শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

৫ আগস্টের পর ৭৮২২ জনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৭৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর বিগত দুই মাসের কার্যক্রম তুলে ধরে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ সময়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২ হাজার ৪৫৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৮২২ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশিত দায়িত্বই পালন করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।

রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে অবরোধ থাকলে অর্থনীতির সব সেক্টরেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনী চেষ্টা করে- যত কম সময়ের মধ্যে অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে অবরোধটাকে মুক্ত করার জন্য।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা গত দুই মাসে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারদের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারীরা রয়েছে। অভিযানের সময় সেনাবাহিনী দুই মাসে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র ও ৫৬৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৩৭০টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।

কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম আরও জানান, সেনাবাহিনী বিগত দুই মাসে ২৩২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ৩৭টি, সরকারি সংস্থা ও অফিস সংক্রান্ত ২৪টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ছিল ৯৫টি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী অদ্যাবধি ৪ হাজার ৩৪০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। যার মধ্যে ৪৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতদের সম্মানে সেনাবাহিনী গত ২৩ মার্চ সেনামালঞ্চে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে। ২৫ মার্চ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আহত এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধান উপস্থিত থেকে সকলের খোঁজ-খবর নেন। চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

কর্নেল শফিকুল ইসলাম আরও জানান, বিগত সময়ে শিল্পাঞ্চল গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং ৩১ বার বিভিন্ন মূল সড়ককে অবরোধ থেকে অবমুক্ত করেছে। শিল্পাঞ্চলে জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের সময় গত ৯ এপ্রিল নারায়নগঞ্জের রবিন টেক্স গার্মেন্টসে অস্থিরতা প্রশমনের সময় নিয়োজিত সেনাসদস্যরা কিছু গার্মেন্টস শ্রমিকের ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় আক্রান্ত হয়। এতে ২৪ জন সেনাসদস্য আহত হয়। আহতদের মধ্যে ২০ জনকে সিএমএইচ এ ভর্তি হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ঈদ পূর্ব গার্মেন্টসে অস্থিরতা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় সাধন করে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধে বিশেষ ব্যবস্থা করে যা শ্রমিকদের মাঝে ঈদ পূর্ববর্তী গতানুগতিক অস্থিরতা প্রশমনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

এই সেনা কর্মকর্তা জানান, ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের সকল জেলার বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলে সড়ক দূর্ঘটনাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড গত বছরের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পায়। যা জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

পহেলা বৈশাখ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে বলেও জানান সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ। তিনি বলেন, যার ফলে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের সব স্তরের জনসাধারণ আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে। দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।

গত দুই মাসে চট্টগ্রাম, সাভার, উত্তর বাড্ডা, মিরপুর, বনানী, ভাসানটেক, গাজীপুর, পটুয়াখালী ও বাগেরহাটে সংঘটিত বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সমন্বিতভাবে দ্রুততম সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।

এসব কাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে।

কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করেন। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনী প্রধানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দিয়েছে। তার সফর সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। এছাড়াও সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য ইফতার প্রস্তুত ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হয়েছে। সফরকালীন সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘ মহাসচিব সেনাবাহিনীর সার্বিক কর্মকান্ড বিশেষত জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান ও সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের আঘাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। প্রতিবেশী দেশের বিপদসংকুল সময়ে বাংলাদেশ সরকার জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকারের এ উদ্যোগে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সেনাবাহিনীর কর্নেল শামিমের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ার কোরের ২১ জনের একটি উদ্ধারকারী দল এবং ১০ জনের একটি মেডিক্যাল দল সেখানে পাঠানো হয়। সেনাবাহিনী ছাড়াও নৌবাহিনীর তিন জন, বিমানবাহিনীর তিন জন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সর এর ১০ জন এবং আট সদস্য বিশিষ্ট একটি অসামরিক মেডিক্যাল দল পাঠানো হয়। এই উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়ক দল প্রেরণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিমান, বিমান বাহিনীর বিমান ও নৌ জাহাজ ব্যবহার করা হয়। এই মানবিক সহায়তাকারী দলটি তাদের কার্যক্রম শেষ করে গত ১৫ এপ্রিল দেশে ফিরে এসেছে।

কিউএনবি/অনিমা/১৭ এপ্রিল ২০২৫,/রাত ৮:১৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit