ডেস্ক নিউজ : ইসলামে বিনয় ও নম্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিয় নবী (সা.) এই গুণের এক উজ্জ্বল উদাহরণ ছিলেন। তার বিনয়ী আচরণ মানুষের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলত এবং ইসলামের বাণীকে ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম ছিল।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে…।’ (সুরা ফুরকান ৬৩) এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিনয় ও নম্রতা। মহান আল্লাহ বান্দার চলাফেরার মধ্যেও বিনয় দেখতে চান, যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা ও মর্যাদাশালী করে তোলে।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনেও এই গুণ ছিল অতুলনীয়। তিনি সবসময় মানুষের সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতেন, তাদের পাশে দাঁড়াতেন। কখনো অহংকার করতেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় রসুল (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি বিনম্র থেকেছেন।
আপনি যদি কর্কশ ও কঠোর মনের হতেন তাহলে এরা সকলে আপনার চারপাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ত…।’ (সুরা আলে ইমরান ১৫৯) এই আয়াত রসুলের (সা.) বিনয়ী স্বভাব এবং তার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
বিনয় একজন মুমিনের জন্য অপরিহার্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘ঈমানদার হয় সরল ও ভদ্র। পক্ষান্তরে পাপী হয় ধূর্ত ও হীন চরিত্রের।’ (আবু দাউদ: ৪৭৯০) এই হাদিসে বিনয়ের গুরুত্ব এবং পাপী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বিনয়ী বান্দাদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন, ‘রহমানের বান্দা তারা, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞলোক যখন তাদের লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।’ (সূরা ফুরকান: ৬৩) এই আয়াত বিনয়ী ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং আল্লাহর নিকট তাদের বিশেষ মর্যাদার কথা প্রকাশ করে। হজরত উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিনয়ী হয়, আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদা উঁচু করেন। ফলে সে নিজের চোখে ও নিজের ধারণায় ছোট হয়।
কিন্তু মানুষের দৃষ্টিতে সে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। আর যে অহংকার করে, আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদা নিচু করে দেন। ফলে সে মানুষের চোখে ছোট হয়ে যায়, যদিও সে নিজের ধারণায় বড় হয়। এমনকি সে মানুষের দৃষ্টিতে কুকুর ও শূকরের চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যায়।’ (শোয়াবুল ইমান : ৭৭৯০) এই হাদিসে বিনয়ী হওয়া এবং অহংকারের পরিণতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
আরেকটি হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদমসন্তানের মাথার পেছনে একজন বিশেষ ফেরেশতা থাকেন। তার হাতে থাকে একটি ‘হাকামাহ’ নামের বিশেষ বস্তু। যখনই বান্দা বিনয় অবলম্বন করে, তখন ওই ফেরেশতাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়, হাকামাহ উঠাও। অর্থাৎ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। আর যখনই বান্দা অহংকার করে, তখন বলা হয় হাকামাহ ছেড়ে দাও। অর্থাৎ তাকে অপমানিত করো।’ (সিলসিলাহ সহিহা: ৫৩৫)
বিনয় ও নম্রতা শুধু একটি নৈতিক গুণ নয়, এটি একজন মুমিনের চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ তাআলা বিনয়ী বান্দাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। অহংকারীকে অপমানিত করেন। আমাদের উচিত রসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন থেকে এই গুণ শিখে নিজেদের জীবনকে বিনয়ী এবং নম্রতার আদর্শে গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিনয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন।
কিউএনবি/আয়শা/২৩ অক্টোবর ২০২৪,/রাত ৮:৩৪