এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালে জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দেশসেরা এ হাসপাতালে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। চিকিৎসাসেবায় ১৬ বার দেশসেরা পুরস্কার পাওয়া বর্তমানে অর্ধেকেরও কম জনবল দিয়ে চলছে এই হাসপাতালের কার্যক্রম। যার ফলে মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের মোট চিকিৎসকেরপদ রয়েছে ৩২টি। খাতাকলমে কর্মরত দেখানো হচ্ছে ১৬ জন চিকিৎসককে। কিন্তু এই ১৬ জনের ৩ জন দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। সংযুক্তিতে রয়েছেন আরও ৬ জন চিকিৎসক। বাকি ৭ জনের ২ জন প্রশাসনিক পদে কর্মরত। বর্তমানে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে দেশসেরা এই মডেল হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।
তৎকালিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লাকি ৩০ অক্টোবর বদলিজনিত কারণে চলে গেছেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে। এই পদে ২৯ অক্টোবর যোগদান করেছেন ডাঃ আহাসানুল মিজান রুমি। মেডিকেল অফিসার মৃদুল কান্তি ২০১৪ সাল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া ২০২২ সাল থেকে মেডিকেল অফিসার সায়মা নাহিদ শান্তা এবং (অর্থপেডিক) গোলাম রসুল কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লাকি জানান তারাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তারা আর দেশে ফিরে আসবেন না।
মেডিকেল অফিসার (সার্জারি) মির্জা বনি আমিন ১৫ অক্টোবর যোগদান করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেষণে রয়েছেন। ২৫ অক্টোবর মেডিকেল অফিসার সানজানা রহমান যোগদান করে ঢাকা মেডিকেলে প্রেষণে গেছেন। শিশু বিশেষাজ্ঞ ডাঃ আব্দুস সামাদ, রবিউল ইসলাম, তানভির হাসান, ইয়াছির আরাফাত আগে থেকেই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেষনে রয়েছেন। নতুন দুইজন যোগদান করেই ক্ষমতাবলে প্রেষনে যাওয়াতে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে।
রবিবার (৩ নভেম্বর) হাসপাতালে খাতা-কলমে অত্যন্ত জরুরি অ্যানেসথেসিয়া, শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকলেও বাস্তবে তারা নেই। এছাড়া গাইনিসহ ১৬ জন মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী, এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয় এবং আয়াসহ এসব তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোর মধ্যে ৬৩টি রয়েছে শূন্য। যে কারণে বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বিগত দিনে চৌগাছা মডেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ইমদাদুল হকের চেষ্টায় অন্তঃসত্ত্বাদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন। মা ও প্রসূতিসেবায় অবদান রাখার ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এটি উপজেলা পর্যায়ে একটানা দেশসেরা হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৮ সালেও হাসপাতালটি অর্জন করে জাতীয় পুরস্কার। সর্বশেষস্বাস্থ্যসেবায় সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করে পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০২০।
স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছথেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পুরস্কার গ্রহণ করেন সদ্য বিদায়ী টিএইচ এফপিও লুৎফুন নাহার লাকী। চৌগাছা মডেল হাসপাতাল ২০২২-২৩ এর প্রথম পুরস্কার বিজয়ী হবে আশা করেন তিনি। বর্তমানে হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় দেশ সেরা এই মডেল হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন।
চৌগাছা উপজেলার কয়ারপাড়া আবু কালাম বুড়িন্দিয়া এলাকার সখি খাতুন, মাঠচাকলা গ্রামের রহিমা বেগমসহ অনেকেই জানান, এখানে জরুরি মুহূর্তে সেবা পাওয়া কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুপুর আড়াইটার পর অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে সামান্য সমস্যায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকে। দেশসেরা হাসপাতালে আগের মতো চিকিৎসাসেবা নেই বলে তারা দাবী করেন।
হাসপাতালের সাবেক স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লাকি বলেন, লোকবলের শূণ্যতা পুরনের জন্য অনলাইনে সফট কপি এবং হার্ডকপি উভয় প্রক্রিয়ায় আবেদন করা হয়েছে। হাসপাতালের সদ্য যোগদানকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসানুল মিজান রুমি বলেন, মাত্র পাঁচদিন হয়েছে এই হাসপাতালে যোগদান করেছি। অর্ধেক ফিজিশিয়ান নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। মোট লোকবল ২১০ জন। এরমধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১২০ জন, ফাঁকা রয়েছে ৯০ জন।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা.মাহমুদুল হাসান বলেন, চৌগাছার বিষয়টি আমার নজরে আছে। চেষ্টা চলছে লোকবল বাড়ানোর জন্য। তারপরেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতভাগ পদ পুরন করা সম্ভব হবেনা।
কিউএনবি/আয়শা/০৩ নভেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৫:২৩