নিউজ ডেক্সঃ ঘুম শুধু বিশ্রাম নেওয়ার সময় নয়—এটা শরীরের জন্য একেবারে অপরিহার্য। এই সময় শরীর নিজেকে সারিয়ে তোলে, মন শান্ত হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা শত চেষ্টা করেও রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। বিছানায় লম্বা সময় শুয়ে থাকলেও ঘুম আসে না, অথবা ঘনঘন ঘুম ভেঙে যায়। এর ফলেই দিনভর ক্লান্তি, মন খারাপ আর কাজে মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়।
এই সমস্যার গুরুত্ব বোঝাতে সম্প্রতি ভারতের এক সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন কলকাতার ঘুম ও শ্বাসপ্রশ্বাস বিশেষজ্ঞ ডা. অরূপ হালদার। ঘুম না হলে শরীর-মন ঠিক কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়—সেই বিষয়েই দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ।
রাতে ঘুম আসে না?
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য শুধু বিশ্রামের সময় নয়—এই সময় শরীরে চলে অনেক জরুরি কাজ। তাই ভালো ঘুম মানেই ভালো শরীর ও ভালো মন। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যখন বিছানায় দীর্ঘসময় শুয়ে থাকলেও ঘুমটা হয় না ঠিকমতো। তার প্রভাব পড়ে মেজাজে, মনোযোগে এমনকি শরীরেও।
ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, বুঝবেন কীভাবে?
কলকাতার ঘুম ও ফুসফুস রোগের বিশেষজ্ঞ ডা. অরূপ হালদার বলেন, ঘুমের গুণমান খারাপ হলে সকালে ঘুম থেকে উঠেও ক্লান্তি থাকে, মাথা ঝিমঝিম করে। কাজে মন বসে না, ভুল হতে থাকে, কিছু মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি নতুন কিছু শেখার আগ্রহও কমে যায়।
কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ঠিকঠাক ঘুম না হলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, যা হার্টের উপর চাপ ফেলে। এর ফলে হার্টের ছন্দপতন (arrhythmia) বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। ঘুমের অভাব মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলে। এতে স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া), অ্যালঝাইমার্স এমনকি স্ট্রোকের মতো জটিল সমস্যা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
দিনে কতক্ষণ ঘুমানো জরুরি?
ঘুমের প্রয়োজন বয়সভেদে ভিন্ন। ছোটরা বেশি ঘুমায়, বড় হলে প্রয়োজন কমে আসে। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গাঢ় ঘুম খুব জরুরি। শুধু বিছানায় শুয়ে থাকার চেয়ে, গভীর ঘুম হওয়াটাই আসল।
ঘুম ভালো করতে যা করবেন
– রাতে চা বা কফি কম খান। কারণ এতে ঘুম নষ্ট করার মতো উপাদান থাকে।
– ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ এসব থেকে দূরে থাকুন।
– ঘুমানোর ঘর হোক শান্ত, অন্ধকার আর আরামদায়ক।
– বই পড়া, হালকা গান শোনা ঘুমে সাহায্য করে।
– শুয়ে ২০ মিনিটেও ঘুম না এলে উঠে কিছু সময় হেঁটে নিন, বা বই পড়ুন। ঘুম আসলে আবার শুয়ে পড়ুন।
– ঘুম না আসায় দুশ্চিন্তা করবেন না, এতে আরও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি?
যদি আপনি ঘুমাতে গিয়ে নাক ডাকেন, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে (স্লিপ অ্যাপনিয়া), বা পা ছটফট করার সমস্যা থাকে (রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম), তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ভালো ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, এটা শরীরের দরকারি মেরামতের সময়। ঘুম ঠিক না হলে শরীর-মনের ওপর তার খারাপ প্রভাব পড়বেই। তাই নিয়ম মেনে চলুন, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন—তাহলেই আপনি পাবেন শান্ত ঘুম আর ভালো জীবন।
অনলাইন নিউজ ডেক্সঃ
কুইক এন ভি /রাজ/৪আগস্ট ২০২৫/দুপুরঃ ০১.২৮