স্পোর্টস ডেস্ক : ২০২২ এর নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। দুই বছর পর আরো একটি সাফের ফাইনালের মঞ্চে দাড়িঁয়ে বাংলার বাঘিনীরা। ছেলেদের ফুটবল যেখানে দীর্ঘদিন কোনো সাফল্য এনে দিতে ব্যর্থ, তখন মেয়েরাই দেশের ফুটবলকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। বিনিময়ে অবশ্য ঠিকঠাক বেতনও পাননা। এখনো বকেয়া তিন মাসের বেতন-ভাতা। এরপরও নারী ফুটবলাররা মাঠে নিজেদের শতভাগ ঢেলে দিচ্ছেন সকল বঞ্চনা বুকে পুষে।
অদম্য এই নারী ফুটবলাররা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, কুসংস্কার কিংবা আর্থিক বৈষম্য; সব প্রতিকূলতা জয় করে তিল তিল করে বাড়িয়ে চলেছেন স্বপ্নের পরিধি। সাবিনা-সানজিদা, কৃষ্ণা-ঋতুপর্ণারা পরিচিত হয়েছেন সাহসী-সংগ্রামী নারী হিসেবে। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে পথ দেখানো তারকা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন।
তবে এই নারীদের হাত ধরে আসা শ্রেষ্ঠত্বের সাথে মিশে আছে বিষাদের গল্প। যে গল্পের সারসংক্ষেপ লিখে গত সাফের ফাইনালের আগে ছাদখোলা বাসে উদযাপনের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন সানজিদা আক্তার। এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ফুটবলে কেউ এসেছেন বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, কেউ বোনের অলংকার বিক্রি করে, কেউবা আবার পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।
এবার কেউ ফেসবুকে পোস্ট না দিলে কিংবা কিছু না চাইলেও দেশের হয়ে সুনাম বয়ে আনা মেয়েরা কী পাবে কোন সংবর্ধনা? যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাফের ফাইনালে উঠা মেয়েদের উৎসাহ দিতে ক্রীড়া জগতের কাউকেই সেভাবে সবর পাওয়া যায়নি। শুধু দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফের নবনির্বাচিত সভাপতি তাবিথ আউয়াল মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আবারও দেখছি শিরোপার স্বপ্ন! সাফ নারী ফুটবল ২০২৪ এর প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। অভিনন্দন আমাদের বাঘিনীদের, অভিনন্দন দলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। ফুটবল মাঠে আমাদের নারী দলের এই জয়রথ ফাইনালেও অব্যাহত থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।’
দেশের জনপ্রিয়তম খেলা ক্রিকেটে ছেলেরা কোনো সিরিজ জিতলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও অভিনন্দন বার্তা আসে। ঘোষণা করা হয় বোনাস পর্যন্ত। এইতো কিছুদিন আগে পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করে আসা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে কত মাতামাতি হলো। অভিনন্দন বার্তার জোয়ার বয়ে গিয়েছিল সে সময়। সিরিজজয়ী টাইগারদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন স্বয়ং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ক্রিকেটারদের হাতে বোনাস তুলে দিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। অথচ টানা দ্বিতীয়বার দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠা নারী ফুটবল দলকে নিয়ে সেভাবে মাতামাতি নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ বিষয়ে নীরবতা দেখা যাচ্ছে।
আগামী ৩০ অক্টোবর সাফের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই নেপালেই ২০২২ সালে ইতিহাস গড়েছিল সাবিনা-সানজিদারা। আরও একবার ইতিহাস গড়ার দোরগোড়ায় বাংলার বাঘিনীরা। জীবনের প্রতিকূলতা জয় করে এরই মধ্যে বিজয়ীর মঞ্চে তারা। ফুটবলের মঞ্চও জয় করার অপেক্ষায় থাকা এই নারীদের বরণ করে নেয়া হবে যথাযথ মর্যাদায়? নাকি অবহেলায় অগোচরেই লেখা হবে সাফল্যগাঁথা?
কিউএনবি/আয়শা/২৮ অক্টোবর ২০২৪,/বিকাল ৩:৫০