আবেগের কথা
——————
চলমান ঘটনা দেখেই যে আমরা আবেগে আবেশিত হই তা কিন্তু নয়। আমরা বই পড়ে, সিনেমা, নাটক দেখে আবেগে আবেশিত হয়ে পড়ি অহরহ । চোখ মুছতে মুছতে আমরা বইয়ের পাতা উল্টিয়ে চলি, সিনেমা দেখে আমরা ফুঁফিয়ে কেদেঁ ফেলি। টিভিতে নাটক দেখে আমরা বাকেরের জন্যে আহাজারি করি। আসলে আমাদের এই জগতে সত্য মিথ্যা যাই হোক না কেন আমরা আবেগ মিশিয়ে আবেশিত হয়ে পড়ি।
সানদেশে আতে হায়
হু মেই তড়পাতে হায়
ওহ চিঠি আতি হায়
ওহ পুছে যাতি হায়।
মরুভূমিতে একদল সৈনিকের যাপিত জীবনের করুন এক আকুতিভরা এই গানটি শুনে এমন কেউ নাই যে আবেগতাড়িত হয়নি। নাড়ির টান, বাড়ির টান, ঘর ও ঘরণীর টানে এক করুন সুরে আবেগ ভর করে যেন হৃদয় মন্দিরে।
বাবা থাকে এক ছেলের কাছে, মা থাকে আরেক ছেলের কাছে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় স্বামী স্ত্রীর এই বিচ্ছেদ মুহূর্তগুলো যখন আমরা দেখি অমিতাভ বচ্চন ও হেমা মালিনীর অবয়বে ”বাগবান” ছবিতে তখন আমাদের চোখ ভিজে আসে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি, টেলিফোন বুথে অমিতাভের নোনাজল ঝরা গানে চোখ ভিজে যায় সকলের – ম্যায় ইহা,তু উহা, জিন্দেগী হ্যায় কাঁহা।
আবেগ ছাড়া জীবন হয়না। সেই আবেগ কেউ কেউ যথার্থভাবে তুলে ধরতে পারেন আবার কেউ চেষ্টা করেও পারেন না। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে দেখতে পেলাম মন্টুকে। অবিমিশ্রিত এক কান্নার ভান্ডার যেন মন্টু লুকিয়ে রেখেছে নিজের ভিতরে। গ্রামের মেঠোপথে দুহাত আকাশে ভাসিয়ে সাইকেল নিয়ে দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া মন্টুর ফাঁসিতে কে কাঁদেনি ?
আবেগ নিয়েই আমাদের জীবন। তাইতো টুকটাক যাই লিখি ,আবেগ ছাড়া লিখতে পারিনি। আবেগের পুরোমাত্রা ফুটিয়ে তুলতে বড় ক্যানভাসের প্রয়োজন। যেমন একটি উপন্যাস গ্রন্থে বা পুরো সিনেমায় সব কিছুর উপস্থাপনার প্রেক্ষিতে শেষ এবং চরম মুহূর্তে পাঠক, দর্শকের চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু দু চার লাইন লিখে বা টিভির বিজ্ঞাপনের মত ৩০ সেকেন্ড বা ৪৫ সেকেন্ডে এমন কিছু প্রদর্শন করে দর্শকের চোখে পানি ঝরানো এত সহজ কাজ নয়।
পৃথিবীতে যত কঠিন কাজ আছে, তার মধ্যে অন্যতম কঠিন কাজ হলো মানুষকে আবেগতাড়িত করা।
পোস্টদাতা ও লেখকঃ লুৎফর রহমান। তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে পোস্টটি সংগৃহিত। তিনি একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট। নিউজ মিডিয়া সম্পাদক।
কিউএনবি/আয়শা/১৫ আগস্ট ২০২৫/রাত ১০.৫৭