সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

ভারতে মোদি ম্যাজিকে ধাক্কা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০২৪
  • ৬৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে ১৫৫ আসনে জয় নিশ্চিত করে ১৩৭ আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। আর ১১৪ আসনে জয় নিশ্চিত ও ১২০ আসনে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, বামসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইনডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)। 

তবে ভোটগণনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ এবং ২০১৯-এর মতো এবার তার দল বিজেপি আর সংসদের নিম্নকক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ভোটের আগে প্রচারের শুরু থেকেই ‘আগলিবার ৪০০ পার’ স্লোগানে মেতেছিল বিজেপি।

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর শঙ্কায় বিজেপি বুথ ফেরত জরিপেও মোদির জোট বিপুল ব্যবধানে জিতবে বলে আভাস দিয়েছিল। ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছিল, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবার ৩৬১ থেকে ৪০১ আসনে জয়ী হতে চলেছে। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ‘ইনডিয়া’ পেতে পারে ১৩১ থেকে ১৬৬ আসন। এছাড়া অন্যান্য দল পাবে ৮ থেকে ২০টি আসন। কিন্তু বাস্তবে সেই জরিপের কোনো প্রমাণ মেলেনি। 

এবারের নির্বাচনের ফলে বিজেপিকে এককভাবে ২০০ আসনের ঘর পার করতেও বেশ কসরত করতে হচ্ছে। ৫৪৫ আসনের (দুটি মনোনীত আসনসহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি। এক্ষেত্রে বিজেপি একক ভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। অর্থাৎ, কেন্দ্রে সরকার গড়তে মোদিকে নির্ভর করতে হবে এনডিএর দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউর ওপর। 

বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, এনডিএ সম্মিলিতভাবে এগিয়ে রয়েছে ২৯২টি আসনে। যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বেশি। এ আসন সংখ্যা ধরে রাখতে পারলে তৃতীয় বার মোদির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হতে বাধা থাকার কথা নয়। কিন্তু ফলাফলের প্রবণতায় এনডিএর ঝুলিতে ২৯২ আসনের মধ্যে দুই ‘এন’ যথাক্রমে নাইডু এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দখলে যেতে চলেছে অন্তত ৩০টি আসন। 

এনডিএ থেকে ৩০ আসন কমে গেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবেন মোদি। তাই রাতারাতি দর বেড়ে গিয়েছে অন্ধ্রের নাইডুর। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, অন্ধ্রপ্রদেশে এই মুহূর্তে মোট ২৫টি আসনের মধ্যে নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এগিয়ে রয়েছে ১৬টি আসনে।

বিজেপির কৌশল ব্যর্থ করে হ্যাটট্রিক করছেন দেব অন্যদিকে, নীতীশের জেডি (ইউ) এগিয়ে রয়েছে ১২ আসনে। দুই ‘এন’র দুদল মিলিয়ে প্রায় ৩০টি আসন। লোকসভার সঙ্গেই অন্ধ্রে হয়েছিল বিধানসভা ভোটও। সেই ভোটেও বাজিমাত করেছেন নাইডু। এখন প্রশ্ন উঠছে নাইডু কি এনডিএতেই থেকে যাবেন, নাকি অতীতের মতোই শিবির বদলে আবার ‘ইনডিয়া’র মঞ্চে তাকে দেখা যাবে?

ফলাফলের প্রবণতা স্পষ্ট হতেই মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নাইডুকে ফোন করেছিলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি অংশ মনে করছে, এই ফোনের মধ্যে দিয়েই হয়তো ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে আবার শুরু হলো জোটের দৌড়।

এদিকে আরেক খবরে জানা গেছে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জোটের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মঙ্গলবার রাত বা বুধবার সকালের মধ্যে সবাইকে দিল্লিতে যেতে বলা হয়েছে। মমতা ব্যানার্জির দিল্লি যাওয়ার ব্যাপারে ‘ইতিবাচক’ অবস্থানের কথাও জানা গেছে। 

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে ডিএমকের দলীয় অফিসে কে করুণানিধির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পূর্বনির্ধারিত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে ইনডিয়া মঞ্চের নেতারা একজোট হয়েছিলেন। আলাদা করে বৈঠকের সুযোগ সেখানে না থাকলেও কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, এনসির ফারুক আবদুল্লা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইর ডি রাজা, ডিএমকের টিআর বালুর মতো নেতারা তখন এক মঞ্চে ছিলেন।

দেশের ইতিহাসে মোদিই হচ্ছেন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে জওহরলাল নেহরুর মতো মোদি পরপর তিনবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা দখলের রেকর্ড করতে পারছেন না। অবশ্য তিনি নিজেই একাধিকবার দাবি করেছিলেন, এককভাবে বিজেপি ৩৭০ আসনে জিতবে।

ইতিহাস গড়লেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে আবার কংগ্রেসের প্রয়োজনীয়তা ফিরিয়ে এনেছে। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৪-এ ৪৪ এবং ২০১৯-এ ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সেই মর্যাদা পায়নি। এবার ভোট গণনার পর দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনীয় আসনে জয় পেয়েছে মল্লিকার্জুন খড়গের দল। 

‘ইনডিয়া’র সব সহযোগী দল মিলে এবার ২০০র বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ফলে লোকসভার অধিবেশনেও এবার বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদিকে।

মাত্র এক বছর আগে গড়ে ওঠে কংগ্রেস, তৃণমূল, বামসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইনডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)। এ জোটের নামকরণে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে কংগ্রেস বিরোধীরা দাবি করেন। তাই এবারের নির্বাচনের ফল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। 

১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী নেতাদের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘ইনডিয়া’র আবির্ভাবের সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় চলে গেছে ১৯ বছর আগে গড়ে ওঠা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স)।

‘ইনডিয়া’র শরিক দলগুলোর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন সমঝোতা হয়েছে এবারের ভোটে। বাংলায় তৃণমূল, কেরালায় বাম, পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির মতো অনেকে আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটের পর জোটের প্রতিশ্রুতিতে নিজেদের রাজ্যে তারা আলাদা করে লড়েছেন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৪ জুন ২০২৪,/রাত ১১:১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit