সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন

ট্রাম্প কেন ফিলিস্তিনের জন্য অশনি সংকেত?

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৬৩ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে নেতার পরিবর্তন হলেও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি মার্কিন নীতির তেমন একটা পরিবর্তন দেখা যায় না। তবে কমলা হ্যারিস যেন ট্রাম্পের তুলনায় ‘খারাপের মধ্যে ভালো’। তাই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিকরা হয়তো কমলা হ্যারিসকে ভোট দিতেই বেশি পছন্দ করবেন।

Advertisement

আগামী ৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ে ভোট দেবেন মার্কিনিরা। যদি ট্রাম্প কোনোভাবে এ নির্বাচনে ‘বিজয়’ পেয়ে যায় তবে তা হবে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। গাজার গণহত্যা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। বিভীষিকায় ছেয়ে যাবে লেবাননও।

গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি। এখনো যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত নেই। ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে এটি কমবে না বরং বাড়বে। এমনকি চলমান সংঘাতের জন্যও ট্রাম্প দায়ী।

‘ফ্যাসিস্ট’ ট্রাম্প

ট্রাম্প একজন ‘ফ্যাসিস্ট’ শাসক- এটা এখন অনেকেই বলে থাকেন। মার্কিন নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমলা হ্যারিসও সম্প্রতি তাকে এ খেতাবে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্প সর্বদাই মুসলিমবিরোধী মনোভাব, আচরণ ও পদক্ষেপ নিয়েছেন। অনেক মুসলিম দেশের নাগরিকদের ভিসাও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

শেষবার নির্বাচনে হেরেও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার ক্ষমতা দখলের চেষ্টা দেশটির ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি। মার্কিন ইতিহাসে কালিমা লেপনকারী এই ব্যক্তিতে তাই ‘ফ্যাসিস্ট’ বললে কিছু ভুল হবে না।

গাজা যুদ্ধে দায়ী ট্রাম্প

অনেকেই বলে থাকেন, ট্রাম্প ‍যুদ্ধ চায় না বা করতে পছন্দ করেন না। এটা ‘ডাহা মিথ্যা’ কথা। বরং যুদ্ধ করার সব আয়োজন করেন এই নেতা। উদাহরণ হিসেবে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের কথা বলা যায়।  তাকে হত্যা করে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন ট্রাম্প। তবে ইরান সেই ফাঁদে পা দেয়নি।

গাজা যুদ্ধের ক্ষেত্রও ট্রাম্প তৈরি করেছেন। আর তার এই প্রচেষ্টার প্রথম ধাপ হলো- ‘আব্রাহাম অ্যাকোর্ড’র মাধ্যমে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার নগ্ন প্রচেষ্টা। এ চুক্তির কারণে ইসরাইলের জন্য গাজায় হামলা করা আরও সহজ হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে এনেছেন ট্রাম্প। সেইসঙ্গে ওয়াশিংটনে পিএলও’র কার্যালয় খোলারও অনুমতি দেননি তিনি। এভাবে বৈষম্যমূলক নীতির মাধ্যমে ইসরাইলের পক্ষে কাজ করেছেন ট্রাম্প। তার এই হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার মানুষ আজ গাজায় প্রাণ হারাচ্ছেন।

গণহত্যার উসকানিদাতা ট্রাম্প

গাজায় ‘গণহত্যা’ হচ্ছে এ ব্যাপারে কথা না বলে ট্রাম্প মনে করেন, গাজায় যা হচ্ছে তার গতি আরও বাড়ানো উচিত। যুদ্ধ চলাকালে বাইডেনের পদক্ষেপ সম্পর্কে এক বক্তব্যে ট্রাম্প একবার বলেছিলেন, বাইডেন পিছু হটার চেষ্টা করছেন। এটা মোটেই করা উচিত না। বরং তার উচিত এর বিপরীত কাজ করা। আমি এটা ভেবে আনন্দিত যে, নেতানিয়াহু যা করছেন তা খুবই আনন্দের ব্যাপার।

এ বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প একবার বলেছিলেন, ইসরাইল গাজায় যা শুরু করেছে তা তাড়াতাড়ি শেষ করা উচিত। তিনি মূলত বুঝিয়েছেন, গণহত্যা আরও বাড়িয়ে দ্রুত কার্য হাসিল করে এই যুদ্ধ শেষ করা উচিত নেতানিয়াহুর।

ট্রাম্পের এসব বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, ফিলিস্তিনের প্রতি ব্যাপক বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণ করেন তিনি। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি আরেকটি ফোনালাপে নেতানিয়াহুকে বলেন, আপনার যা ইচ্ছা (গাজায়) করেন।

দমন-পীড়নে সিদ্ধহস্ত ট্রাম্প

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকলে হয়তো এ বিক্ষোভ আরও ভয়াবহ সহিংস আকার নিত। বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন তিনি।

বিক্ষোভ দমাতে ন্যাশনাল গার্ড এমনকি সেনাবাহিনী ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। যারা এ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন তাদেরকেও দেশ থেকে বিতাড়িত করার হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প। আন্দোলনকারীদের ‘হামাসপন্থি’ বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যও করেছেন তিনি।

ট্রাম্পের এসব হিংস্রতার প্রমাণ আরও আগেই মিলেছে। ২০২০ সালে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সময় তিনি সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি।

কমলা হ্যারিস ‘খারাপের মধ্যে ভালো’

ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও যে খুব ভালো ব্যাপারটা তা নয়। তিনিও গাজায় গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এমনকি ইসরাইলকে অংশীদারিত্বে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সভাপতিত্ব করেছেন তিনি। তবে কমলা হ্যারিসের নীতি হয়তো ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এতটা হিংস্র হবে না।

গাজা যুদ্ধ মূলত জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকতেই শুরু হয়েছে। আর কমলা হ্যারিস তার ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেই হিসেবে বলা যায়, কমলা হ্যারিসও ইসরাইলের এই বর্বরতা থামাতে তেমন একটা ভূমিকা রাখবে না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প্রের অবস্থান ও হিংস্রতা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। জেনেশুনে এমন একজন লোককে ভোট দেবে না যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিকরা।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

মিডল ইস্ট আইয়ে প্রকাশিত নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন সজীব হোসেন

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৩ নভেম্বর ২০২৪,/রাত ৯:৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit