সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

পাঁচ ঘণ্টার পরীক্ষা তিন ঘণ্টায় শেষ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪
  • ১৪৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রমের ষাণ্মাসিক (অর্ধবার্ষিক) পরীক্ষার মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। বুধবার ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সদ্য চূড়ান্ত হওয়া নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয় পাঁচ ঘণ্টা। এর মধ্যে আধা ঘণ্টা বিরতি রাখা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা আগেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।

এ ছাড়া পরীক্ষার আগের রাতেই অনলাইনে প্রশ্ন পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী উত্তরপত্র লিখে নিয়ে যায়। আবার অনেকেই হলে গ্রুপ হয়ে আলোচনা করেই পরীক্ষা দিয়েছে। হলে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করে অনেক শিক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে শিক্ষকরা অনেকটাই নীরব ভূমিকায় ছিলেন। অতিরিক্ত পরীক্ষার সময় থাকায় অনেক শিক্ষার্থী আড্ডা দিয়ে সময় পার করেছে। পরীক্ষার প্রথম দিন এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মানসম্মত হয়নি শ্রেণিভিত্তিক প্রশ্নপত্র। তাই খাতায় অনেক সহজ বিষয়ে উত্তর দিতে হয়েছে। পরীক্ষাকে কঠিন মনে হয়নি। যদিও পরীক্ষার আগের রাতে ব্যাপক ভয়ের মধ্যে ছিল শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিলেন অভিভাবকরাও।

রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে বেশ উৎফুল­। তবে কেউ কেউ ছিল হতাশ।

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী পিয়াল বলে, পরীক্ষার নিয়মকানুন ও প্রশ্নপত্রের ধরন নিয়ে খুবই টেনশনে ছিলাম। রাত জেগে অনেক পড়াশোনা করেছি। কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে একদম সহজ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। সময়ও লেগেছে কম। মাত্র তিন ঘণ্টায় পরীক্ষা শেষ হয়েছে। 

একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাখওয়াত বলে, পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন এসেছে, যা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে লিখতে হয়। অনেকেই বিষয়গুলো ধরতে পারে না। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। 

বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জাহিন নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, আমরা যেসব কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা করে এসেছি, ওইসব বিষয় পরীক্ষায় আসেনি। বইয়ের ৩০ শতাংশ প্রশ্ন আমাদের কমন পড়েছে। বাকি প্রশ্নগুলো ধারণা করে লিখতে হয়েছে। তবে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর কেউ ইচ্ছা করলে তিন ঘণ্টা পড়াশোনা করে দিতে পারবে। আরও মানসম্মত প্রশ্ন করা উচিত। অনেকেই পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পেয়েছে। তারা উত্তরপত্র মোবাইল ফোনে নিয়ে এসে পরীক্ষা দিয়েছে। 

নুরুন নাহার নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি কেবল চূড়ান্ত হয়েছে। এখনো বিষয়গুলো বুঝে উঠতে পারছি না। প্রথমদিন সন্তানরা গ্রুপভিত্তিক আলোচনা করে পরীক্ষা দিয়েছে। এটা ভালো হয়েছে নাকি খারাপ, বলা মুশকিল। 

জেবল রহমান নামে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে পরীক্ষার টেনশনে সারা রাত ঘুমায়নি। পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হবে, এতে কী কী লিখতে হবে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সে। এই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে তারা হতাশ বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু  বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরীক্ষার সময় আরও কমিয়ে আনা দরকার। প্রশ্নপত্রের মান আরও বাড়াতে হবে। অতিসহজ প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলে জানান তিনি।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আ ন ম সামসুল আলম বলেন, নতুন মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একধরনের মানসিক চাপে ছিল। প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তারা। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা রক্ষায় শিক্ষকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে জানান তিনি। 

জানা যায়, এদিন সকাল ১০টা থেকে এ মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়ে, বিরতিসহ চলে পাঁচ ঘণ্টা। প্রথম দিনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলা, সপ্তমে ধর্ম, অষ্টমে জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণিতে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২০ হাজার ৬৩৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

দুই বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১ জুলাই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। তবে দেরিতে অনুমোদন হওয়ায় নতুন এ পদ্ধতি ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে পুরোপুরি প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে এনসিটিবি সূত্র। এনসিটিবির প্রস্তুত করা খসড়া মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বিষয় মূল্যায়নে সাতটি পর্যায় বা স্কেল রয়েছে। মূল্যায়নের পর্যায়গুলো হলো অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। সবচেয়ে যে ভালো করবে, সে ‘অনন্য’ পাবে। 

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, নতুন কারিকুলামের পরীক্ষার সময় পাঁচ ঘণ্টা রাখা হলেও সব শিক্ষার্থীর জন্য তা প্রযোজ্য নয়। অনেকে আগেই লিখে বের হয়ে যেতে পারবে। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন পাওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। তবে যারা অনলাইনে উত্তরপত্র লিখে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে, এটাই সমস্যা। এখন আমরা প্রশ্নপত্র আরও গোপনীয়ভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পাঠাব। তবে অনেক শিক্ষক তা না বুঝে ফেসবুকেও শেয়ার করছেন। এ ছাড়া কেউ হাতে পেলেই সে উত্তর করতে পারবে এমন না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। 

গত বছর দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। এতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হয়। চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।

 

কিউএনবি/অনিমা/০৩ জুলাই ২০২৪,/রাত ১০:৫১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit