আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতায় রাঙামাটির অবৈধ বিদেশী সিগারেট পাচাঁরকারিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি একের পাঁচারকারিকে আটকের ঘটনায় ব্যাপক প্রভাব পরেছে পাচাঁরকারিদের নিজস্ব এলাকায়। মঙ্গলবার শহরের আসামবস্তি এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ ইমরান আলম নামের এক অবৈধ সিগারেট পাচাঁরকারিকে গ্রেফতার করেছে রাঙামাটির কোতয়ালী থানা পুলিশ। থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত ইমরানের বিরুদ্ধে অবৈধ সিগারেট পাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ইমরান আলম মূলত রাঙামাটি শহরের ৭নং ওয়ার্ডের আলম ডক ইয়ার্ডের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা হলেও তার মূল বাড়ি হাটহাজারীর গুমানমর্ধন ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আক্রম আলী সারাং বাড়ি। সম্প্রতি রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের মহসিন কলোনী এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত প্রায় ২০ লাখ টাকার শুল্কবিহীন অবৈধ বিদেশী সিগারেট জব্দের ঘটনায় মামলার তদন্তে ইমরানসহ আরো বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
এছাড়াও চলতি বছরের ২৩শে মার্চ রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম পাচারের সময় হাটহাজারীতে ডিবি পুলিশের অভিযানে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ সিগারেটসহ দুই জন আটকের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ৭ নং আসামী হিসেবে ইমরানের নাম রয়েছে বলে পুলিশী সূত্রে জানাগেছে। এদিকে, গত ২৪শে এপ্রিল রাঙামাটির মহসিন কলোনী থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার অবৈধ বিদেশী সিগারেটসহ গ্রেফতারকৃত তিন আসামীর মধ্যে দুইজনের বিরুদ্ধে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশ জানিয়েছে, রাজু বড়–য়া, সুমিত্র চাকমা ও মোজাম্মেল হোসেন রাজু এ তিনজনের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিলো। পরবর্তীতে আদালত সুমিত্র চাকমা ও মোজাম্মেল হোসেন রাজুকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এই মামলায় গ্রেফতারকৃত শহরের রাজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রাজু বড়–য়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তাবাহিনী ও পুলিশের উদ্বর্তন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপকর্মকারি ও সিগারেট পাঁচারকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান টাকা আদায় করাসহ হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জানাগেছে, বরকল উপজেলা ও জুরাছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় পণ্য এনে রাঙামাটি হয়ে চট্টগ্রামে পাচার করছে সিন্ডিকেট চক্র।
ইমরানসহ তার সঙ্গী জুয়েলরা গত ঈদের আগে বিকাশ চাকমার কাছ থেকে ৬৪ কার্টুন সিগারেট নিয়ে রাঙামাটির আসামবস্তি সড়রে প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ট্রাকযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে গেছে। তার সাথে এই কাজে টকটক সুমন, জ্ঞানেন্দু, কাপড় ব্যবসায়ি মহিউদ্দিনসহ পরেশ চাকমা, পুলক্ক চাকমা ওরফে বিকাশ, বিশ্বজিৎ চাকমা, অমর চাকমা, রূপম চাকমা (সিকো), জুয়েল চাকমা, কালামন চাকমা, ত্রিরাজা চাকমা নামের এসকল ব্যক্তি এই সিগারেট ব্যবসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এদের কাছ থেকে চট্টগ্রামের আবু, রাশেদ, টেনশন বেলাল, কামরুল,মোর্শেদসহ আরো অন্তত ১০ জন অবৈধ ব্যবসায়ির মূল অর্থের যোগানদাতা।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অবৈধ সিগারেটের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা বেড়ে যায়। চোরাচালানি সিন্ডিকেট চক্র এখন নানান ছদ্মবেশে মৌসুমী ফলের গাড়ি, ভাঙ্গারির মালভর্তি গাড়ি, কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি, সিএনজি অটোরিক্সা, মোটর সাইকেলে করে বিভিন্ন কোম্পানীর ডিলারের মালামালের ভেতরে করে এবং সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানাগেছে, মালবাহি ট্রাকের ভেতরের দুই পাশে বিশেষ কায়দায় সিগারেটের কার্টুনগুলো এমনভাবে বসায় যাতে চেকপোষ্টে লোহার শিকের আঘাত থেকে রক্ষা পায়। কারণ কোনায় বা বডির সাথে লাগোয়া অবস্থায় শিক প্রবেশ করানো হয়না। মাঝখান দিয়ে শিক বসিয়ে লোকদেখানো অবস্থায় চেক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিউএনবি/আয়শা/১৫ মে ২০২৫, /রাত ৯:২২