সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৪ অপরাহ্ন

নারায়ণগঞ্জে দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন পাঁচ উপদেষ্টার

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে নারায়ণগঞ্জে দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা। এ সময় উপদেষ্টারা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, এই সরকারের শাসনামলেই জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হবে।

তারা আরও বলেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে বৈষম্যহীন সমাজ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে তারা ঘোষণা দেন—গণভবনে স্বৈরাচারের নির্যাতনের চিহ্ন সংরক্ষণ করে তা ‘ফ্যাসিস্ট জাদুঘর হিসেবে ৫ আগস্টের মধ্যে উদ্বোধন করা হবে। চাঁদাবাজি ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান উপদেষ্টারা।

সোমবার বিকালে নগরীর হাজীগঞ্জ এলাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ‘বিজয় স্তম্ভ’টির উদ্বোধন করা হয়।জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের ছাত্র–জনতাও প্রাণপণ লড়াইয়ে নেমেছিল রাজপথে। আন্দোলনের সময় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও নগরীর বি.বি. রোডে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরা ছাত্রজনতার ওপর ভয়ংকর মারণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।

বৈষম্যের বিরুদ্ধে টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনে, অর্থাৎ ৩৬ জুলাই পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে শহীদ হন ৫৬ জন, আহত হন ৩৭০ জন। নিহতদের মধ্যে ২১ জন ছিলেন নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা। শহীদদের স্মরণে সরকারি উদ্যোগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় নির্মিত হয়েছে এই স্মৃতিস্তম্ভ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন অনেক দূর এগিয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই সরকারের শাসনামলেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত অগ্রসর হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর চার্জশিট ৫ আগস্টের আগেই জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। চার্জশিট প্রদান করা হলে বিচার দ্রুত বিচার আইনে সম্পন্ন করা যায় কি না, তা বিবেচনা করা হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বেড়েছে। আমরা যেমন সবাই মিলে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, ঠিক তেমনি ঐক্যবদ্ধভাবে এসব অপকর্মের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রশাসন সহায়তা করবে।

তিনি নারায়ণগঞ্জের শহীদ পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। অভিযোগ এসেছে, শহীদ পরিবারের কেউ কেউ মামলা করে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং নিজ এলাকায় যেতে পারছেন না। এসব বিষয়েও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সায়েদা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দীর্ঘ ৩৬ দিনের আন্দোলনে দেশের ছাত্র–জনতা বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে দেশকে। যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তাদের স্মরণেই এই স্মৃতিস্তম্ভ।

তিনি বলেন, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় দল ও ব্যক্তির স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে এবং শহীদ পরিবারের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

শিল্প ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী ও মুজিববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের আন্দোলনের একপর্যায়ে তরুণ ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে আসে এবং ৫ আগস্ট দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করে বিজয় অর্জন করে। এই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

তিনি বলেন, গণভবনকে ফ্যাসিস্ট জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেখানে স্বৈরাচারের নির্যাতনের চিহ্ন সংরক্ষণ করে জনগণকে দেখানো হবে কিভাবে সেই ভবন থেকে গুম, খুন ও নির্যাতনের নির্দেশ দেওয়া হতো। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, বাংলাদেশে যদি আবার কোনো আধিপত্যবাদী শক্তি বা স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ আদিলের মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমার ছেলে অনেক মেধাবী ছিল। সে বেঁচে থাকলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিত। কয়েক দিন আগে যে এসএসসির রেজাল্ট বের হয়েছে, আদিল বেঁচে থাকলে রেজাল্ট হাতে নিয়ে মাকে দেখাতে আসত। কিন্তু ফ্যাসিস্টদের গুলিতে আমার ছেলে মারা গেছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছুর রহমান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফুদ্দিন চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।

এছাড়াও শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহতরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টারা পরিবেশ রক্ষায় গাছের চারা রোপণ করেন। 

 

কিউএনবি/আয়শা//১৪ জুলাই ২০২৫,/রাত ৯:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit