বিদ্রোহী নজরুল
——————–
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম-স্কন্ধে
আমি উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।
মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না –
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না –
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর আজ ১২৫ তম জন্ম বার্ষিকী। তাঁর কাব্যময় জীবনের সেরা সৃষ্টি ”বিদ্রোহী” কবিতা। উপরের কবিতাংশটুকু নিজের মধ্যে ধারণ করে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনকে কত দ্রুত বদলে ফেলা দরকার তা কি আর বলার আবশ্যকতা রাখে ? দেশ জাতির জন্যে একদা আমরা ছিলাম বিদ্রোহী। কবি নজরুলের মত আমরা সকলই দ্রোহের আগুন ছড়িয়েছি। আর আজ ? আজ আমরা অন্যায়, অনাচার আর দুঃশাসনের বেড়াজালে বন্দি হয়ে ছাপোষা জীবন বেছে নিয়েছি।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ”বিদ্রোহী” কবিতার মাধ্যমে কতটা দ্রোহের আগুন ছড়িয়েছে, সেটা বোঝার আগে আসুন এই কবিতার সৃষ্টি পর্বের কিছু কথা জেনে নেই।
১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে কাজী নজরুল ইসলাম তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুজাফফর আহমেদের সাথে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে, যখন তারা কলকাতার ৩/৪ সি তালতলা লেনে বসবাস করছিলেন, নজরুল কবিতাটি পেনসিলে লেখেন। মুজাফফর আহমেদের মতে, কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ৬ জানুয়ারি ১৯২২ সালে সাপ্তাহিক বিজলী পত্রিকায়।
প্রকাশের পর, কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং দ্য মোসলেম ভারত , প্রবাসী , মধুমতি এবং সাধনা ম্যাগাজিন সহ অন্যান্য কিছু পত্রিকাও কবিতাটি প্রকাশ করে‘বিদ্রোহী’ সমিল মুক্তক মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। বাংলা ভাষায় নজরুলই এই ছন্দের প্রবর্তক। এটি ৮টি স্তবক, ১৪৯টি পঙ্ক্তির একটি দীর্ঘ কবিতা।
বিজলী পত্রিকায় ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি, ২২ পৌষ ১৩২৮ বঙ্গাব্দ শুক্রবারে প্রথম কাজী নজরুল ইসলামের “বিদ্রোহী” কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। কবিতাটি প্রকাশের পর হতেই নজরুল সকলের কাছে পরিচিত হতে থাকেন এবং নানানভাবে সমাদৃত হন। নলিনীকান্ত সরকার সেসময় বিজলী পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন। বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশনার দিন বিজলী পত্রিকা পরপর দুই বার ছাপতে হয়েছিল, যার সংখ্যা ছিলো ২৯ হাজার। মুজাফফর আহমদের কাছ থেকে জানা যায়, সেদিন কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ বিদ্রোহী পড়েছিল।
কবিতাটি প্রথম ১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে আর্য পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত অগ্নিবীণা বইয়ে অন্যান্য ১১টি কবিতার সাথে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
পাদটীকাঃ কবিতাংশ ও লেখাটির তথ্য সমূহ সংগৃহিত। মূল্যায়ন ও ভাবনা লেখকের নিজস্ব কথা।
লেখকঃ লুৎফর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র লুৎফর রহমান ৮০ এর দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে চারটি রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন, যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে তিনি এখন ব্যাপক পরিচিত।
কিউএনবি/অর্চনা /২৫.০৫.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ/ রাত ৮.১৫