রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন

কেন ইসরাইলিদের এত বেশি ঘৃণা করেন ফিলিস্তিনিরা?

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৮৯ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরাইলি মানবাধিকার সংস্থা ‘বিৎসেলেম’-এর তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বরে ১৪৬ অপ্রাপ্তবয়স্ক ফিলিস্তিনিকে কারাগারে আটকে রেখেছে ইসরাইল। আর সেপ্টেম্বরের পর বিশেষ করে ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলের নৃশংসতা শুরুর পর এ সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ।

উভয় সংস্থাই দুটি বিষয় তুলে ধরেছে। প্রথমত, অনেক কারাবন্দি শিশুদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনাদের দিকে পাথর নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কারাগারে থাকা শিশুদের প্রায় সবাই সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হয়।

গত জুলাইয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত বলেছিলেন, প্রতি বছর ৫০০ থেকে ১০০০ শিশু ইসরাইলি সামরিক কারাগারে আটক থাকে।

বিশ্বব্যাপী শিশুদের সুরক্ষার জন্য নিবেদিত বৈশ্বিক বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ ইসরাইলি কারাগারের এসব শিশু বন্দিদের সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে জানিয়েছে, বন্দিদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ ছেলে, যাদের গড় বয়স ১২ থেকে ১৭ বছর। 

সংস্থাটি বলছে, ইসরাইলের সামরিক কারাগারে ফিলিস্তিনি শিশুরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে (৮৬ শতাংশ) মারধর করা হয়। ৬৯ শতাংশকে স্ট্রিপ-সার্চ (পরিহিত কাপড়ের ভেতরে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা আছে কিনা তা অনুসন্ধান) করা হয় এবং প্রায় ৪২ শতাংশ শিশু সাধারণত গ্রেফতারের সময় আহত হয়। আঘাতের কারণে অনেক শিশু শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। অনেক শিশু যৌন সহিংসতার স্বীকার হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

দারিদ্র্য, রোগ ও অপুষ্টির চেয়েও ফিলিস্তিনি শিশুদের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে ইসরাইল। গাজার চলমান যুদ্ধের দিকে তাকালেই তা প্রমাণিত হবে। আনুমানিক ১৫ হাজার বেসামরিক মৃত্যুর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। 

এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সহজেই বোঝা যায়, ইসরাইল স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি প্রজন্মকে বিশ্বের অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে ইসরাইলকে বেশি ঘৃণা করতে শেখাচ্ছে। 

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ১৮ নভেম্বর এক বক্তব্যে হাস্যকরভাবে বলেন, ভবিষ্যৎ গাজা উপত্যকা এমন কারও দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত নয়- যে ফিলিস্তিনি শিশুদের ইসরাইলকে ঘৃণা করতে, ইসরাইলিদের হত্যা করতে, ইসরাইল রাষ্ট্রকে নির্মূল করার শিক্ষা দেবে। 

অথচ বাস্তবতা হচ্ছে- ইসরাইল নিজেই ফিলিস্তিনি শিশুদের ইসরাইলের প্রতি ঘৃণা করতে শেখাচ্ছে। গত ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনি প্রজন্ম ইসরাইলের দ্বারা কোনো ভালো কাজ দেখেনি। 

কল্পনা করুন- একটি ছোট ছেলে বা মেয়েকে পরিবারের পক্ষ থেকে রুটি কেনার জন্য মুদি দোকানে পাঠানো হলো। আর বাইরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইলি বুলেট তার মাথায় এসে আঘাত করল এবং হাসপাতালে কোমায় চলে গেল ওই শিশু। অথচ ওদিকে তার পরিবার এখনো তার রুটির জন্য অপেক্ষা করছে। শুধু তাই নয়, তাকে তৎক্ষণাৎ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, তার বিরুদ্ধে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের চেষ্টা (সন্দেহজনক প্রচেষ্টা) করার অভিযোগ আনা হয়। ওই শিশুটি কিভাবে ইসরাইলকে ভালোবাসবে?

গত ১৮ আগস্ট সিলওয়ান শহরের ১৪ বছর বয়সি আবদুর রহমান আল-জাঘলের সঙ্গে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। ২৬ নভেম্বর ইসরাইলের কবল থেকে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে হামাস তাকে ফিরিয়ে আনে। আবদুর রহমান এতদিন হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি ছিল। নানাভাবে তাকে জখম করেছে ইসরাইলি বাহিনী। 

দিনের পর দিন ইসরাইলের কারাগারে রুদ্ধ এসব ফিলিস্তিনি শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক উত্থান কেবল কারাগার থেকে মুক্তির পর শুরু হয়। ইসরাইলের প্রতি অঢেল ঘৃণার শিক্ষা নিয়ে তারা বাড়ি ফেরে। তাই এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ফিলিস্তিনি শিশুদের ঘৃণা আর বিদ্বেষ শেখানোর সবচেয়ে বড় শিক্ষক খোদ ইসরাইল। 

মিডল ইস্ট মনিটরে লিবিয়ার সাংবাদিক ও কলামিস্ট মুস্তফা ফাতুরির লেখা

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩০ নভেম্বর ২০২৩,/রাত ৯:২৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit