স্বাস্হ্য নিউজঃ জীবনের প্রতিটা সময়েই আমাদের নানা কারণে টেনশন হয়—ছোটবেলায় পরীক্ষার জন্য, বড় হলে সম্পর্ক বা কাজের চিন্তা, আর বয়স বাড়লে পরিবার, স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলায় দায়িত্ব, আর সেই সঙ্গে বদলায় মানসিক চাপের রকমফেরও।
আজকের এ লেখায় আমরা জেনে নেব কোন বয়সে কী ধরনের মানসিক চাপ দেখা যায়, কেন তা হয়, আর কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা এসব নিয়ে।
শৈশব ও কৈশোর: শুরুতেই চাপ
শিশু ও কিশোরদের মানসিক চাপ সাধারণত আসে—
– পরীক্ষার ভালো ফলাফলের জন্য
– বন্ধুদের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে
– অভিভাবকদের বাড়তি প্রত্যাশার চাপ থেকে
এই বয়সে ‘ভালো হতে হবে’, ‘সেরা হতে হবে’—এই চাপে অনেক সময় শিশুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
তারুণ্য: সম্পর্ক, ক্যারিয়ার ও আর্থিক টানাপোড়েন
তরুণ বয়স মানেই জীবনের মোড় ঘোরানোর সময়। এই বয়সে মানসিক চাপ আসে—
– প্রেম বা সম্পর্কের জটিলতা থেকে
– পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খোঁজার দুশ্চিন্তা থেকে
– নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে
– সমাজে নিজের জায়গা করে নেওয়ার চাপে
এই সময় তরুণদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে—আমি কে? কোথায় যাচ্ছি? এসবই মানসিক চাপের উৎস হতে পারে।
মধ্যবয়স: ঘরে-বাইরের দ্বৈত দায়িত্ব
মধ্যবয়সীরা সবচেয়ে বেশি চাপের ভেতর দিয়ে যান। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনিয়া ভট্টাচার্য বলছেন এই বয়সে মানুষকে সামলাতে হয়:
– অফিসের দায়িত্ব
– সন্তানদের দেখভাল
– মা-বাবার চিকিৎসা ও খেয়াল
– সংসারের নানা ঝামেলা
তবে এ বয়সের মানুষদের একটা সুবিধা আছে—তারা অভিজ্ঞ, তাই চাপ সামলানোর কৌশলও কিছুটা শিখে ফেলেন।
বৃদ্ধাবস্থা: নতুন এক ধরনের চাপ
বয়স বাড়লে শরীরের শক্তি কমে যায়, প্রিয়জন হারানোর কষ্ট বাড়ে, আর্থিক নিরাপত্তাও অনেক সময় কমে যায়। তবে ডা. মুনিয়া বলছেন, এই বয়সের মানুষরা জীবনের অনেক কিছু দেখে ফেলেন, তাই মানসিকভাবে তারা অনেক পরিপক্ক হয়ে ওঠেন। চাপ এলেও তারা সেটাকে ভালোভাবে নিতে পারেন।
ডা. সোনাল আনন্দ বলছেন— অন্তঃসত্ত্বা নারীরা অনেক রকম চিন্তায় থাকেন:
– সন্তান সুস্থ হবে তো?
– ডেলিভারি কেমন হবে?
– নতুন জীবন কেমন হবে?
এই সময় মানসিক চাপ অনেক বেশি হয়, তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাও খুব দরকার।
চাপ কমানোর কিছু সহজ উপায়
গভীর শ্বাস নেওয়া: প্রতিদিন ১০ মিনিট ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন।
সুস্থ জীবনযাপন: নিয়মিত ঘুম, ভালো খাবার আর হালকা ব্যায়াম—এই তিনটি মানসিক চাপ কমাতে দারুণ কাজ করে।
লিখে ফেলুন মনের কথা: দিনশেষে আপনার অনুভূতি বা যেটা ভালো লেগেছে তা লিখে ফেলুন। এতে মন হালকা হয়।
মেডিটেশন বা ধ্যান: সময় বের করে ধ্যান করুন, মন শান্ত হবে।
পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান: আপনার অনুভূতি শেয়ার করুন, কথা বলুন।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন: যদি মনে হয় নিজে কিছুতেই সামলাতে পারছেন না, তাহলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে দ্বিধা করবেন না।
বয়স বাড়ার সঙ্গে মানসিক চাপের ধরণ বদলায়—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু চাপ থাকলেই তা খারাপ না বরং সেটা ঠিকভাবে বুঝে সামলানোই সবচেয়ে জরুরি।
যেকোনো বয়সে চাপ থাকবেই, কিন্তু সঠিক জ্ঞান, ইতিবাচক মনোভাব, সুস্থ জীবনধারা আর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
অনলাইন নিউজ ডেক্সঃ
কুইক এন ভি/রাজ/১০ আগষ্ট ২০২৫/দুপুরঃ ০১.১০