রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১২:০৬ অপরাহ্ন

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিললো ২৮ বস্তা টাকা, গণনায় নিয়োজিত ৪৫০ জন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১১১ Time View

ডেস্ক নিউজ : চার মাস ১১দিন পর আবার খোলা হলো কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। এবার মসজিদের ১১টি সিন্দুক বা দানবাক্স খুলে পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকা। টাকার পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে আশা কর্তৃপক্ষের।

আজ শনিবার সকাল সা‌ড়ে ৭টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এ সময় মসজিদের সভাপতি, জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 
নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ, ও ঙআনসার সদস্যিরা। এ সময়  মসজিদ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। 

দানবাক্সের টাকাগুলো বস্তায় ভরে কড়া নিরাপত্তায় মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই টাকাগুলো গণনার কাজ শুরু হয়। 

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর খোলা হয়েছিল মসজিদের দানবাক্স। তখন পাওয়া যায় রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪টাকা।

মসজিদের দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে বসা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সামনে বস্তা ঢেলে দেওয়া হচ্ছে টাকাগুলো। আর তারা এগুলো গুনছে। গণনার কাজে সহযোগিতা করছেন মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ব্যাংকের লোকজন। 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জেস‌মিন আক্তা‌রের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করছেন। গণনার কাজে দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৮০ জন কর্মী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সাড়ে চারশ’ লোক টাকা গণনার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

গত ১৭ আগস্ট আরেকবার খোলা হয়েছিল দানবাক্স। তখন পাওয়া যায় ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এর আগে গত ২০ এপ্রিল সিন্দুক খুলে পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।  তারও আগে গত বছরের  ৯ ডিসেম্বর পাওয়া  যায় ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা।

মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণত তিন মাস পর পর দানবাক্স খোলা হয়। এবার চার মাসের বেশি সময় পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। এ কারণে টাকার পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম জানান, দেশি টাকা ছাড়াও বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাওয়া গেছে। এগুলো গণনা করতে সন্ধ্যা এমনকি রাতও হয়ে যেতে পারে।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। ২০২৪ সালে আজ নিয়ে তিনবার খোলা হলো সিন্দুক। আগের দুবারে পাওয়া যায় ১৪ কোটি ১১লাখ ১৮ হাজার ৯৬০ টাকা। 

স্থানীয়রা জানান, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসে পাগলা মসজিদে। দান করে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন।

তবে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে প্রাপ্তির আনন্দ, না-পাওয়ার বিরহ বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে।

জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে থাকে মসজিদ কমিটি। যে কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, দানের টাকায় মসজিদের নিয়মিত খরচ চালিয়ে ব্যাংকে জমানো হচ্ছে। ব‌্যাং‌কে জমা আছে ৮০ কো‌টি ৭৫ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে মসজিদের বড়সড়  উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। মসজিদ ঘিরে এখানে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে একসঙ্গে ৫০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবে। 

এর মধ্যে পাঁচ হাজার নারীর জন্য আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন। এ জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

কিউএনবি/অনিমা/১২ এপ্রিল ২০২৫,/দুপুর ১:০৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit