ডেস্ক নিউজ : মুসলমানের অন্যতম অপরিহার্য গুণের নাম হলো তাকওয়া। আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানিত হওয়ার ঘোষণা করেছেন। এটিকে জীবন সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাথেয় হিসেবে অভিহিত করেছেন। রাসুলও (সা.) তাকওয়াকে সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক ঘোষণা করেছেন। তাকওয়া আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো খোদাভীতি, ধার্মিকতা, হারাম থেকে বেঁচে থাকা, সতর্কতা অবলম্বন করা প্রভৃতি। তাকওয়া মানে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা। তাঁর বিধিনিষেধের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। হজরত নুমান ইবনে বাশির (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট। এ দুইয়ের মধ্যবর্তী বস্তু হলো সন্দেহপূর্ণ। (তা হালাল হতে পারে আবার হারামও হতে পারে) অধিকাংশ মানুষ এ সম্পর্কে বেখবর। সুতরাং যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ বস্তু থেকে বেঁচে থাকবে, সে তাঁর দ্বীন ও সম্মান নিয়ে নিরাপদে থাকবে। আর যে সন্দেহপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়বে, একসময় সে হারামে লিপ্ত হয়ে পড়বে’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৯৯)। এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, সন্দেহপূর্ণ বস্তু থেকে বেঁচে থাকার নামও তাকওয়া।
তাকওয়ার অনুপম দৃষ্টান্ত : ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) একদিন কাতিবে রাসুল (রাসুলের পত্রলেখক) উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটাযুক্ত কণ্টকাকীর্ণ পথে চলেছেন? ওমর (রা.) বললেন, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে? ওমর (রা.) বললেন, খুব সতর্কাবস্থায় এমনভাবে যে, গায়ে কিংবা পোশাকে যেন কাঁটার আঁচড় না লাগে। উবাই ইবনে কাব (রা.) বললেন, এটির নামই তাকওয়া (তাফসিরে ইবনে কাসির)। সুতরাং পৃথিবীর পাপ-পঙ্কিলতার পরিবেশে, দ্বীন-ধর্মহীন মূর্খতায় নিমজ্জিত সমাজে বসবাস করেও গায়ে যেন কোনো পাপের আঁচড় না লাগে, এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নামই তাকওয়া।
কুরআনের আলোকে তাকওয়া : তাকওয়া এমন মূল্যবান বস্তু, যার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা মানব সম্প্রদায়কে অসিয়ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, তার সবই আল্লাহর। আমি তোমাদের পূর্ববর্তী কিতাবের অধিকারীদের এবং তোমাদের জোর নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩১)। মুত্তাকিরা পার্থিব জগতে প্রশান্তির জীবন অতিবাহিত করেন। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাদের সঙ্গে থাকেন। সব ধরনের বিপদাপদ থেকে তিনি তাদের রক্ষা করেন। বলা হয়েছে, ‘জেনে রাখো, অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৪)। ইহকাল ও পরকালে তাদের কোনো ভয়, চিন্তা ও পেরেশানি নেই। তারা আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জেনে রাখো, আল্লাহর বন্ধুদের কোনো চিন্তা ও পেরেশানি নেই। তারা সেসব লোক, যারা ইমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। ইহজগৎ ও পরজগতে রয়েছে তাদের জন্য সুসংবাদ’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৪)। আল্লাহ তায়ালা তাদের পছন্দ করেন। তারাও আল্লাহকে ভালোবাসেন। তাদের জন্য তিনি অপরিসীম রিজিকের ব্যবস্থা করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার জন্য সংকট থেকে নিষ্কৃতির ব্যবস্থা করে দেবেন এবং তাকে ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ২-৩)
হাদিসের আলোকে তাকওয়া : রাসুল (সা.) তাকওয়া লাভের জন্য দোয়া করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা ও সচ্ছলতা চাই’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৯৭)। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করো, রমজানে রোজা রাখো, সম্পদের জাকাত আদায় করো, আমিরের আনুগত্য করো, তবেই তোমরা স্বীয় রবের তৈরি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬১৬)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘লোকদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় মুত্তাকি।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৯০)
তাকওয়ার অনিবার্য ফলাফল : তাকওয়ার অনিবার্য ফলাফল হলো সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে সুন্দর সুশৃঙ্খল একটা রাষ্ট্র উপহার পাওয়া। কেননা যখন কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, সে মিথ্যা বলবে না। কারও হক নষ্ট করবে না। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করবে না। বাজারে সিন্ডিকেট ও দালালি করবে না। সুদ-ঘুষ খাবে না। জিনা, ব্যভিচার, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, চোরাচালান, নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়া ও বেচা-বিক্রিসহ যাবতীয় অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে ব্যক্তি নিজেকে ও চারপাশকে নিরাপদ রাখবে।
মুহাদ্দিস ও প্রাবন্ধিক
কিউএনবি/আয়শা/০৮ এপ্রিল ২০২৫,/রাত ৯:৫০