ডেস্ক নিউজ : তিনি এক বয়ানে বলেন, মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি হাদিসে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, প্রতিদিন সকালে মানুষের শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জবানকে সম্বোধন করে বলে, হে জবান! তুমি আল্লাহকে ভয় কর, কেননা আমরা তোমার অধীন।
যদি তুমি সঠিক থাক, আমরাও সঠিক থাকব, আর তুমি যদি পথভ্রষ্ট হও, আমরাও পথভ্রষ্ট হবো। আর যদি তুমি বাঁকা হয়ে যাও তাহলে, আমরাও বাঁকা হয়ে যাবে। অর্থাৎ মানুষের পূর্ণ শরীর জবানের অধীন। কাজেই যদি জবান গােনাহের কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে এর ফলশ্রুতিতে পূর্ণ শরীর পাপাচারে ডুবে যাবে। এ কারণেই সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যবানকে বলে যে, তুমি ঠিক। থেকো, অন্যথায় তােমার অন্যায় কাজের ফলে আমরাও মুসিবতে পড়ে যাবাে।
এখন প্রশ্ন হলাে, সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কীভাবে জবানকে সম্বােধন করে? এর উত্তর হলাে, হতে পারে সত্যি সত্যিই যবানকে বলে থাকে, আল্লাহ পাক সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বাক শক্তি দান করে থাকেন, যার। ফলে তারা জবানের সাথে কথা বলে থাকে। কেননা জবানকেও বাকশক্তি আল্লাহ পাকই দান করেছেন, আর কিয়ামতের দিন সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আল্লাহ পাকই বাকশক্তি দান করবেন। কাজেই এখনও বাকশক্তি দান করাটা আল্লাহ পাকের জন্য কোনো কঠিন কাজ নয়।
কিয়ামতের দিন সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কথা বলবে। আগেকার দিনে এক সময় নেচারিয়্যাত তথা প্রকৃতিবাদের খুব জোর ছিল। আর এ প্রকৃতিবাদের প্রবক্তা ও অনুসারীগণ মুজিযা বা কারামত ইত্যাদির অস্বীকার করতাে, আর বলতাে, এগুলােতাে ফিত তথা স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থি। এগুলাে কীভাবে সম্ভব হতে পারে? এ ধরনের এক ব্যক্তি হজরত থানভী রহ. এর নিকট প্রশ্ন করলাে, কুরআন শরিফে যে বর্ণিত হয়েছে, কিয়ামতের দিন এ হাত, পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সাক্ষ্য দিবে, এ কীভাবে সম্ভব হবে। এগুলাের তাে জবান নেই? জবান ছাড়া কীভাবে কথা বলবে?
এর উত্তর দেওয়ার পূর্বে হজরত থানভী রহ. পালটা, ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, জবানের জন্য ভিন্ন দ্বিতীয় আরেকটি জবান নেই। তাহলে, সে কীভাবে কথা বলে? যবানতাে একটি গোশতের টুকরা বৈ নয়? তার জন্য ভিন্ন। কোনো যান নেই, তা সত্ত্বেও সে সুবর্ণা বলেই যাচ্ছে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, যখন আল্লাহ পাক গােন্তের একটি টুকরাকে বাক শক্তিদান করেছেন, যার ফলে এ গোশতের টুকরাও কথা বলতে সক্ষম হচ্ছে, কিন্তু যদি আল্লাহ পাক এর বাক শক্তি ছিনিয়ে নেন, তাহলে এর কথাবার্তা বলাও বন্দ হয়ে যাবে।
কাজেই এ বাক শক্তিই যখন আল্লাহু আপন ঘর বাঁচান পাক হাত-পা বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে দান করবেন তখন তারাও কথা বলতে আরম্ভ করবে। মােটকথা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা বলাটা হাকিকতও হতে পারে যে, সত্যি সত্যিই সকালে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যবানকে উদ্দেশ্য করে কথা বলে থাকে।
আর রূপকার্থেও ব্যবহার হতে পারে যে, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেহেতু জবানের অধীন, কাজেই জবানকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং একে সহিহু রাখার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা চালাতে হবে।মােটকথা জবানের হিফাজত করা অত্যন্ত জরুরি। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এঁকে নিয়ন্ত্রণ না করবে এবং একে গােনাহু থেকে বিরত না। রাখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সফলকাম হতে পারবে না। আল্লাহ পাক আমাদেরকে জবানের হিফাজত করার এবং একে সহজভাবে ব্যবহার করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
কিউএনবি/আয়শা/১০ অক্টোবর ২০২৪,/রাত ৯:২৫