রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন

‎বর্ষা মৌসুমেও পাট পচাঁনোর মতো নেই পর্যাপ্ত পানি, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ।
  • Update Time : শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫
  • ৪৫ Time View

‎জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না,‎‎লালমনিরহাট প্রতিনিধি : ‎বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও নদ-নদীর পানি এখনো খাল-বিল ছুঁয়ে ওঠেনি। প্রকৃতির নিয়মে বর্ষা আসলেও এ বছর উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাটের ভিন্ন এক চিত্র। এ কারনে খালবিলে স্বাভাবিক পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছেন পাটচাষিরা। পাট পচাঁনোর (জাগ দেওয়ার) মতো স্বচ্ছ ও পর্যাপ্ত পানির অভাবে বাধ্য হয়ে তারা চড়া দামে পুকুর ভাড়া নিচ্ছেন।

‎জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর লালমনিরহাটে ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। উৎপাদন ভাল হলেও পানি-সংকটের কারণে এখন চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। পুকুর ভাড়ায় ২-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে, যা উৎপাদন ব্যয় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও মাছ চাষিরা মাছের ক্ষতি হবে বলে পুকুর ভাড়া দিচ্ছেন না।

‎জেলার আদিতমারী, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও লালমনিরহাট সদরের কৃষকরা জানাচ্ছেন, খরার কারণে খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। কেউ কেউ অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে দূরবর্তী বিলে পাট জাগ দিচ্ছেন, কেউ আবার পুকুরের অস্বচ্ছ পানিতে আঁশ পচাচ্ছেন, এতে সোনালী আঁশ পাটের মান নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন।

‎সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের কৃষক তমিজার রহমান জানান, “পুকুরের পানিতে পাট পচাঁলে আঁশের মান কমে যায়। ভালো মানের আঁশ পেতে দরকার স্বচ্ছ প্রাকৃতিক পানির। ‎একই এলাকার চাষি শামসুল হোসেন, বকবর আলী ও আমিরুল ইসলাম জানান, বিঘাপ্রতি সার, বীজ, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ প্রায় ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এখন আবার পাট জাগ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

‎পুকুর মালিকদের দাবি, তারা নিজ খরচে ডিজেলচালিত সেচপাম্প দিয়ে পানি ধরে রেখে মাছ চাষ করছেন। এই পানিতে পাট জাগ দিলে মাছ চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে তাই মাছের লাভের টাকা যদি আমরা পুকুর ভাড়া দিয়ে বেশি পাই তবেই পুকুর ভাড়া দিচ্ছি। আর সেচপাম্প দিয়ে পুকুরে পানি ধরে রাখাটাও ব্যয়টা তুলনামূলক একটু বেশি। একেকটি পুকুরে গড়ে ৫-৭টি পাট জাগ দেওয়া হচ্ছে।

‎এই সংকট মোকাবেলায় কৃষি বিভাগ ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতির ওপর জোর দিচ্ছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, “এই পদ্ধতিতে কম পানিতে পাট পচানো সম্ভব। এতে আঁশের গুণগত মান বজায় থাকে, সময় ও শ্রমও বাঁচে।”

‎কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, “বর্ষা হলেও বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম। তাই খাল-বিল শুকনো। এই পরিস্থিতিতে রিবন রেটিং পদ্ধতি হতে পারে কার্যকর সমাধান।”‎বর্ষায় খালবিলে পানি না থাকায় শুধু পাট নয়, পানির অভাবে ধানের বীজতলা তৈরিসহ অন্যান্য মৌসুমি কৃষিকাজও ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বর্ষার চেনা চিত্র পাল্টে গেছে। ‎এ পরিস্থিতি শুধু লালমনিরহাট জেলাতে নয়, গোটা উত্তরাঞ্চলের কৃষিতেই উদ্বেগজনক সংকেত দিচ্ছে।

 

কিউএনবি/আয়শা/২৫ জুলাই ২০২৫,/দুপুর ১:৩৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit