রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

পানাহারের ইসলামী নীতি ও শিষ্টাচার

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : আল্লাহ তাআলার দেওয়া বড় নিয়ামত খাদ্য। সুস্থ-সবল শরীরে আল্লাহর ইবাদত করার উদ্দেশ্যে সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। কোরআনে পবিত্র ও হালাল খাদ্য গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! আহার করো আমি তোমাদের যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর শোকর কর, যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাক।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২) 

পানাহারের আরেকটি মূলনীতি হলো, প্রয়োজনমতো খাওয়া; কিন্তু অপচয় না করা। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) খানার সুন্নাত তরিকা ও আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে। এর ফলে খাবার ইবাদতে পরিণত হয়। নিচে খাবার গ্রহণের ইসলামী পদ্ধতি তুলে ধরা হলো—

খাওয়ার আগে হাত ধোয়া সুন্নাত

খাওয়ার আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা সুন্নাত। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানেও এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা রোগ জীবাণু থেকে বাঁচার বড় একটি মাধ্যম। সালমান (রা.) থেকে বলেন, আমি তাওরাতে পড়েছি, খাদ্যের বরকত হল এর পরে অজু করা। নবী কারিম (সা.)-এর কাছে আমি এ কথা আলোচনা করলাম এবং তাওরাতে যা পড়েছি এর উল্লেখ করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খানার বরকত হলো, এর আগে এবং পরে অজু করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৪৬; আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭১৯)

খাওয়ার সুন্নাত তিনটি—

এক. খাওয়া-দাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। পূর্ণ বাক্যটিও বলা যায়। 

দুই. ডান হাতে খাওয়া সুন্নাত। এটা মুসলিমদের একটি বৈশিষ্ট্য। 

তিন. সম্মিলিত খানা খাওয়ার সময় প্রত্যেকে যার যার সম্মুখ থেকে খাওয়া সুন্নাত। উমর ইবনে আবু সালামা (রা.) বলেন, আমি ছোট ছেলে হিসাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করতো। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, হে বত্স! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার করো এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করতাম। যার যার কাছ থেকে আহার করা। আনাস (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা) বলেছেন, তোমরা বিসমিল্লাহ বলবে এবং প্রত্যেকে তার কাছ থেকে আহার করবে। (বুখারি, হাদিস : ৪৯৮৪)

দোয়া পড়া/না পড়া

খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্র বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়াখিরাহু পড়তে হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭২৫) 

দোয়া না পরে খাওয়া শুরু করলে শয়তান খাদ্যে শরিক হয়। খাবারের বরকত নষ্ট হয়ে যায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭২৩)

খাওয়ার সর্বোত্তম বৈঠক

খাওয়ার সর্বোত্তম বৈঠক পদ্ধতি হলো এমনভাবে বসা যেন খাবারের সম্মান রক্ষা হয়। বিনয় প্রকাশ পায়। কোনভাবেই অহংকার এবং খাবারের প্রতি অবজ্ঞা যেন প্রদর্শিত না হয়। সুতরাং খানার সময় তিন পদ্ধতিতে বসা যায়—

এক. উভয় হাঁটু উঠিয়ে এবং পদ যুগলে ভর করে। (মুসলিম, হাদিস : ৫১৫৯ ) 

দুই. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে। (শরহুস সুন্নাহ, হাদিস: ৩৫৭৭) 

তিন. উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাৎ নামাজে বসার ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে আহার করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৩১) 
ওজরের কারণে অন্যভাবে বসা অথবা একটু আরাম করে বসার ইচ্ছায় চার জানু হয়ে বসা যেতে পারে।

খাওয়ার সময় কথা বলা

অনেকের ধারণা খাওয়ার সময় কথা বলা জায়েজ নেই। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি কথা। আহার করার সময় প্রয়োজনীয় কথা বলা যায়। এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল থেকে প্রমাণিত। হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, আহারের মধ্যে কোনো গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা না হওয়া চাই। সাধারণ কথা হলে ক্ষতি নেই। কেননা খাবারেরও হক আছে। তাই একেবারে চুপচাপ না থেকে দু-চারটা আনন্দদায়ক ও হালাল বিনোদনমূলক কথা বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে খেজুরে আলাপ কাম্য নয়। আবার অনেকে ধারণা করে খাবার সময় সালাম দেওয়া ঠিক নয়। এটাও একটি ভিত্তিহীন কথা। খাবারের সময় সালাম আদান-প্রদান করতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। অবশ্য যদি কারো মুখের মধ্যে খাবার থাকে তাহলে তাকে সালাম না দেওয়া ভালো। খাবারের সময় কোনো মেহমান এসে সালাম দিলে তাকেও খাদ্যে শরিক রাখা যায়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৯২)

আঙ্গুল চেটে খাওয়া সুন্নাত

খাবার শেষে আঙ্গুল চেটে খাওয়া সুন্নাত। মহানবী (সা.) প্রথমে মধ্যমা তারপরে তর্জনী এবং সবশেষ বৃদ্ধাঙ্গুলির চেটে খেতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো খাবার খেতেন তখন তাঁর আঙ্গুল তিনটি চেটে নিতেন এবং তিনি বলেছেন, যদি তোমাদের কারো লুকমা পড়ে যায় তবে সে যেন তা থেকে ময়লা দূর করে এর খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে, শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। আর তিনি আমাদের বাসন মুছে খেতে আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, কেননা তোমরা জান না, তোমাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে। (মুসলিম, হাদিস : ৫১৩৪)

খাওয়ার শেষে দোয়া পড়া

খাবার শেষে দোয়া পাঠ করা সুন্নাত। আবু সাঈদ খুদরি  (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) খানা খাওয়ার পর এরূপ দোয়া পড়তেন—‘আলহামদু-লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াসাকানা ওয়াজা আলানা মুসলিমিন ।’ 

অর্থ : সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের খাওয়ালেন। পান করালেন এবং আমাদের তার অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮০৬)

লেখক : খতিব ও মাদ্রাসা শিক্ষক

রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।

কিউএনবি/অনিমা/০৭ অক্টোবর ২০২৪,/রাত ১০:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit