শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

বেড়িবাঁধ সংস্কারে ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন ভোলার আড়াইশ পরিবার

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৭৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : এর মধ্যে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন স্কুল ভবন ও স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের নিচে। আবার কেউ ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে বাঁচতে প্রতিবেশির রান্নাঘর কিংবা মাছঘাটে অবস্থান নিয়েছেন। কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে অনেকেই নতুন বাঁধের উপর ঝুপড়ি তুলে জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে বসবাস করছেন। জমির মালিকদের দাবি করা টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তারা আগের স্থানেও ঘর তুলতে পারছেন না। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে এমন দুর্ভোগে থাকলেও সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় পরিবারগুলো অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার মধ্য হাসাননগরের নতুন বেড়িবাঁধের উপর ঝুপড়ি তুলে বসবাস করছেন হেলাল মাঝির পরিবার। হেলালের স্ত্রী বিবি আয়শা জানান, প্রমত্তা মেঘনার ১১ দফা ভাঙনে সর্বস্ব হারানো নিঃস্ব পরিবারটির শেষ ঠিকানা ছিল এই বেড়িবাঁধের ঢাল। গেল এপ্রিলে বাঁধ সংস্কারের সময় তাদের বসতঘর ভেঙে দেয়ার পর টাকার অভাবে আর ঘর তুলতে পারেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছিল সংস্কারের পর আগের জায়গায় ঘর তোলা যাবে। কিন্তু এখন অর্থাভাবে ঘর তুলতে না পেরে ঝুপড়িতেই ঝড়-বাদলের দিন কাটছে তাদের।
 
স্থানীয়রা জানান, হাসাননগর ও টবগী ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ের বেড়িবাঁধে কয়েকশ জেলে পরিবারের বসবাস। চলতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ সংস্কারের সময় এক কিলোমিটার এলাকার ঘরবাড়ি সাময়িকভাবে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়। কেউ কেউ নিজ খরচে পুরানো ঘরের চাল ও বেড়া খুলে অন্যের পুকুরের মধ্যে মাচা করে রেখেছেন। আবার অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশির বাগানে, স্কুল ভবনে বা স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের নিচে। সংস্কারের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের ক্ষতি এড়াতে ঢালে নতুন করে ঘর তুলতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে বাঁধের পাশের জমির মালিকরা দাবি করছেন মোটা অঙ্কের টাকা। ফলে প্রায় আড়াইশ পরিবার পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়।
 
সরেজমিন দেখা গেছে, মধ্য হাসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলায় ফারুক, রাসেল, ছিদ্দিক মাঝি, নান্টু, ফরিদ, রাজুসহ কয়েকটি পরিবার টানা তিন মাস ধরে বসবাস করছেন। তারা জানান, বাঁধের ঢালের ঘর ভেঙে দেয়ার পর জায়গার অভাবে আর তুলতে পারেননি। এ কারণে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকরা স্কুলঘর ছেড়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। খাসমহল বেড়িবাঁধ বাজারের পাশের একটি পুকুরে ভাঙা ঘরের মালামাল মাচা করে রাখা অবস্থায় দেখা গেছে। ওইসব পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশিদের বাড়িতে। বাঁধের পাশের জমির মালিক তৈয়ব মাঝি আগের জায়গায় ঘর তুলতে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। টাকা পরিশোধের সামর্থ না থাকায় তারা ঘর তুলতে পারছেন না।
 
তবে তৈয়ব মাঝি দাবি করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড তার মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে বেড়িবাঁধ করেছে। এর জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। পরবর্তীতে সেখানে অন্যরা ঘর তুলে ‘পজিশন’ বিক্রি করে দেয়। এমনটা যাতে আর না হয়, সেজন্য জামানত হিসেবে টাকা চাওয়া হয়েছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান উজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৫ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য খাস জমি খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া সবচেয়ে অসহায় পরিবারগুলোকে ভিজিএফ ও ভিজিডির মাধ্যমে সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন আরিফ জানান, দুই কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে এক কিলোমিটারের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে, বাকি কাজ চলমান। নতুন বাঁধের ওপর ঘর তুললে স্থায়ী হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে কোনো বরাদ্দ নেই, তাই তাদের নিজ খরচে ঘর তুলতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত জুন মাসে ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসাননগর ও টবগী ইউনিয়নের এক কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করেছে। বর্তমানে আরও এক কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। এতে করে শতাধিক পরিবার আবারও ঘরবাড়ি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৮ আগস্ট ২০২৫/বিকাল ৫:৪৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit