রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

হাসিনার দম্ভের আগুনে ৩৪ বছর আগে পুড়েছিল ড. কামালের ভাগ্য

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫
  • ৭০ Time View

ডেস্ক নিউজ : গত পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকেই দেশের রাজনীতিতে দৃশ্যত অনুপস্থিত দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। গণঅভ্যুত্থানের পর সাত মাস অতিবাহিত হলেও কার্যত এখনও আওয়ামী লীগ দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে বলে বলছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে আওয়ামী লীগের এই করুণ পরিণতির জন্য দলের সভাপতি শেক হাসিনার একরোখা নীতি ও তার দম্ভকে দায়ী করছেন দলটির সমর্থকরা। তাদের ভাষ্য, তার একক সিদ্ধান্ত ও দলের চাটুকারদের উত্থানের কারণে দলের এই পরিণতি হয়েছে। তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের কথা না শুনে চাটুকারীদের নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন, তাদের কথা শুনেই আজকে তারএই পরিণতি।

অনেকে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা বলেন। তারা ওই সময়ের ড, কামাল হোসেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার কার্যকলাপের উল্লেখ করে বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তিনি মূলত তার চিন্তার বাইরের কাউকে পছন্দও করেন না, তাদের পরামর্শ্র গ্রহণ করেন না। এর থেকে বের হতে না পারলে আওয়ামী লীগের দুঃসময় কবে কাটবে তার হিসাব কেউ দিতে পারবে না বলেও জানান তারা।

১৯৯১ সালের ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করে। এ সময় শেখ হাসিনা নির্বাচনে সূক্ষ্ণ কারচুপির অভিযোগ তোলেন।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ১২ পৃষ্ঠার দীর্ঘ চিঠি দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. কামাল। ওই চিঠিতে তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের বিভিন্ন কারণ ও তা নিরসনে কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন।

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রিয় এই শিষ্যকে সেদিন শেখ হাসিনা তিরস্কার করেই ক্ষান্ত হননি। এক প্রকার ষড়যন্ত্র করে তাকে দল থেকে বের করে দেন।

ড. কামাল তার চিঠিতে বলেন, দলের নেতাদের অতিবিশ্বাস, দলীয় কোন্দল, আত্মম্ভরিতা ও কর্মবিমুখতা নির্বাচনে পরাজয়ের মূল কারণ। যদিও অসুস্থতার জন্য তিনি ১২ ও ১৩ মার্চ দুই দিনব্যাপী ওয়ার্কিং কমিটির ওই সভায় যোগ দিতে পারেননি। ৫৪ জন নির্বাহী সদস্যের কাছে তার ওই চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে ড. কামাল বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারির অনেক আগেই আমরা আমাদের বিজয় সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। নির্বাচনকে আমরা আনুষ্ঠানিকতা এবং সময়ের ব্যাপার হিসেবে ধরে নেই। আমাদের নেতা-কর্মীরা নিশ্চিত বিজয়ের আগাম গর্বে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়া, ভোটের কার্ড বিলি করা ইত্যাদি কাজে আদৌ মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে নাই। এমনকি ভোটের দিন স্ব স্ব ভোটকেন্দ্রে ভোটদান কার্য পরিচালনা করা ও তদারকি করা এজেন্ট থাকার মতো অতি অত্যাবশ্যকীয় কাজ বাদ দিয়ে খোশগল্প ও অন্যান্য সব কেন্দ্রে গিয়ে মাতব্বরি করার কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

কামাল হোসেনের মতে, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দল সব শক্তি দিয়ে ভোটের ফল তাদের অনুকূলে আনার জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করেছে। বহুসংখ্যক আসনে কেবল অন্তর্দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয় নস্যাৎ হয়েছে।

চিঠিতে ড. কামাল একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, জামালপুরে মেজর জেনারেল (অব.) খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফুলের মালা প্রতীকে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। প্রচার করেছেন যে তিনি দলীয় সভানেত্রীর প্রার্থী। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের অনেক দায়িত্বশীল নেতা-কর্মী দলের প্রার্থী জেনারেল খলিলের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেনি বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন ড. কামাল।

ড. কামাল জানান, জোহরা তাজউদ্দীনের মতো ত্যাগী ও সংগ্রামী নেত্রীকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, অনেক নেতা-কর্মী দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। ড. কামাল আরও উদাহরণ দিয়ে বলেন, নেত্রকোনার ফজলুর রহমান খান, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর নূরুল ইসলাম বিএসসি, চন্দনাইশের জাফর আহমদ চৌধুরী এবং নারায়ণগঞ্জের কতিপয় আসনসহ সারা দেশে দলীয় প্রার্থীরা উপকোন্দলের শিকার হয়েছেন।

কামাল হোসেনের ১২ পৃষ্ঠার চিঠির পর গুঞ্জন ওঠে, তিনি মনে হয় আর আওয়ামী লীগে থাকবেন না। যদিও তিনি অসুস্থতার কথা বলে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে হারার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভোটে ‘সূক্ষ্ম কারচুপির’ অভিযোগ তোলেন। কিন্তু দলীয় সভানেত্রীর বক্তব্যের বিপরীতে বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন।

তিনি দাবি করেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।’ এতে বিপদে পড়েন তিনি। নিজ দলের নেতা-কর্মীদের রোষানলে পড়েন। তার গাড়িতে হামলা পর্যন্ত হয়। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে কামাল হোসেনের দূরত্ব তৈরি হয়।

শেখ হাসিনাও ড. কামালের ওই চিঠিকে ভালোভাবে নেননি। পরে ১৯৯২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডেকে সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে শেখ হাসিনা লেখেন-একটি মুখোশধারী চক্র দলে ফাটল ধরাবার চেষ্টা করছে। নানা কৌশলে সস্তা সেন্টিমেন্টমূলক বক্তব্য দিয়ে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আজ আমার ও আওয়ামী লীগের ইমেজকে খাটো করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার ওই চিঠিতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে দলীয় নেতা-কর্মীরা বুঝে নিয়েছিলেন যে চিঠির বিষয়বস্তু ড. কামাল হোসেন।

এর কিছুদিন পর দলীয় কাউন্সিলে প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ হারান বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. কামাল হোসেন। তাকে বানানো হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। সেই থেকে লীগের রাজনীতিতে আর সক্রিয় হননি তিনি।

পরে তার উদ্যোগে তৈরি হয় অরাজনৈতিক সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ফোরাম।’ ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কামাল হোসেন। সেই দিনই ‘গণফোরাম’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি।

কিউএনবি/অনিমা/১৩ মার্চ ২০২৫,/রাত ৯:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit