সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

অর্থ উপার্জনে বাবা-ছেলে একই পথে, তাদের টার্গেট হিন্দু ধর্মালম্বী নারীদের উপর

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ।
  • Update Time : সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪
  • ৬৫ Time View

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটে এক সংখ্যালঘু পরিবারের গৃহবধূর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ও স্বর্নালোঙ্কার আত্মসাৎ করার পর তাকে গুম করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই গুমের সন্দেহের তীর লালমনিরহাট জেলা যুবলীগ নেতা সৈকত আহমেদ বাবুলের দিকে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা বাজার এলাকায়। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে গৃহবধূর স্বামী সুভাষ চন্দ্রের অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোকুন্ডা ইউনিয়নের বিট অফিসার ও লালমনিরহাট সদর থানার এসআই মিজানুর মিজান। সংখ্যালঘু গৃহবধূর বাবার বাড়ি জয়পুহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার মাঝিনা এলাকায়। তিনি ওই এলাকার উজ্জল মোহন্তের মেয়ে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে সুভাস সরকারের সাথে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মাঝিনা এলাকার উজ্জল মোহন্তের মেয়ে পলি রানি মোহন্তের সনাতন ধর্ম মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ফুট ফুটে দুটি পুত্র সন্তানও আছে। বড় ছেলের বয়স ১৩ বছর আর ছোট ছেলের বয়স ৭ বছর।

সুভাসের বাড়িতে আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সে  দির্ঘদিন থেকে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করে আসছে। এই সুযোগে তার স্ত্রীর সাথে বাবুল আহম্মেদের ছেলে মিয়াদ আহম্মদের পরকিয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই মধ্যে মিয়াদ সুভাসের স্ত্রী পলিকে মোটারী পাবলিক কার্যালয় কুড়িগ্রামে নিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত না করেই একটি বিয়ের নাটক সাজায় মিয়াদ। মুলত মিয়াদের মুল উদ্দেশ্য ছিল সুভাসের জমানো কিছু টাকা স্বর্নলংকারের উপর। এরপরেই প্রায় প্রতি রাতে মিয়াদ সুভাসের স্ত্রী পলির সাথে রাত্রিযাপন করার জন্য তার বাড়িতে যেত।

বিষয়টা সুভাসের মা বুঝতে পারলে প্রতিবাদ করে। কিন্তু ক্ষমতাধর বাবুলের ছেলে মিয়াদ বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি ধামকি দিলে তিনি ভয়ে কোন কিছুই বলতে পারেন না। পরে গোপনে বিষয়টি তার ছেলেকে জানায়। এরই মধ্যে গত শনিবার রাতে মিয়াদ সুভাসের বাড়িতে এলাকাবাসী তাকে আটকিয়ে রাখে। খবর শুনে মিয়াদের বাবা বাবুল দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তার ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এর দুইদিন পরে মিয়াদের কথায় সুভাসের স্ত্রী পলি কয়েক লক্ষ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্নলংকার নিয়ে ছেলেদের রেখে বাড়ি বাহির হয়ে নিখোঁজ হয়। যদিও সুচতুর মিয়াদ তার বাড়িতে সে নিজেকে উপস্থিত দেখায়। তবে পলিকে কোথায় রেখেছে মিয়াদ.? সে জীবিত আছে না কি মৃত তা এখন পর্যন্ত জানা যায় নি।

এরই মধ্যে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পরে। এর কিছুদিন পরে সুভাস ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। সুভাসের আসার বিষয় জানতে পেরে বাবুল ও ছেলে মিয়াদ সুভাসের সাথে দেখা করে এবং মামলা না করতে তাকে ভয়ভীতি দেখায়। বাবুল সুভাসকে বলে এবিষয়ে মামলা করলে তোকে এলাক ছাড়া করা হবে। এরপরেও সুভাস থানায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

সুভাসের মা বলেন, আজ ৭/৮ দিন হয়ে গেল এখন পর্যন্ত আমার ছেলের বউয়ের কোন খোঁজ নাই। এদিকে তার মাসুম দুই সন্তানকে নিয়ে আমি খুব সমস্যায় আছি। সারাক্ষণ তারা তার মায়ের খোজ করছে। আমার দুই নাতী তাদের মাকে ফিরে পেতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। তার ছেলের বউয়ের সন্ধান পেতে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে ২০২০ সালে সৈকত আহমেদ বাবুল তিস্তা বাজার এলাকার মন্টু দাসের মেয়ে রত্না দাসের সাথে প্রেমের গড়ে তোলে। রত্না দাসের কোন ভাই না থাকায় সুচতুর বাবুল এক সময় রত্না দাসের সম্পত্তি ভোগ করার জন্য ভুয়া এফিডেভিট বানিয়ে স্ত্রী দাবি করে আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যা পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমনিত হলে বিজ্ঞ আদালত  মামলাটি খারিজ করে দেন।

এতেও ক্ষান্ত হয় না ক্ষমতাধর বাবুল। পরবর্তীতে বাজারে থাকা রত্না দাসের দুইটি দোকান বায়না মুলে ক্রয় করেছেন বলে আবারও আদালতে আর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে রত্না দাস সংখ্যালঘুর উপর ক্ষমাতাধর যুবলীগ নেতা বাবুলের এই অত্যাচারের প্রতিকার চেয়ে স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া এফিডেভিটের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

রত্নার বাবা মন্টু দাস বলেন, আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় এবং আমাদের কোন লোকজন না থাকায় বাবুল আমাদের উপর খুবই অত্যাচার করতেছে। বিশেষ করে আমাদের এই জায়গার উপর তার মুল টার্গেট। সে আমার জায়গা দখলের জন্য আমার মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা রটনা রটিয়েছেন। মিথ্যা বিয়ের এফিডেভিট বানিয়েছেন,  স্বাক্ষর জাল করেছেন।  আমরা তার এসব নির্যাতনের প্রতিকার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, বাবুল ও বাবুলের ছেলে মিয়াদ কোন অপরাধ করলে তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার জীবনেও নির্যাতন সইতে হয়। তাদের বাবা ছেলের মুল টার্গেট হিন্দু ধর্মালম্বী নারীদের উপর। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের সাথে ভুয়া প্রেমের সম্পর্ক তৈরী করে সব লুট করে নিয়ে নেয়। পরে কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে মোবাইলে নোংরা ভিডিও দেখিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখায়। এজনই লোকলজ্জার ভয়ে পরে তারা মুখ বন্ধ করে রাখে।

এ বিষয়ে বাবুল জানান, পলি রানী ও তার স্বামী সুভাষ সরকারের থানায় করা অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। তারা স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির দারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে এসব করেছেন। তবে আমার পারিবারিক একটা ভাবমুর্তি রয়েছে যেগুলোকে তারা অন্যভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে । আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি আদালতের আশ্রয় নিব।

এ বিষয়ে সদর থানার এসআই মিজানুর মিজান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, বাবুলের  ছেলেকে বাসায় দেখা গেলেও গৃহবধূ পলিকে দেখা যায় নাই। শুনেছি তিনি না কি তার বাবার বাড়ি জয়পুরহাটে রয়েছেন।  এই ঘটনার ভিতরে অন্য কোন ঘটনা আছে কি না এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

 

কিউএনবি/আয়শা/০৮ জুলাই ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:২৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit