কলেজটিতে দীর্ঘদিনের একটি শক্ত সিন্ডিকেটে ভেঙ্গে কলেজে শৃঙ্খলা, শিক্ষার পরিবেশ ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছি। ফলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাছ না পেয়ে ছিপে কাঁমড় দিচ্ছেন। এ মহলটি কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও উন্নয়ন কাজ হোক সেটা চাই না। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া অভিযোগ সরবরাহ করছেন।
কিউএনবি/আয়শা/০৭ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ৮:০৫