লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব স্পাইন বা মেরুদণ্ডের দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মুভ ইওর স্পাইন’ অর্থাৎ আপনার স্পাইনকে নাড়ান। দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করার কারণে অনেকেরই মেরুদণ্ডে সমস্যা হয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো বা বসে কাজ করার মধ্যে ৪৫ মিনিট পর পর অন্তত ৫ মিনিট বিরতি নেওয়া উচিত। যা আমরা করি না। এর ফলে মেরুদণ্ডের হাড় ও কোমরের মাংস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মেরুদণ্ডের সমস্যা
ডিস্ক হার্নিয়েশন বা ডিস্ক প্রলেপস: আমাদের মেরুদণ্ডের দুইটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে জেলির ন্যায় একটি বস্তু থাকে। যাকে মেডিকেল ভাষায় ইন্টার ভার্টিব্যাল ডিস্ক বলে। কোন কারণে এই তিনটি ডিস্ক সরে গেলে তখন আমরা এটাকে ডিস্ক হার্নিয়েশন বা ডিস্ক প্রলেপস বলি। এ সমস্যায় ওষুধ , ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম ও বিশ্রাম এই চারটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
স্পাইনাল ক্যানেল সোটনোসিস: আমাদের মেরুদণ্ডের গঠন অনুযায়ী প্রত্যেকটি কশেরুকার দুই পাশ দিয়ে স্পাইনাল নার্ভ বা স্নায়ু বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। এর মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ পায়। এই নার্ভের উৎপত্তি স্থলে একটি ক্যানেলের মাধ্যমে নার্ভটি বের হয়ে আসে। এর ফলে চাপ লাগে তখন আক্রান্ত স্থান থেকে নার্ভের ডিস্ট্রিবিউশন অনুযায়ী ব্যথা ও হাত বা পা ভারী অনুভব হয়। রিজয়েন্ট ইমেজিং পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি নির্ণয় করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরে রোগটি ধরা পরলে কনজারভেটিভ চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। কিন্তু তৃতীয় স্তরে চলে গেলে স্পাইনালে সার্জারির প্রয়োজন হয়।
ডিজেনারেটিভ ডিজিস-স্পনডাইলোসিস: বয়স চল্লিশের পেরোলে মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে। দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানের স্পেস কমে যায় এ অবস্থাকে স্পানডাইলোসিস বলে। এ সমস্যাটি ঘাড়ের অংশে হলে তাকে সারভাইক্যাল স্পানডাইলোসিস এবং লাম্বারস্পাইনে হয় লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলে। রোগটি এক্স-রের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি মাধ্যমে পুরোপুরি না সারলেও উপসর্গ কমিয়ে সুস্থ রাখা যায়। সুস্থ থাকতে কিছু নিয়মকানুনও মেনে চলতে হয়।
স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি: দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির সমস্যা হয়। যার মধ্যে ভার্টিক্যাল স্পাইন ইনজুরি হলে রোগী প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীর দ্রুত সার্জারির প্রয়োজন পড়ে পাশাপাশি রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
স্কোলিওসিস: আমাদের মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক গঠন যখন একপাশে বাঁকা হয়ে ইংরেজি এস অক্ষর হয়ে যায় তাকে স্কোলিওসিস বলে । শুরুতে ধরা পরলে ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ করা যায় । যদি রোগ ধরতে দেরি হয়ে যায় তবে সার্জারির প্রয়োজন হয়। আর সার্জারির আগে ও পরে স্পাইনাল মাংসপেশি ও লিগামেন্টের সুস্থতার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
স্পাইন টিবি বা টিউবারকলোসিস: রোগীর টিউবারকলোসিস থেকে টিবি স্পাইন বা টর্স ডিজিজ হয়। এটা পিঠের অংশে দেখা দেয়। ওষুধের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ রাখা যায়।
জীবনে সুস্থতার জন্য মেরুদণ্ডের সুস্থতা খুবই অপরিহার্য। তাই মেরুদণ্ডের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে নিয়ম চলা ও মেরুদণ্ডের যত্ন নেওয়া দরকার।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল। সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।
কিউএনবি/আয়শা/১৬ অক্টোবর ২০২৩,/বিকাল ৫:৩৮