ডেস্ক নিউজ : আসন্ন ঈদুল আজহায় ফরিদপুর সদরসহ জেলার ৯ উপজেলায় মোট চাহিদার চেয়ে কয়েক হাজার পশুর আমদানি বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। আর জেলার চাহিদা পূরণ করে বাড়তি কুরবানির পশু দেশের অন্যান্য জেলায় বিক্রির জন্য নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
তবে এ বছর দেশের বাইরে থেকে কুরবানির পশু আমদানি না করায় দেশের খামারি ও ব্যবসায়ীরা পশুতে ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরে কুরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ১১টি। এর মধ্যে পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৯১টি। সেই হিসাবে প্রায় ৩ হাজার পশু দেশের বিভিন্ন বাজারে নেওয়া হবে। খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা এবার কুরবানির বাজারে পশুর ভালো দাম পাওয়ার আশায় রয়েছেন।
জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর ৮ হাজার ১৭৮টি ছোট-বড় খামার রয়েছে। এসব খামারে গরু ৫১ হাজার ১৬৭, ছাগল ৫৪ হাজার ৯২৫, ভেড়া ৪ হাজার ৫৯৭ ও মহিষ ১০৫টিসহ অন্যান্য ৯৭টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এসব খামারে কুরবানির জন্য গরু-ছাগল পরিচর্যায় শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এ জেলায় ৪০টি গরু-ছাগলের হাট-বাজারে ১৮টি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন বাজার ও খামার ঘুরে দেখা গেছে, জেলার মধ্যে সদর, নগরকান্দা, সালথা, সদরপুর ও বোয়ালমারী উপজেলায় খামারের সংখ্যা বেশি। খামারি ও ব্যবসায়ীরা কুরবানির পশু পরিচর্যায় শেষ সময়ে ব্যস্ততার সঙ্গে পার করছেন। খামারে কেউ পশুকে খাবার দিচ্ছেন, আবার কেউ গোসল করাচ্ছেন। কুরবানি দেওয়ার জন্য অনেকেই খামার থেকে পশু দেখে যাচ্ছেন। তবে ক্রেতারা অনেক যাচাই-বাছাই করে পশু কিনবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া জেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁর তীরের নর্থ চ্যানেল, ডিক্রীরচর ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়ন ছাড়াও চরভদ্রাসন, সদরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চরবাসীদের আয়ের অন্যতম মাধ্যম গবাদি পশু পালন। বছরজুড়েই সেই গবাদি পশু লালন-পালন করে কুরবানির হাটে তোলার জন্য প্রস্তুত করেছেন তারা। এখানে প্রতিটা পরিবারের নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও গবাদি পশু পালন কাজে ব্যস্ত সময় পার করে বছরজুড়ে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার গরানিয়া গ্রামের রাজুর খামার দেখভালকারী আক্তার হোসেন জানান, আমরা কুরবানির জন্য ১৫টি গরু প্রস্তুত করেছি। গরুগুলোকে দুই বেলা গোসল করানো হয়। কুড়া, ভুসি, ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয়। দিন-রাত খামারে একজন মানুষ লেগে থাকতে হয়। গরু কেনার জন্য অনেকেই এসেছেন। তবে এখনো গরু বিক্রি করতে পারিনি।
বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা গ্রামের ঈদগাহ এলাকার খামারি রাশিদা বেগম জানান, আমরা কাবু ও ছোট গরু কিনে লালন পালন করে প্রতিবছরই কুরবানির জন্য প্রস্তুত করি। কুরবানির ৭ থেকে ৮ মাস আগে গরুগুলো কেনা হয়। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে আমি এ কাজ করছি। স্বামী-সন্তানের পাশাপাশি বেশির ভাগ সময় আমিই গরুগুলো দেখাশোনা করি। কুরবানির এক সপ্তাহ আগে কুমিল্লায় আমার স্বামী গরুগুলো বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাবেন। আশা করছি এবার পশুর ভালো দাম পাওয়া যাবে।
সদর উপজেলার চরধোলাই এলাকার ফিরোজ মোল্লা বলেন, আমি ২৬টি ভেড়া লালন পালন করছি। এবারের ঈদে ভেড়াগুলো বিক্রি করে ভালো আয়-রোজগার হবে। আশা করছি এই টাকা দিয়েই আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আগামী বছরটি ভালোভাবে কাটাতে পারব।
ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, ফরিদপুরের খামারিরা আশা করছেন এ বছর পশুর ভালো দাম পাবেন। যতটুকু জানতে পেরেছি এ বছর দেশের বাইরে থেকে কোনো পশু আমদানি হচ্ছে না। এ জেলায় কুরবানির জন্য চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার পশু বেশি রয়েছে। জেলার ৪০টি হাটে খামারি ও ব্যবসায়ীদের পশুর সুবিধার্থে ১৮টি চিকিৎসক টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/২৫ মে ২০২৫, /সন্ধ্যা ৭:০৮