বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪০ পূর্বাহ্ন

‘এবার মনে হয় কপালে ইলিশ জুটবে না’

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৭১ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইলিশের মৌসুম যাই যাই করছে। এর মধ্যে পাইকারি থেকে শুরু করে খুচরা বাজারে ইলিশের দাম বেশ চড়া। নিম্ন আয়ের মানুষেরা ইলিশ পাতে তুলতে পারছেন না। এমনকি ইলিশের বাড়িতে মানুষের পাতেও উঠছে না জাতীয় মাছটি। অনেকে বলছেন- ‘এবার মনে হয় কপালে ইলিশ জুটবে না।’

দ্বীপ জেলা ভোলাকে ইলিশের বাড়ি বলা হয়। কারণ এর চারপাশে ইলিশের অভয়াশ্রম বলে খ্যাত মেঘনা আর তেঁতুলিয়া নদী। মৌসুমের শেষে এসে কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশের দেখা মিললেও দাম কমেনি। জেলেরা বলছে, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা না মেলায় দাম কমছে না।

মাছের ব্যাপারীরা বলছেন, ভরা মৌসুমেও তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। তাই জেলেদের চাহিদা (খরচ না ওঠা) এখনো পূরণ হয়নি। তাদের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর দাম কমবে। বিক্রেতারা বলছে, নদীতে আগে বেশি ইলিশ ধরা পড়লেও এখন সে তুলনায় কম ধরা পড়ছে। তাই দাম কমেনি।

চরফ্যাশনের চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের বাসিন্দা মামুন মাঝি বলেন, ইলিশ মাছের সিজনে ইলিশ মাছ খাইতে পারি না। কিনব কিভাবে- এবার ইলিশের যে দাম গেল কয়েক বছরের তুলনায় ডাবল। এতো দামে খাওয়া সম্ভব না। তাই ইলিশ কিনি নাই, কিনার ইচ্ছাও করি না।তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়লে ইলিশের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।

আগামী ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হবে প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা, দেশে ইলিশ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে ২২ দিনের জন্য। ডিম ছাড়ার পর এমনিতেই ইলিশ মেদহীন ও অপুষ্ট হয়ে যায়। এতে ইলিশের সেই স্বাদ আর থাকে না। ফলে সুস্বাদু ইলিশ খেতে চাইলে কিনতে হবে এই সময়ের মধ্যেই। সেই আশা নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত ক্রেতারা, তবে দাম শুনেই ভ্রূ কুঁচকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। বাজারে ইলিশের সরবরাহ ভালো থাকলেও দাম নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতিদিন চরফ্যাশনের সামরাজ মাছঘাটের সকাল বিকাল ক্রেতায় ঠাসা থাকে। 

চরফ্যাশনের মাছের বাজারে নিউরন ডায়াগনস্টিক ল্যাবের মিন্টু দাস এসেছিলেন ইলিশ কিনতে। তার কাছে বিক্রেতা প্রতি কেজি ছোট ইলিশের দাম চাইলেন ৭০০ টাকা। এর চেয়ে একটু বড়, তবে ওজন এক কেজির নিচে সেগুলোর কেজি এক হাজার টাকা। এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু।

চড়া দাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে মিন্টু দাস বলেন, ‘এবার মনে হয় কপালে ইলিশ জুটবে না।’আরেক ক্রেতা চরফ্যাশন সরকারি কলেজ শিক্ষক নজরুল কবির বিক্রেতাকে প্রশ্ন করেন, বছরের অন্য সময় ইলিশের যে দাম, মৌসুমেও একই দাম কেন? বিক্রেতা কিছুটা বিরক্তির ভাব নিয়ে জবাব দিলেন, ‘আড়তে দাম বেশি হলে আমার করার কী আছে?’ অতৃপ্তি নিয়ে শেষ হবে ইলিশের প্রধান মৌসুম?

দেশে ইলিশের ভরা মৌসুম আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বৃষ্টিপাতের দেখা পাওয়ায় কয়েক দিন ধরে ইলিশের আহরণ বেড়েছে। তবে এবার ভোলার ৭ উপজেলায় ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে রয়েছে।

এ কথা জানিয়েছেন ভোলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ইলিশ যেহেতু দল বেঁধে চলে, তাই কখনো কোনো এলাকায় বেশি ইলিশ ধরা পড়ে, আবার কোথাও কম ধরা পড়ে। কারণ, পূর্ণিমায় নদ-নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে, আবার বৃষ্টিপাতও হচ্ছে।তবে এ বছর আমাদের ভোলা জেলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। জেলেদের জালে যেহেতু ইলিশ ধরা পড়ছে, আমরা আশাবাদী এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

ইলিশের চড়া মূল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চরফ্যাশনের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার প্রভাব সব জাগায়। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ইলিশের দাম তেমন একটা বাড়েনি। বর্তমানে এক কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর থেকে দাম কমে গেলে জেলে থেকে শুরু করে মৎস্য ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইলিশ ধরা যাবে আর ২০ দিন। এ সময় যদি বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে, তাহলেই কেবল সীমিত আয়ের মানুষের পাতে উঠতে পারে। নইলে অতৃপ্তি নিয়েই শেষ হবে এবার ইলিশের প্রধান মৌসুম।

সামরাজ ঘাটের আনোয়ার পাটোয়ারি নামে এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, ইলিশ মাছের আমদানি কম তবে চাহিদা অনেক বেশি। তার জন্য মাছের দাম একটু বেশি। মাছের দাম একটু বেশি হওয়ায় আমাদের বেচা-বিক্রিও অনেক কমেছে। ক্রেতারা আসে তবে তাদের সাধ্যের মধ্যে না হওয়ায় বেশির ভাগ ক্রেতারাই ফিরে যান। চরফ্যাশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মালিক সমিতির নেতা আজ্জি পাটোয়ারি বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে নদীতে ইলিশের সংখ্যা কম হওয়ায় আমদানিও কম। তাই বাজারে অন্য সব দিনের তুলনায় দাম একটু বেশি। নিম্নচাপ থাকায় এতদিন জেলেরা বেকার ছিলেন।

গত কয়েক দিন হলো তারা সাগরে গিয়েছেন। জেলেরা ফিরে এলেই বাজারে ইলিশের দাম অনেকটাই কমে আসবে। তবে সাগরে যেতে আগের চেয়ে জেলেদের তেলের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইলিশের দামও একটি বেশি। উপজেলা মেরিন ফিসারিজ কর্মকর্তা তানবির আহম্মদ বলেন, বাজারে সাগরের মাছ এলেই ইলিশের দাম কমে যাবে। তবে আমাদের বাজার দরের ওপরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদি বেশি দামে ইলিশ মাছ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১০:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit