ডেস্ক নিউজ : আবারও কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে দেশের নিট গার্মেন্টস শিল্পের প্রধান কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ। ৫ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল হওয়ার প্রথম দিনেই কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মী। ফতুল্লার বিসিক, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড, কাঁচপুর শিল্প এলাকাসহ আশপাশে ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র। তবে এই ৫ দিনের বন্ধে ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে ব্যাপক সহিংসতার পর বুধবার থেকে খুলতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রধান কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক নিট পল্লী ফের শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪শ গার্মেন্টস রয়েছে পুরো বিসিক ও আশপাশের এলাকায়। বন্ধ থাকার পর পুনরায় উৎপাদনের পালে হাওয়া লাগায় কর্মমূখর পরিবেশ কারখানাগুলোতে। জানা গেছে, দেশের নিট গার্মেন্টস শিল্পের প্রধান কেন্দ্র ফতুল্লা বিসিক নিট পল্লী ও আশপাশের চার শতাধিক পোশাক কারখানায় দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন। যাদের পদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো এলাকা।
বিসিকের কয়েকজন গার্মেন্টস মালিকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কোটা সংস্কারের আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের ভিড়ে দুর্বৃত্তরা অনুপ্রবেশ করে যে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল তা মোটেও কাম্য ছিল না। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে কারফিউ আর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে; কিন্তু এতে বন্ধ হয়ে যায় শিল্পের চাকা, ব্যাহত হয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বহির্বিশ্বের বায়ারদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। বুধবার ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার পর থেকে বিদেশি বায়ারদের প্রথম প্রশ্নই ছিল আমরা সময় মতো তাদের শিপমেন্ট দিতে পারবো কিনা? কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন সাগর পথেও মালামাল অন্য রুটে নিয়ে যেতে সময় বেশি লাগছে। কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিব তা যেমন চিন্তার বিষয়, তেমনি উৎপাদন পূরোদমে চালিয়ে রাখাটাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে কোটা আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিল্প মালিক তার চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ শ্রমিকরা। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের কারণে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। শ্রমিকরা ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, যে আন্দোলনে শ্রমিকের রুটি-রুজিতে ব্যাঘাত ঘটায়, সে আন্দোলন সমর্থন করেন না শ্রমিকরা। ফতুল্লা এলাকার পাওলা নিটওয়্যার নামের একটি রপ্তানিমূখী শিল্প কারখানার সুইং সেকশনের অপারেটর রায়হান কবির নামের এক শ্রমিক জানান, বিগত পাঁচ দিন ধরে কারখানা বন্ধ। আমি এই কারখানায় উৎপাদনের ভিত্তিতে (প্রোডাকশনে) আয়ে কাজ করি। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিগত দিনে কোনো কাজ করতে পারিনি। কাজ না করায় কোনো আয়ও হয়নি আমার। আয় না হলেও ব্যয় কিন্তু থেমে থাকেনি। তাই যে আন্দোলন শ্রমিকের রুটি-রুজিতে আঘাত করে সেই আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারি না।
ফতুল্লা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি কারখানার কিউসি সেকশনের রাইসা মণি নামের এক নারী শ্রমিক জানান, আন্দোলনের শুরুতে কয়েক দিন কারখানা খোলা ছিল। বাড়তি ভাড়া আর নানান ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়েও অফিসে আসতে হয়েছে। মাঝে বন্ধ থাকার পর আবার আজকে কাজ শুরু হলেও এখনো সড়কে পথে পথে আমাদের বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে। দেশের নিট গার্মেন্টস মালিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল যুগান্তরকে জানান, ফতুল্লার বিসিকে শতভাগ প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। প্রতিষ্ঠান খোলার সংবাদে শ্রমিকরা স্বত:স্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দিলেও সকালে যানবাহনের কমতির কারণে তারা আসতে পারেনি।
তিনি জানান, ৫ দিনে এ সেক্টরের মোট ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় তবে আমাদের মালিকানাধীন আর এস শিল্প গ্রুপের ক্ষতির পরিমাণ বললে অনুমান করা যাবে। তিনি বলেন, ৫ দিনে শ্রমিকদের মজুরি হিসাব করলেই আমার দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। কারণ উৎপাদন বন্ধ ছিল কিন্তু তারচেয়েও বড় ক্ষতি বায়াররা এই সহিংসতা আর তাণ্ডবে ভীত, আমরা সময়মতো শিপমেন্ট দিতে পারব কিনা। বাজারের প্রতিযোগিতায় আমাদের বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অন্য দেশের শিল্প মালিকরাও তৎপর রয়েছে। নানা দিক দিয়েই আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সন্দিহান।
কিউএনবি/আয়শা/২৪ জুলাই ২০২৪,/রাত ১০:১৮