মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন

রিজার্ভ ১০ বিলিয়নে নামার শঙ্কা

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৮০ Time View

ডেস্কনিউজঃ দেশের রিজার্ভ এখন যা আছে, এর চেয়ে কমে গেলে বিপদ হতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান।

তিনি বলেন, রিজার্ভ একসময় ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছিল। এখন তা ১৮ বিলিয়নে নেমে এসেছে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে যদি তা ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, সেসময় এমন হতে পারে যে আইএমএফ-এর সহায়তা পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে, এর সঙ্গে শ্রীলংকার মিল খুঁজে পান রেহমান সোবহান। যদিও তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে শ্রীলংকার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় একটি রপ্তানি খাত আছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলংকার চেয়ে অনেক বেশি।’ সে কারণে তিনি বিশ্বাস করেন না বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনো শ্রীলংকার মতো হতে পারে।

সোমবার অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এক অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন।
ইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মিরধা। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঙ্গে সংলাপ’।

রেহমান সোবহান বলেন, দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। তবে তার মানে এই নয় যে দেশে প্রবাসী আয় আসা বাস্তবে কমে গেছে; আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক পথে আসছে প্রবাসী আয়, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান।

শীর্ষস্থানীয় এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। ঋণ নেওয়ার পর ফেরত না দেওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটা করার জন্য বড় ব্যবসায়ী নয়; বরং যারা এসব করছেন, তারা নিজেদের বড় রাজনীতিক হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বিকল্প উপায়ে হলেও রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসছে। যাদের অর্থ পাওয়ার কথা, তারা পাচ্ছে। যে কারণে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি এখন হুন্ডিতেও ডলারের একটি বড় রিজার্ভ তৈরি হয়েছে। এর ফলে অর্থ পাচারের সুযোগ বাড়বে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে ব্যাংক বলছে তাদের কাছে যথেষ্ট ডলার নেই। শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। কিন্তু বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকের একই ধরনের মানসিকতা দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকদের এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করবে নাকি ডিম কিংবা সার আমদানি করবে।

তিনি আরও বলেন, শিল্পের দ্রুত বিকাশে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর। একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন। কিন্তু উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড দুটি সংস্থাকে অধিগ্রহণ করে। সরকারি সিদ্ধান্তের আওতায় বাংলাদেশে শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) এবং বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে (বিএসআরএস) একীভূত করে বিডিবিএল গঠিত হয়।

তারপর আর্থিক খাতে কিছুটা উন্নতি হলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখন বিনা ফেরতে টাকা পাচ্ছেন। রয়েছে কর সুবিধাও। নির্বাচন এলে কিছু টাকা জমা দিয়ে দীর্ঘদিনের খেলাপি ঋণ নবায়ন করা যায়। পরে সে ঋণ আবার খেলাপি হয়। আবার বিপুল অঙ্কের ঋণ অবলোপন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মূলত ঘুরেফিরে বড় লোককে ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক। সে ঋণ ফেরত আসছে না। অথচ কৃষক সময়মতো ঋণ পান না। ব্যাংক খাতের একটি বড় সমস্যা হলো-স্বল্পমেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিচ্ছে। এটা এক ধরনের ‘মিস ম্যাচ’। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার সঠিকভাবে কাজ করছে না। এরও একটা প্রভাব পড়ছে ডলার সংকটে।

প্রবৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, যেভাবে দেশের প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে এটা সঠিক না। প্রবৃদ্ধি হঠাৎ করে হয় না। এটা ধীরে ধীরে হয়। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ের সমন্বয়ে দেশের রিজার্ভ ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমানে দুটি সূচক যৌক্তিক কারণে কামছে না। এ জায়গায় নজর দিতে হবে।

কিউএনবি/বিপুল/০৯.১০.২০২৩/ রাত ৯.১০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit