এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের মহাব্যস্ততায় কাটছে দিন। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতি, কোরানিসহ লোহার হাতিয়ার তৈরিতে এখন ব্যস্তসময় পার করছেন স্থানীয় কামাররা। তারা ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রাত দিন এসব হাতিয়ার তৈরিতে নির্ঘুম সময় পার করছেন।
কোরবানির ঈদ আর মাত্র কয়েক দিন বাকি এ উপলক্ষে দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরির চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে, কামারদের কাজের ব্যস্ততাও বেড়েছে কয়েক গুণ। কাজের চাপ তাদের এতটাই বেড়ে গেছে যে, দম ফেলানোর সময় টুকুও নেই তাদের। উপজেলার খড়িঞ্চা গ্রামের ভজন কামার জানান, আসছে কুরবানির প্রাণী জবিহ, ঝুড়া ও কুটার জন্য দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরির চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই মানুষের পছন্দের এ সকল গোশত কাটার অস্ত্র তৈরীতে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।
একই গ্রামের সাধন কামার জানান, নতুন তৈরী প্রতিটি ধারালো দা কেজি প্রতি বিক্রয় হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়, আর পুরাতন দা ধার কাটাতে ১০০-১৫০ টাকা। কোরবানির ছুরি নতুন তৈরী প্রতিটি ৫০০-৯০০ টাকায়, পশুর হাড় কাটার জন্য চাপাতি প্রতি কেজি ৫০০ টাকায়, চামড়া ছাড়ানোর চাকু ২৫০-৩০০ টাকায়, কুদাল ৩০০ টাকা, কুড়াল-৪০০ টাকা, নারিকেল কোরানি ৪০০ টাকায়, গোশত কাটার বঁটি ৭০০ টাকায়, ছোট ছুরি-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়াও কৃষি উপকরণ ধানকাটার কাঁচি, নিড়ানি, হাসুয়া, লাঙ্গলের ফলাসহ অন্যান্য অস্ত্র বিক্রয় বেড়ে যায় এ মৌসুমে।
এ সময় কথা হয় কর্মব্যস্ত খোকন কামারের সাথে তিনি বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক কর্মকার সরাসরি এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের নিখুঁত কাজের সুনামের জন্য আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনও ছুটে আসেন চৌগাছায়। কামারদের পেশাগত আচরণও মুগ্ধ করে সবাইকে। শত পরিশ্রমের মধ্যেও হাঁসি মুখে কথা বলেন তারা। দেখা যায় ধাপার বাতাসে কয়লার ছায় উড়েসারা শরীর ডেকে গেছে। তার পরেও বিন্দু মাত্র ক্লান্তি নেই তাদের কর্মে।
উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের কয়েকজন কর্মকার জানান, এমনিতে সারা বছর কাজ কম থাকে। বছরের এ সময় লোহার চাপাতি-দা-বেশি তৈরী করতে হয়। হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে হাতিয়ার বানালেও দাম ভালো না পাওয়ায় লাভ কম হয়।
একই গ্রামের জগা কামার জানান, কোরবানির আগে কসাই, কৃষক ও সাধারণ মানুষ তাদের কাছে হাতিয়ার তৈরী ও কিনতে বেশি ভিড় করেন। এই সময়টাতেই যা কিছু রোজগার হয় বছরের বাকি সময় তেমন রোজগার নেই এ পেশায়।
অন্য দিকে বাজারে এখন আমদানিকৃত হাতিয়ার চলে আসায় কামারদের হাতিয়ারের চাহিদা অনেক কমে গেছে। এখন আর পূর্বপুরুষদের এ পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/০৯ জুন ২০২৪,/বিকাল ৫:৫৪