বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০১ অপরাহ্ন

সিরাত অধ্যয়নের মূলনীতি

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩৫ Time View
ডেস্ক নিউজ : সিরাত বিষয়টি সাধারণভাবে ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত। তবে ওলামায়ে কেরামের কাছে সিরাত শাস্ত্র অধ্যয়ন ও রচনার নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের শাস্ত্রীয় মূলনীতির আলোকে গবেষণা করা। বিশেষ করে সিরাতের ঘটনাবলি থেকে আহকাম বিধিবিধান বের করা একটি স্বতন্ত্র বিষয়। এর নিজস্ব উসূল ও মূলনীতি রয়েছে। তাই এসব ক্ষেত্রে উসূল ও মূলনীতি অনুসরণ করা একান্ত জরুরি। সিরাতে রসুল (সা.) সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন, গবেষণা ও যথার্থ অনুসরণের জন্য কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে দাবি রাখে, সিরাতের জ্ঞান সঠিক সূত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করা। সঠিক বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝা ও উপলব্ধি করা। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ জীবনে বাস্তবায়নের আগ্রহ নিয়ে সিরাত অধ্যয়ন করা। তিনি তাঁর পরিচয় যেভাবে পেশ করেছেন সেভাবে তাঁকে বোঝা এবং এভাবেই তাঁকে উপস্থাপন করা। এভাবে সিরাত অধ্যয়ন পাঠককে যাবতীয় পদস্খলন থেকে মুক্তি দেবে। সঠিক ইমান, আকিদার ওপর অটল থাকার পথে সহযোগিতা করবে। শরিয়তের বিধিবিধান যথাযথভাবে পালনে অনুপ্রেরণা জোগাবে। মুসলিম উম্মাহর সার্বিক উত্তরণের জন্য হবে অন্যতম উপায়, সর্বোত্তম পথ ও পাথেয়।রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাতের কয়েকটি ধাপ :

১. জন্ম থেকে নবুয়ত লাভ : সিরাতের এই অংশে মহানবী (সা.)-এর আগমনের আগে আরব জাতি ও আরব উপদ্বীপের অবস্থা কেমন ছিল, তা আলোচিত হয়েছে। সিরাত গবেষকদের জন্য অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের অবস্থাগুলো বুঝবে না, সে ইসলামকে চিনতে পারবে না। এই অধ্যায়ে নবুয়ত লাভের আগে নবীজি (সা.) থেকে যেসব অলৌকিক বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছিল, তা বিশেষভাবে শিক্ষণীয়।

২. নবুয়ত লাভ থেকে হিজরত পর্যন্ত : এ অংশে হেরা গুহায় নবুয়ত লাভ করার পর থেকে হিজরতের আগপর্যন্ত মহানবী (সা.) কীভাবে দীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন, দীনের জন্য তিনি ও সাহাবিরা কী পরিমাণ কষ্ট ও অত্যাচার সহ্য করেছিলেন তা আলোচনা হয়েছে। এই সময়কালকে মক্কি জীবন বা দাওয়াতি জীবন বলা হয়। ৩. মদিনায় হিজরত থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত : এ অংশে মাদানি জীবনের ১১ বছরে তিনি কীভাবে ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন করেছিলেন, এ সময় দীনের প্রচার ও পরিচালিত যুদ্ধের মূলনীতি কী ছিল এবং ইসলামের বিধিবিধান কীভাবে বাস্তবায়ন করেছিলেন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন কোরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তিনি তাঁর জীবনে কোরআন বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষকে কোরআন শিখিয়েছেন। অতএব আমাদের রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রকৃত সিরাত কোরআনে কারিম থেকে গ্রহণ করতে হবে। কোরআনই হলো সিরাতের মূল তথ্যভান্ডার। এ ছাড়া মহানবী সা. সম্পর্কে এবং ইহ ও পরকালের কল্যাণজনক বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের জানার কৌতূহল এবং আগ্রহের প্রমাণ হাদিস গ্রন্থে জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আছে। (সহিহ মুসলিম) তাদের এই আগ্রহ ও কৌতূহলে আমাদের জন্য সিরাত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী হবে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই সিরাত পড়ুন আর ভেবে দেখুন, নবীজি সা. আসলে কেমন ছিলেন? কোন আদর্শবলে তিনি তাঁর লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছিলেন।

ভাবুন তো, মাত্র ২৩ বছরের ব্যবধানে তাঁর লক্ষাধিক অনুসারী। তদানীন্তন বিশ্ব পরাশক্তি ছিল তাঁর সামনে অবনত। হাজার বছরের যুদ্ধ, হানাহানি পরিহার করে সব মানুষ একই পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থায় অন্যায় নেই, নিপীড়ন নেই, নেই প্রতিশোধের জঘন্য প্রবণতা। কী ছিল রহস্য? কী ছিল সেখানে দিনবদলের ম্যাজিক?

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী ওলটাতে থাকলে প্রতিটি পর্ব অপেক্ষা করবে অলৌকিক চমক। যিনি বলে দিচ্ছেন পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন কেমন হবে। কেমন হবে ব্যক্তিগত চালচলন, রীতিনীতি ও অভ্যাস-আচরণ। একটি মানুষ কীভাবে ঘুমাবে, কীভাবে ঘুম থেকে উঠবে, টয়লেটে কীভাবে যাবে, কীভাবে বের হবে, কীভাবে পানাহার ও আপ্যায়ন করবে, দাঁত কীভাবে মাজতে হবে, স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর সঙ্গে কেমন আচরণ হবে- সব।

নবীজি (সা.) লোকদের উপদেশ করতেন। কখনো কখনো তাদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। বাচ্চাদের তিনি আদর-সোহাগ করতেন। তাঁর মধ্যে ইহজগতের কোনো অস্থিরতা ছিল না। শুধু উম্মতের চিন্তায় তিনি অস্থির থাকতেন। নবীজি (সা.)-এর সিরাত পড়লে আপনি এসবই পাবেন। পড়ুন আর ভেবে দেখুন! একজন মানুষ সব সামলাচ্ছেন, সংসার, ঘর আত্মীয়স্বজন, সাহাবি, নবুওয়াতের দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। রাত জেগে ইবাদত করছেন। এসব হলো সিরাতে রসুল। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা পড়ে যারা তাঁর অনুসারী হওয়ার দাবি করছে, তাঁর জীবনের কোনো একটা অংশ আলোচনা করে নবী-প্রেমিকের প্রমাণ দিচ্ছে, নবীজির সিরাত তাদের পূর্ণাঙ্গভাবে অধ্যয়নের প্রয়োজন। প্রয়োজন সিরাতে রসুল (সা.) নিয়ে ভাবা, গবেষণা করা এবং তা জীবনে বাস্তবায়ন করা।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

কিউএনবি/অনিমা/৩১ আগস্ট ২০২৫/বিকাল ৪:৫৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit