রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

সমাজে পাপাচারের ভয়াবহ প্রভাব

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৫৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : একটি সুস্থ সমাজ নষ্ট হওয়ার জন্য ব্যভিচারের মতো অপরাধ যথেষ্ট। একটি সুন্দর সাজানো বাগান ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্য সামাজিক এই ব্যাধি যথেষ্ট। তাই আল্লাহ তাআলা ব্যভিচার হারাম করেছেন। এমনকি যেসব কাজ মানুষকে ব্যভিচারের কাছে নিয়ে যায়, তা থেকেও কঠোরভাবে বারণ করেছেন।

আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। তা একটি অশ্লীল কাজ এবং খারাপ পন্থা।’
(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)

আমাদের সমাজব্যবস্থা ক্রমেই অসামাজিক সমাজের দিকে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া অনলাইন প্ল্যাটফরমে বিভিন্ন ধরনের অডিও, ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

আর শয়তান আমাদের সেই কাজে নানাভাবে মদদ দিচ্ছে। কোরআনে তাদের ব্যাপারে কঠিন শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্মরণ রেখো, যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হোক এটা কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’

(সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)

আমরা নিজের অজান্তে বা অনেকে জেনেশুনেই নিজের দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস করছি।

অপরাধে কিছু গোপনে হয়, আর কিছু প্রকাশ্যে। অপরাধ যেভাবেই করুক না কেন, তার কুফল সে ভোগ করবে। তবে প্রকাশ্যে যে অপরাধ করা হয় তার ভয়াবহতা আরো মারাত্মক, তার প্রভাব সমাজে বড়ই ক্ষতিকর। আল্লাহ তাআলা যেকোনো ধরনের অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য আদেশ করেছেন। কারণ অশ্লীলতা মানুষকে ধীরে ধীরে ব্যভিচারের দিকে আহ্বান করে।

আর এই ব্যভিচারের ভয়াবহতার কারণে আল্লাহ তাআলা এর জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘(অবিবাহিত) ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিণী নারী উভয়কে ১০০ করে বেত্রাঘাত করো।’

(সুরা : আন নুর, আয়াত : ২)

দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়

যে সমাজে ব্যভিচার ব্যাপক আকার লাভ করে সেখানেই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অনাবৃষ্টি, পানিশূন্যতা, ফল-ফলাদি কমে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গের উপদ্রব বেড়ে যাওয়া, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে থাকে। আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, আমি শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে জাতির মধ্যে ব্যভিচার ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করিবে, সেই জাতি দুর্ভিক্ষ ও অভাব-অনটনে পতিত হইবে। আর যেই জাতির মধ্যে ঘুষের (উৎকাচ) প্রচলন হইবে সেই জাতিকে ভীরুতা ও কাপুরুষতায় গ্রাস করিবে।’

(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩৫৮২)

মানসিক প্রশান্তি দূর হয়ে যায়

যারা পাপাচারে অভ্যস্ত তাদের অন্তরে সর্বদা অশান্তি বিরাজ করে। সে যেখানেই যায় সে অশান্তি নিয়ে বসবাস করে। তার হৃদয় রাজ্য পাপের কারণে সব সময় হাহাকার করতে থাকে। আত্মার প্রশান্তি কী জিনিস, সে তা ভুলতে শুরু করে। তার ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা ছেয়ে যায়। বিবেক তাকে অপরাধী হিসেবে প্রতি মুহূর্তে দংশন করতে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ এক জনবসতির দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, যা ছিল নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ। চতুর্দিক থেকে তার জীবিকা চলে আসত পর্যাপ্ত পরিমাণে। অতঃপর তারা আল্লাহর নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা শুরু করে দিল। ফলে আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের ক্ষুধা ও ভীতির পোশাক আস্বাদন করালেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১১২)

মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়

যে সমাজে ব্যভিচার বেড়ে যায় সেখানে মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে জাতির মধ্যে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (গনিমত) আত্মসাৎ করার প্রবণতা দেখা দেয়, সে জাতির অন্তরে আল্লাহ তাআলা ভয়ভীতি ও কাপুরুষতা সৃষ্টি করে দেন। যে জাতির মধ্যে যিনা-ব্যভিচারের বিস্তার ঘটে, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। যে জাতি ওজন-পরিমাপে ফাঁকি দেয় তাদের রিজিক কমতে থাকে। আর যে জাতি (বিচারের বেলায় মীমাংসার ক্ষেত্রে) অন্যায় রায় দেয়, তাদের মধ্যে বিবাদ-বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, রক্তপাত ও খুনখারাবি বৃদ্ধি পায়। যে জাতি চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাদের ওপর শত্রুদের বিজয়ী করে দেওয়া হয়।

(মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, হাদিস : ৮৬৪)

অন্তর কঠোর হয়ে যায়

ব্যভিচারের কারণে ধীরে ধীরে একজন মানুষের অন্তর কঠিন ও কঠোর হয়ে যায়। তার হৃদয়ে কোনো উপদেশ বাণী প্রভাব ফেলে না। আর আল্লাহ তাআলা প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত থাকা ব্যক্তির অন্তরকে কঠোর করে দেন। ফলে তার অন্তর মরে যায়, ভালো জিনিস কল্পনা করতে পারে না। আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত থাকেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটা সেই মরিচা, আল্লাহ তাআলা যার বর্ণনা করেছেন—‘কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে।’

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৩৪)

কিউএনবি/অনিমা/১০ অক্টোবর ২০২৪,/রাত ১০:৪২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit