শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

দেশে ফিরে কর্মফল ভোগ করুন, শেখ হাসিনাকে জামায়াতের আমির

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৯৫ Time View

ডেস্ক নিউজ :  সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আপনি বলেন চট করে দেশে ঢুকে পড়বেন, আপনাকে পালাতে বলেছিল কে? আপনি সব সময় বলতেন দেশের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন, বিচারকরা স্বাধীন। পালিয়ে না গিয়ে দেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি হতে পারতেন।

দেশে ফিরুন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়ে নিজের কর্মের ফল ভোগ করুন। ’শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের দারুল ইসলামী একাডেমী মাঠে সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতার উষালগ্নে ঘোষণা দিয়েছি, আমরা প্রতিশোধ নেব না, প্রতিশোধ নেওয়ার মানে হলো আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া।
আইন যেখানেই হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে সেখানেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। প্রতিশোধ প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। আমরা চাই এই নোংরা কাজের এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটুক। তবে ন্যায় ও ইনসাফের দাবি হচ্ছে যিনি অপরাধ করেছেন, নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শাস্তি পেতে হবে। যদি সে আইনের শাসন বাংলাদেশে কায়েম হয়, তবে আগামীর বাংলাদেশ আর পথ হারাবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার রাস্তায় উঠেছে, গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতে থাকুক। কোনো অপশক্তি যদি বাংলাদেশকে এই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত তাদের প্রতিহত করবে। এই সময় জাতীয় ঐক্যের বড়ই প্রয়োজন।

জাতির মৌলিক ইস্যুতে সবাইকে এক থাকতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রয়োজনীয় সমালোচনা করতে হবে। আবার সঙ্গে সঙ্গে এই সরকার যাতে সংস্কারের কাজগুলো করতে পারে তার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করতে হবে। সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলার মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো, লাখ লাখ মানুষকে খুন করে বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করলো। বাংলাদেশে একটি মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়লো। সেই যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন হলো। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষ সুবিচার, সুশাসন আশা করেছিল। কিন্তু জনগণের সমস্ত আশায় গুড়েবালি। সবকিছুকে ব্যর্থ করে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে লুট আর খুনের রাজত্ব কায়েম হলো।

স্বাধীনতা আরেকবার হারিয়ে গেল। সেই গহ্বর থেকে বাংলাদেশ উঠে আসতে পারেনি। বিগত সাড়ে ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বলে নিজেরাই ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কিসের বিনিময়ে? জাতির রক্ত চুষে নেওয়ার বিনিময়ে, সব দলকে কোণঠাসা করে আবার একদলীয় বাকশাল কায়েম করার বিনিময়ে। এ কারণে জনগণের মনে খুব যন্ত্রণা ও কষ্ট ছিল।  

সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর। এক থেকে এগারো শীর্ষ দায়িত্বশীল নেতাদের জুডিসিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, জেলের ভেতরে তাদের তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারাই করেছেন, তাদের ওপর গোলাবারুদ নেমে এসেছে। শত শত সাথী-সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জেলায় সারি সারি লাশ আর রক্ত তারা জাতিকে উপহার দিয়েছে।

আমরা বারবার আন্দোলন করেছি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি, এই অপশক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করেছি। তার পুঞ্জীভূত ফল হচ্ছে ছাত্র-জনতার একটি অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত স্বৈরশাসককে বিদায় নিতে হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের দায়িত্বশীল নেতা যাদের অন্যায়, অযৌক্তিক অভিযোগ দায়ের করে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে তাদের কেউ পালিয়ে যাননি এবং পালিয়ে যাওয়ার জন্য এক সেকেন্ডও চেষ্টা করেননি। কারণ আমাদের কোনো মামার দেশ নেই, মাসির দেশ নেই, দাদার দেশ নেই। আল্লাহ এখানে জন্ম দিয়েছেন, এই দেশকে বুকে আগলে ধরেই বেঁচে থাকতে চাই। এ দেশের সুখ-শান্তির সঙ্গে আমাদের অন্তরের সম্পর্ক মিশে আছে।  

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক মজলুম দলগুলোর বিরুদ্ধে আপনাদেরও কলম চলেছে। অনেকেই বলেন চাপের কাছে আমরা অসহায় ছিলাম। আর শাসকরা বরাবরই বলেছে মিডিয়া স্বাধীন। কতটুকু স্বাধীন সেটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা সেই স্বাধীনতার ফল দেখতে পারি নাই। এ জন্য আপনাদের দায়ী করবো না এবং অতিতেও ফিরে যাবো না। এখন আপনারা মুক্ত, আমরা দাবি করবো আপনারা যাতে আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারেন।  

জামায়াতরে আমির আরও বলেন, আমরাই শুধু মজলুম ছিলাম না, বিএনপি ছিল অন্যান্য সংগঠনও ছিল। এমনকি রাস্তার ভিক্ষুকও তাদের জুলুম থেকে রক্ষা পায়নি। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এমন রাজনীতি কেন করতে হবে, যে রাজনীতি করার পর আপনাকে পালানোর রাস্তা খুঁজতে হবে, সীমান্তে গিয়ে কলাপাতায় ঘুমোতে হবে। দিনশেষে আপনি যাতে সম্মানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন এমন রাজনীতি করা উচিত ছিল।  

জেলা জামায়াতের আমির মওলানা অধ্যক্ষ শাহীনুর আলমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সুরা সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, পাবনা জেলার আমির মো. আবু তালেব মণ্ডল, কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আলী আলম ও মওলানা আব্দুস সালাম।  

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/রাত ৯:০৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit