শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন

‘ভারসাম্য হারিয়ে আমার হাত থেকে পড়ে যান আবু সাঈদ ভাই’

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : ‘আমার বাম পাশের পুরো শরীর গুলিবিদ্ধ হয়। ওই সময় আবারও ভারসাম্য হারিয়ে আমার হাত থেকে পড়ে যান আবু সাঈদ ভাই। তখন তার শরীরের সামনের পাশে প্রচণ্ড পরিমাণ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।’রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব কথা বলেন সিয়াম আহসান আয়ান। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে ছয় নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন— অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এদিন বেলা সোয়া ১১টায় সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন আয়ান। তিনি রংপুরের আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

জবানবন্দিতে ১৮ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চলে আসছে। কোটা ব্যবস্থা থাকার কারণে কম মেধাবীরা চাকরির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দখল করে রাখেন। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে এসেছে ছাত্রসমাজ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এই কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় সরকার। যদিও শাসন দীর্ঘায়িত করতে আদালতের রায়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালে ফের চালু করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয় দেশজুড়ে। তবে সরকারের বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্যে আন্দোলন তীব্র হতে থাকে।

আয়ান বলেন, গত বছরের ১৫ জুলাই রাতে রংপুরে আমরা একটি বৈঠকে মিলিত হই। বৈঠকে পরদিন তথা ১৬ জুলাই দুপুর ১২টায় রংপুর জিলা স্কুলের সামনে থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। যথারীতি আমরা ওই দিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আগানো শুরু করি। পথে রংপুর পুলিশ লাইনসের সামনে আমাদের ওপর লাঠি চার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আমরা ফের একত্রিত হয়ে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা দেই। আমি তখন মিছিলের মধ্যে অবস্থান করছিলাম। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আমরা বেরোবির এক নম্বর গেটের সামনে পৌঁছাই।

তিনি আরও বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, এমপির নির্দেশে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানের সহায়তায় ডিসি (ক্রাইম) আবু মারুফ হোসেন, এডিসি ডিবি শাহানুর আলম পাটোয়ারী, এসি আরিফুজ্জামান, ওসি (তাজহাট) রবিউল ইসলাম, এসআই বিভূতী ভূষণ রায়, এএসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়সহ ৪০-৫০ জন মিলে আমাদের ওপর হামলা চালান। তাদের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর, দফতর সম্পাদক বাবুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমরান চৌধুরী আকাশসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ছিলেন।

আমাদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ বাহিনী। এর প্রতিবাদে সড়কের বিভাজকের পশ্চিম পাশে এক নম্বর গেট বরাবর দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান আবু সাঈদ। পুলিশ বাহিনী থেকে তাকে শুট করা হয়। তখন আমি বিয়াম শপিং কমপ্লেক্সের সামনে সড়কের পূর্ব পাশে ছিলাম। সেখান থেকে তাকে দেখতে পারছিলাম। গুলি খেয়ে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে বিভাজকের পূর্বপাশে চলে আসেন তিনি। তখন ২টা ১৭ মিনিট। আমি আবু সাঈদ ভাইকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসি। তখন তাকে তুলে আমার ডানপাশে অর্থাৎ পূর্ব পাশে ঘুরিয়ে নেই। কিন্তু আবারও গুলি করে পুলিশ। সেই গুলিতে আমি আহত হই। আমার বাম পাশের পুরো শরীর গুলিবিদ্ধ হয়। ওই সময় আবারও ভারসাম্য হারিয়ে আমার হাত থেকে পড়ে যান আবু সাঈদ ভাই। তখন তার শরীরের সামনের পাশে প্রচণ্ড পরিমাণ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

এই সাক্ষী বলেন, এসি আরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এসে আবু সাঈদ ও উপস্থিত আন্দোলনকারীদের ওপর  হামলা চালিয়ে আহত করেন বলে সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারী ও বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে জানতে পারি। এছাড়া আবু সাঈদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এরপর আমি তাকে সড়কের উত্তর পাশে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাই। ওই সময় আরও কিছু আন্দোলনকারীও আসেন। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। আমি তখন পার্কের মোড়ে (বর্তমানে আবু সাঈদ চত্বর) অবস্থান করি। একপর্যায়ে আমাদের কাছে আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর আসে। তার মৃত্যুতে আমরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ি। একইসঙ্গে আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান করা হয়। আমি এ মামলার সব আসামির সুষ্ঠু বিচার ও ফাঁসি চাই।

এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন সহিদুল ইসলাম ও মঈনুল করিম। সঙ্গে ছিলেন আবদুস সোবহান তরফদার। এদিকে, এ মামলার ছয় আসামিকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে পুলিশ। তারা হলেন- এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১১:৫০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit