বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৪ অপরাহ্ন

সন্তান হারানো মা-বাবার জন্য নবীজির সান্ত্বনা

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে বহু হতাহতের ঘটনায় গোটা বাংলাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিহতদের বেশির ভাগ কোমলমতি নিষ্পাপ শিশু হওয়ায় হৃদয় থেকে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সংক্রমিত হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই।

তবু মহানবী (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণী থেকে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছি :
মৃত শিশুসন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকবে : মৃত্যুবরণকারী শিশুসন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। কুররা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বসতেন, তখন সাহাবিদের অনেকে তাঁর কাছে এসে বসতেন। তাঁদের মধ্যে একজন সাহাবির ছোট একটি শিশুপুত্র ছিল। তিনি তাঁর ছেলেকে পেছন দিক থেকে নিজের সামনে এনে বসাতেন।

একদিন সে ছেলেটি মৃত্যুবরণ করল। ফলে সে সাহাবি খুব বিষণ্ন হয়ে পড়লেন। ছেলের শোকে তিনি নবীজি (সা.)-এর মজলিসে উপস্থিত হতেন না। কয়েক দিন তাঁকে না দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘অমুক ব্যক্তিকে দেখছি না কেন?’ সাহাবিরা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তার যে ছোট ছেলেকে দেখেছিলেন সে মৃত্যুবরণ করেছে।’ পরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার সে ছেলেটির কী হয়েছে?’ তিনি বলেন, ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। তখন নবীজি (সা.) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন। তারপর বলেন, ‘হে অমুক! তোমার কাছে কোনটা বেশি পছন্দনীয়, তার দ্বারা তোমার পার্থিব জীবন সুখময় করা, নাকি কাল কিয়ামতে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে তুমি প্রবেশ করতে চাইবে তাকে সেখানেই পাওয়া, যেখানে সে পৌঁছে তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেবে?’ তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! বরং সে আমার জান্নাতের দরজায় গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে দেবে; এটাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়।’ তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তাহলে তোমার জন্য তাই হবে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ২০৯০)
অপ্রাপ্তবয়স্ক মৃত সন্তানের মা-বাবা জান্নাতে যাবে : সন্তান হারানো মা-বাবার জন্য এর চেয়ে বড় সান্ত্বনা আর কী হতে পারে—তাঁদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যেকোনো মুসলিম ব্যক্তির এমন তিনটি (সন্তান) মারা যাবে, যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি, আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ রহমতে তাদের মা-বাবাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারি, হাদিস : ১৩৮১)
ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী শিশু জান্নাতের প্রজাপতির মতো : আবু হাসসান (রহ.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, আমার দুটি সন্তান মারা গেছে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করবেন, যাতে আমরা অন্তরে সান্ত্বনা পেতে পারি? তখন আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হ্যাঁ, আমি নবীজি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তাদের কেউ যখন পিতা কিংবা মাতা-পিতা উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার পরিধানের কাপড় কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরেছি। এরপর সেই কাপড় কিংবা হাত আর ছাড়বে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৭০)

আগুনে দগ্ধ ব্যক্তি শহীদ : উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে যারা মারা গেছে, তাদের অনেকে আগুনে দগ্ধ হয়েছে। এমন মৃত্যুকে ইসলামে শহীদি মৃত্যু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আগুনে পুড়ে মরা ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে জাবের তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পিতা জাবের (রা.)-কে তাঁর রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না—এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃতও শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তিও শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তিও শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিও শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তিও শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ…। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১)

মা-বাবার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণের ঘোষণা : শিশুসন্তান হারানো মা-বাবার জন্য তৎক্ষণাৎ জান্নাতে ঘর নির্মাণের ঘোষণা এসেছে হাদিস শরিফে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দার কোনো সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। আবার আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। আবার তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহ…পাঠ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরি করো এবং তার নাম রাখো বাইতুল হামদ বা প্রশংসালয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১০২১)

ইবরাহিম (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালন : দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া শিশুসন্তানরা জান্নাতের পাহাড়ে অবস্থান করে। তাদের লালন-পালন করেন ইবরাহিম (আ.) ও সারা (আ.)। কিয়ামতের দিন তাদেরকে তাদের মা-বাবার কাছে ফেরত দেওয়া হবে।

(সহিহুল জামে, হাদিস : ১০২৩)

কিউএনবি/অনিমা/২৩ জুলাই ২০২৫,/রাত ১০:১৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit