জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : আসন্ন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্মিলিতভাবে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা।আজ ৩ মার্চ রাতে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে দেশের আইনজীবীদের অন্যতম সংগঠন ‘সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন’ ২০২৪-২৫ সেশনে বিএনপি এবং জামায়াত সহ বিরোধীদলীয় আইনজীবীদের মনোনীত ‘নীল দল’ প্যানেলের প্রার্থীদের পরিচিতি সভায় সিনিয়র আইনজীবীরা এ আহ্বান জানান।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এবং সাবেক এটর্নী জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী’র সভাপতিত্বে পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক বিচারপতি টিএইচ খাঁনের ছেলে সাবেক এমপি এডভোকেট আফজাল এইচ খাঁন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির
সাবেক সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, এডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, এডভোকেট মোহসীন রশিদ, এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার,ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা বারের আইনজীবী নেতা এডভোকেট উমর ফারুক ফারুকী প্রমুখ।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নীল দলের সভাপতি পদপ্রার্থী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এবং সাবেক এমপি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন,”আজকে আমার সিনিয়র ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কে খুবই মিস করছি। তিনি আজ বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতো।
বলতেন আমার ‘খোকন’ সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। আমি একইসাথে বিচারপতি টিএইচ খাঁনকেও স্মরণ করছি। বিচার বিভাগ শক্তিশালী থাকলে আজকে দেশের এ অবস্থা হতো না । আজকে বিচার বিভাগ শক্তিশালী থাকলে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হতো না। তারেক রহমানের সাজা হতো না।সাতাশ হাজার নেতাকর্মী আটক হতো না।উচ্চ আদালতে আমরা কয়েকজন ব্যক্তি সারাদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছি। এখানে দায়িত্ব ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার”।
আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন,”আমরা এই নির্বাচন কে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি।এ নির্বাচন কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এবারের প্যানেল অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক সুন্দর প্যানেল হয়েছে।প্যানেলের বাইরে কাউকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি । আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না। আমাদের কথার মধ্যে মিল থাকতে হবে। বাইরের মানুষ মনে করে আমরা আইনজীবীরা ঝগড়া করছি। আসলে সবাই মিলে সুপ্রিমকোর্টের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।আমরা সবাই ‘ফুলটাইম’ প্র্যাকটিস করি। তাদের (সাদা প্যানেলের) কাউকে কোর্টে দেখা যায় না।
আমাদের কে পাকিস্তানের কারাগারে আটক ইমরান খানের ‘পলিসি’তে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ভোট গ্রহণ শেষ করে ফলাফল নিয়ে ঘরে যাবো। ইনশাআল্লাহ”। বার সম্পর্কে তিনি বলেন,”সুপ্রিমকোর্ট বারে আমরা প্রতীক।আপনারা সবাই সেই প্রতীকের মালিক। বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ হলেও আইন বিভাগের ‘স্বাধীন সচিবালয়’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে নি”।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এবং এবারের নির্বাচনে বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত নীল দলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন,”সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচন একটি আদর্শিক লড়াই।এই লড়াইয়ে আপনারা আমাকে মনোনীত করেছেন।দল আমাকে মনোনীত করেছে সম্পাদক পদে নির্বাচন করার জন্য।সেজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।আমি আপনাদেরকে কথা দিতে পারি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঢাকা বারের মতো করার ষড়যন্ত্র করলে তাহলে আপনাদের সবাইকে নিয়ে
সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হবে”।
তিনি আরো বলেন,”এই পেশায় অনেক চ্যালেঞ্জ। আমার সিনিয়র আমাকে একটা কথা বলতেন সৎভাবে জীবনযাপন করলে একটা স্বচ্ছল জীবন পাবা। কিন্তু প্রাচুর্য পাবা না।সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আসলেই একটা কথা শুনি শুধু টাকা ,টাকা আর টাকা।টাকা কে পরাজিত করে অতীতে আমাকে নির্বাচিত করেছেন, আশা করি এবারও বিজয়ী করবেন”।
আশির দশকের তুখোড় ছাত্রনেত্রী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং সমিতির নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী এডভোকেট সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা বলেছেন,” আমি ছাত্রদলের কর্মী ছিলাম এবং রোকেয়া হলের সভাপতি ছিলাম। এরশাদের পতনের আন্দোলনে রাজপথে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলাম। এবারে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক দফার আন্দোলন সফল করতে আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করুন”।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন,”আজকের এই সভায় সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির লোকজন রয়েছেন। তাদের কে সাক্ষী রেখে বলতে চাই সারাদেশের বিভিন্ন বার এবং বিশেষ করে ঢাকা বারের সাথে সুপ্রিমকোর্ট বার কে তুলনা করলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। গত দুই বছর আপনাদের ভুল করার কারণে আমরা আপনাদের কে এক মিনিটও শান্তিতে থাকতে দিই নাই।গত দুই বছরে যারা অপকর্ম করেছেন,তারা এখন কোর্টে
হাতে হাত ধরে মাফ চাইছেন।গত দুই বছরে সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল কে আমরা কোর্টের দোতলায় নিয়ে যেতে পারি নি যে ব্যক্তির কারণে, সেই ব্যক্তি বড় ভাই হয়েও রুহুল কুদ্দুস কাজলের কাছে পা ধরে মাফ চেয়েছেন।আমাদের মূলধন একদল দক্ষ এবং ঈমানদার কর্মীবাহিনী।আপনাদের সবাইকে নিয়ে এই ফ্যাসিবাদের পতন সুপ্রিমকোর্টে ঘটাবো।ইনশাআল্লাহ”।
প্রার্থীরা পরিচয় পর্বে সবাই নিজের একাডেমিক জীবন, একাডেমিক পারফরম্যান্স, ছাত্র রাজনীতির বৃত্তান্ত, আইন পেশার বৃত্তান্ত ,রাজনৈতিক জীবন এবং বারের নির্বাচনে তাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য যে,সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০২৪-২০২৫) নির্বাচন আগামী ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। বিগত দুটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি এবং অন্যান্য অনিয়মের প্রতিবাদে বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করে।