বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : রোদেলা আকাশ। হেমন্তের হালকা শীতের সঙ্গে বেশ মানানসই। কাগুজে ভাষায় বলতে গেলে অনুকুল পরিবেশ। এতো গেলো প্রকৃতির কথা। ভোটের বেলায়ও ছিলো একই পরিস্থিতি। আইনশৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের তৎপরতায় ভোট দিতে গিয়ে কোনো ধরণের শঙ্কা ছিলো না। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিলো একেবারেই কম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহনের দিনটি ছিলো নিরুত্তাপ। এমন ভোটেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে ভোট, জাল ভোটসহ নানা ধরণের অভিযোগ উঠে রবিবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
জাতীয় পার্টির সাবেক এম.পি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা অভিযোগ করেন, অন্তত আটটি কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ভোট ও জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রে সরবরাহকৃত ভোটার তালিকার সঙ্গে তাদের কাছে সরবরাহ করা তালিকার মিল না থাকায় অনেক ভোটারকে ফিরে যেতে হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ তুলে আশুগঞ্জের শরীফপুরের একটি কেন্দ্র বাতিলের দাবি জানান তিনি। এদিকে আশুগঞ্জের যাত্রাপুর নূরানীয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় নৌকার ভোট সবার সামনে দেওয়া নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে নৌকার সমর্থকদের বাগবিতÐা হয়। বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্টরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার মো. হাবিবুর রহমান জানান, একটি বুথে এসে দেখি বিতÐা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা সাথে সাথেই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।
চার লাখ ১০ হাজার ভোটারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটিতে ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা নেই। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা নাগাদ ১৫ থেকে ২০ ভাগের মতো ভোট পড়ে বলে ধারণা পাওয়া যায়। বিগত নির্বাচনে এ আসনের উপনির্বাচনে ১৫ ভাগের মতো ভোট পড়ে। নির্বাচনের সহকারি রিটার্নি অফিসার ও আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শ্যামল চন্দ্র বসাক জানান, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আশুগঞ্জের যাত্রাপুর নূরানীয়া হাফেজিয়া মাদরাসায় সমস্যায় কথা শুনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে এবারের উপনির্বাচনে লড়ছেন পাঁচ প্রার্থী। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. শাহজাহান আলম (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত মো. আবদুল হামিদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টি মনোনীত জহিরুল ইসলাম জুয়েল (গোলাপ ফুল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি মনোনীত মো. রাজ্জাক হোসেন (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (কলার ছড়ি)। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। আটশ’ পুলিশের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্য, র্যাবের আটটি টিম মাঠে কাজ করে। এছাড়াও ছিলো পুলিশের ছয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও একাধিক মোবাইল টিম। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারি পুলিশ ও ১৬জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন উপলক্ষে দুই উপজেলায় দু’জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও ১৭ টি ইউনিয়নে ১৭জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারের এক মেয়াদে তিনবার ভোটসহ একাধিক কারণে ভোটারদের আগ্রহে ভাটা। বলা চলে এক প্রকার নিরুত্তাপ ভোট। তবে সেই ভোটে আওয়ামী লীগকে বসতে হয়ছে পরীক্ষায়। সুষ্ঠু ভোট করিয়ে একটা বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তীতে ৫০ বছরের মধ্যে আসনটি নিজেদের দখলে আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে সরকার দলটিকে। এখন অপেক্ষা ফলাফলের। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সর্বশেষ জয়ী হয়েছিলেন ১৯৭৩ সালে। এরপর থেকে আসনটিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়ে আসে। সর্বশেষ তিনটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থীই দেওয়া হয়নি। এবার দলটি নিজেদের প্রার্থীতেই আস্থা রেখেছে।
১ ফেব্রুয়ারি হওয়া সর্বশেষ উপ-নির্বাচনে বিএনপি’র বহিস্কৃত নেতা আব্দুস সাত্তার ভ‚ঁইয়াকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছিলো আওয়ামী লীগ। দলীয় কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে আব্দুস সাত্তারকে সমর্থন দিয়ে মাঠে নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আব্দুস সাত্তার বিপুল ভোটে জয়ী হন। তবে ভোটার টানার চ্যালেঞ্জে ‘হেরে’ যায় আওয়ামী লীগ। অন্তত ৩৫ ভাগ ভোটার টানার চ্যালেঞ্জে মাত্র ১৫ ভাগ ভোট পড়ায় আওয়ামী লীগের হিসেব গোলমেলে হয়ে যায়।
কিউএনবি/আয়শা/০৫ নভেম্বর ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:৩০