রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১২ অপরাহ্ন

আ. লীগ-জাপার ভাগাভাগির আলোচনায় রাখঢাক

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৮২ Time View

ডেস্কনিউজঃ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে না থেকেও দলটির সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে চাচ্ছে জাতীয় পার্টি। এ জন্য গত বুধবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে জাপা কমবেশি ৭০টি আসনে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ আসনে সমঝোতা হলেই সন্তুষ্ট থাকবে দলটি। জাতীয় পার্টির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, ২০টির বেশি আসনে ছাড় নয়—এমন প্রস্তুতি নিয়েই আলোচনায় বসেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে দুই দলের মধ্যে।

দুই দলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ভোটের সমীকরণ মেলাতে আজ অথবা আগামীকাল আবারও বৈঠকে বসার সম্ভাবনা আছে। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও ১৪-দলীয় জোটের আসন বণ্টনসংক্রান্ত কমিটির সদস্য ওবায়দুল কাদের নেতৃত্ব দিতে পারেন। তবে গত রাত ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বৈঠকটি কোথায়, কখন অনুষ্ঠিত হবে তা জানা যায়নি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) আবার বৈঠক হতে পারে।বৈঠক হলে ওবায়দুল কাদের নেতৃত্ব দেবেন।’

পরবর্তী বৈঠকে মূলত আসন আরো বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ২৫টির বেশি আসন ছাড়ার পক্ষে নয় বলে সূত্র জানায়। কিন্তু আসন যা-ই হোক, জাতীয় পার্টি ছাড় পাওয়া আসনগুলোয় নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে কি না, সেটা বড় বিষয় হবে আলোচনার। জাতীয় পার্টির চাওয়া লাঙলের আসনে যেন নৌকা ভোট না করে।

কিভাবে এই আসন সমঝোতা হবে সে বিষয়ে এখনো দুই দলের ঐকমত্য হয়নি। বুধবারের বৈঠকে আওয়ামী লীগ আসন সমঝোতার কৌশলের বিষয়ে কিছু ধারণা দিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে ক্ষমতাসীন দল। তবে তাতে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা সবাই সন্তুষ্ট হননি। আওয়ামী লীগের মনোভাব নিয়ে তারা কিছুটা বিভ্রান্তও।

গতকাল দুপুরে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরীর গুলশানের বাসভবনে বৈঠক করেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু ও দলের পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।

জাপার আজকের দলীয় বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগকে দেওয়া তালিকায় কোন কোন আসন আছে তা তাদের জানানো হয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তুও কিছুটা গোপন রাখা হয়েছে বলে তাঁর মনে হয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোট অথবা সমঝোতা করে ভোটে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন ছিল জোটবদ্ধ। এই দুইবার আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া আসনে জিতেছে জাতীয় পার্টি। এবারও তারা এমনটাই চায়। কিন্তু ওই আসনগুলোতে এবার নৌকার প্রার্থী রয়েছে।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি তাদের বিজয়ী হওয়া ২৩ আসনে কোনো ছাড় দিতে চায় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৭ আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছিল। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি বেশি আসন চাইছে।

জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারা ভোট বর্জন করলে নির্বাচন একেবারে একপেশে হয়ে যাবে। এ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও উদ্বেগ আছে। জাতীয় পার্টি এই উদ্বেগকে পুঁজি করে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দর-কষাকষি করার সুযোগ নিয়েছে।

তবে আসন সমঝোতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাড়া দেখা যায়নি বলে জানান জাপা নেতারা। এখন এসব বিষয় নিয়ে আজ-কালের মধ্যে আবার বৈঠক হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, বৈঠকে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কথা বলেছে। জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে থাকার অনুরোধ করেছে। জাতীয় পার্টি চাচ্ছে আসন সমঝোতা। সেখানে আওয়ামী লীগের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়।

গতকালের দলীয় বৈঠকে নেতারা বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন, সে বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে হবে। নইলে শুধু মৌখিক আশ্বাসে ভোটে গিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারবেন না।

লুকোচুরি কেন
আওয়ামী লীগের জোটের বাইরে থাকা জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হলেও নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কাদের। সেখানে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপে ‘এত লুকোচুরি কেন’, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘লুকোচুরির বিষয় না। এটা নিয়ে এত ঢাকঢোল পেটোনোর কী আছে? নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। কারণ নির্বাচনবিরোধী শক্তি যে অপরাজনীতি করছে, সেটা মোকাবেলার জন্য আমাদের মধ্যে একটা সমন্বয় করা দরকার। এখানে লুকোচুরির কোনো ব্যাপার নয়।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এর আগে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। একসময়ে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে।

জাপার ভাষ্য
গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘আমরা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলিনি, প্রয়োজনও নেই। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চেয়েছি। আওয়ামী লীগ আশ্বস্ত করেছে।’

জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভালো মনোভাব আছে। তবে এখনো সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভয় আছে। সারা দেশের মানুষ ভোট দিতে পারলে ১৯৯১ সালের মতো নীরব বিপ্লব হয়ে যেতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি এবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’

দেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট বেশি দাবি করে চুন্নু বলেন, নির্বাচনে যদি ভোটাররা আসতে পারে, নীরব ভোটবিপ্লব হবে। আওয়ামী লীগ যদি গণতান্ত্রিক দল হয়, তাহলে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে।

নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টি সরে যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন করার ইতিহাস কম। আমরা বুঝি গণতান্ত্রিক ধারাকে বজায় রাখতে হলে নির্বাচন জরুরি।’

কিউএনবি/বিপুল/০৮.১২.২০২৩/ দুপুর ১.২২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit