শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন

৮০ বছর পরেও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য ‘ভয়ংকর হুমকি’

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ২৫ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলা ইতিহাসের এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি, যা প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এ ঘটনা মানবজাতির ভবিষ্যৎকে এক গভীর প্রশ্নবিদ্ধ সঙ্কটের মুখে দাঁড় করায়।

আজ (৬ আগস্ট) হিরোশিমার সেই মহাবিপর্যয়ের ৮০ বছর পরেও, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের বিস্তার ও আধুনিকায়ন পুরো বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তে, মার্কিন সামরিক বাহিনী ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক হামলা চালায় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমা এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলে—যার অনুমতি ছিল কুইবেক চুক্তির অধীনে যুক্তরাজ্যের সম্মতিসাপেক্ষে। এ দুই হামলায় প্রায় ২,২৬,০০০ মানুষ নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।

হিরোশিমা শহরে এই পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে আজ। জাপানের মানুষ আজও এই দিনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে থাকেন, বিশেষ করে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে—যে সময়টিতে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট ‘লিটল বয়’ বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।

প্রতি বছর হিরোশিমার কেন্দ্রে অবস্থিত পিস মেমোরিয়াল পার্কে মূল স্মরণ অনুষ্ঠানটি হয়। এই দিনটি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় পারমাণবিক যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিণতি ও একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়তার কথা। 

মানবতার ওপরে এক নির্বিচার আঘাত

১৯৪৫ সালে জাপানের ওপর ফেলা দুটি পারমাণবিক বোমা শত-শত হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় এবং বহু মানুষকে আজীবনের জন্য পঙ্গু বা অসুস্থ করে তোলে।

১৯৪৫ সালের শেষ নাগাদ, হিরোশিমায় প্রায় ১,৪০,০০০ এবং নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ মানুষ নিহত হন। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৩৮,০০০ জন ছিলেন শিশু। পরবর্তী বছরগুলোতে অনেক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি লিউকেমিয়া, ক্যানসার এবং রেডিয়েশন-জনিত নানা কঠিন রোগে আক্রান্ত হন।

হিরোশিমার ওপর ফেলা ইউরেনিয়াম বোমাটির বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল ১৫,০০০ টন টিএনটি-র সমান। এতে শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা পুড়ে যায় এবং বছরের শেষ নাগাদ আনুমানিক ১,৪০,০০০ মানুষ মারা যায়।

তিন দিন পর, নাগাসাকিতে ফেলা হয় একটি আরও শক্তিশালী প্লুটোনিয়াম বোমা, যা ৬.৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। এতে মৃত্যু হয় আরও ৭৪,০০০ মানুষের। বিস্ফোরণের ফলে মাটির তাপমাত্রা ছিল ৪,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং বৃষ্টি হয়ে নামে বিষাক্ত বিকিরণযুক্ত ধূলিকণা।

কারা দায়ী ছিল?

এই হামলাগুলোর জন্য যুক্তরাজ্যের সম্মতি নেওয়া হয়েছিল কুইবেক চুক্তি অনুযায়ী। ১৯৪৫ সালের ২৫ জুলাই, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান জেনারেল টমাস টি. হ্যান্ডি নির্দেশ দেন যে হিরোশিমা, কোকুরা, নিগাটা ও নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলা হবে। এই শহরগুলো ছিল জনবহুল এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবকাঠামো ছিল।

৬ আগস্ট ‘লিটল বয়’ নামক ইউরেনিয়াম বোমাটি হিরোশিমার ওপর ফেলা হয়। তিন দিন পর, ‘ফ্যাট ম্যান’ নামক প্লুটোনিয়াম বোমা নাগাসাকির ওপর নিক্ষেপ করা হয়। পরবর্তী দুই থেকে চার মাসের মধ্যে হিরোশিমায় আরও ৯০,০০০ থেকে ১,৬৬,০০০ এবং নাগাসাকিতে ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ মানুষ মারা যান, যাদের অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যু ঘটে বোমা পড়ার প্রথম দিনেই।

পরবর্তী মাসগুলোতে অনেক মানুষ দগ্ধ হওয়ার ফলে, রেডিয়েশনজনিত অসুস্থতা ও অপুষ্টিজনিত জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। যদিও হিরোশিমায় প্রায় ২৪,০০০ সেনা অবস্থান করছিল, তথাপি প্রায় ৯০% নিহতই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।

যুক্তরাষ্ট্র: ইতিহাসের সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ রাষ্ট্র?

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসে অন্য যে কোনো রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি যুদ্ধাপরাধ করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলার পরও যুক্তরাষ্ট্র তার পররাষ্ট্রনীতি বা যুদ্ধনীতি তেমনভাবে পরিবর্তন করেনি।

হিরোশিমা ও নাগাসাকি ট্র্যাজেডির বার্ষিকী আজও স্মরণ করিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের মানবতাবিরোধী অপরাধের এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববাসী প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছে কিভাবে আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহার করে ধ্বংস, দখল ও গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে।সূত্র: মেহের নিউজ

 

কিউএনবি/আয়শা/৬ আগস্ট ২০২৫/দুপুর ১২:৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

August 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit