শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্নার ভয়ংকর বুমরা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৬১ Time View

স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা ডেভিড ওয়ার্নারের। এশিয়ার দেশটির কন্ডিশন যে বেশ পরিচিত তার। বিশ্বকাপে তাদের ম্যাচগুলো যেসব মাঠে হবে, তারকা এই ওপেনার চেনেন বেশিরভাগই। কেমন আচরণ করতে পারে উইকেট, তার চেয়ে বেশি বোধ হয় অভিজ্ঞতা নেই পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের আর কারও। তাই ভারত আসরে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে রান জোয়ারের আশায় থাকবে অস্ট্রেলিয়া।

এই ম্যাচ দিয়ে নিজেদের আঙিনার বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করবে ভারতও। রেকর্ড শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হলে ১৯৮৩ ও ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়নদের হয়ে জ্বলে উঠতে হবে জাসপ্রিত বুমরাকে। শুধু এই ম্যাচেই নয়, ভারতকে বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে রাখতে হলে সবচেয়ে বড় অবদানটা রাখতে হবে সময়ের অন্যতম সেরা এই পেসারকে। ভয়ংকর সব স্পেল করে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামানোর কাজটা করতে হবে তাকেই। ভারতের পেস বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দিতে হবে ২৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে।

যে বুমরার ওপর এতটা নির্ভরশীল ভারত, তাকেই এবারের বিশ্বকাপে পাওয়া নিয়েই একটা সময় ছিল শঙ্কা। পিঠের চোটের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে লম্বা একটা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। ২০২২ সালের এশিয়া কাপ ও অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি তারকা এই পেসার। গত আইপিএলে তাকে পায়নি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। বৈশ্বিক আসরেও তাকে পাওয়া নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। তবে আশা হারায়নি ভারত। গত মার্চে শল্যবিদের ছুরি কাঁচির নিচে যাওয়া বুমরাকে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে রেখে বিশ্বমঞ্চের জন্য করা হয়েছে প্রস্তুত। শঙ্কার কালো মেঘ উড়িয়ে গত আগস্টে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে মাঠে ফেরেন এই ক্রিকেটার। যা ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তি। ম্যাচের শুরুতে কিংবা ডেথ ওভারে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ের অভাবটা যে অনেকদিন ধরেই বোধ করছিল ভারত।

বুমরার প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার জন্য তিনি হবেন সবচেয়ে বড় হুমকি। এই দলের বিপক্ষে তার পরিসংখ্যান বেশ ভালো। ১৯ ম্যাচে ওভার প্রতি ৫.৩৯ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ২৬টি। ওয়ানডেতে অন্য কোনো দলের বিপক্ষে এত উইকেট নেই তার। আর ঘরের মাঠেও দারুণ সফল বুমরা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনি এখানেই, ৩০ ম্যাচে ৪৪টি। সবশেষ বিশ্বকাপে উজ্জ্বল ছিলেন বুমরা, ৯ ম্যাচে ভারতের হয়ে আসরে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নেন তিনি।

বুমরাকে নিয়ে অবশ্য খুব একটা দুশ্চিন্তায় থাকার কথা নয় ২০১৫ বিশ্বকাপ জয়ী ওয়ার্নারের। ভারতীয় পেসারের বিপক্ষে যে বেশ সফল এই অস্ট্রেলিয়ান। ১৩ ওয়ানডেতে বুমরার মুখোমুখি হয়ে একবারও আউট হননি তিনি। এমনকি আইপিএলেও এখন পর্যন্ত একবারও ওয়ার্নারের উইকেট নিতে পারেননি বুমরা। কেবল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেই বুমরার বলে সাজঘরে ফেরার অভিজ্ঞতা আছে ওয়ার্নারের, ৪ ম্যাচে দুইবার।

ওয়ার্নারের সঙ্গী ভারতের মাটিতে ভালো করার আত্মবিশ্বাসও। এখন পর্যন্ত এখানে ১২ ওয়ানডে খেলে ৫২.২৭ গড়ে ৫৭৫ রান করেছেন তিনি। নামের পাশে ২ সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৪ ফিফটি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে ভারতে তার রানই সবচেয়ে বেশি। এখানে ওয়ার্নারের স্ট্রাইক রেটও দুর্দান্ত, ১০৪.৫৪। এ ছাড়া ভারতের বিপক্ষে পরিসংখ্যানও কথা বলছে তার হয়ে। দলটির সঙ্গে ২৫ ওয়ানডেতে ৫১.০৪ গড়, ৩ সেঞ্চুরি ও ৯ ফিফটিতে তার রান ১১৭৪। এই সংস্করণে এর চেয়ে বেশি রান (১২১৩) কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছেন তিনি। ভারতের মাটিতে সবশেষ সিরিজটিও দুর্দান্ত কেটেছে ৩৬ বছর বয়সী ওয়ার্নারের। তিন ম্যাচের তিনটিতেই ফিফটি এসেছে তার ব্যাট থেকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে করেছেন তিনি ৪৮ রান।

এই ওয়ার্নারকেই বিশ্বকাপ দলে রাখা হবে কি না, এমন প্রশ্নও উঠেছিল আসর শুরুর আগে। তবে ওয়ানডেতে ৬ হাজারের বেশি রান করা ব্যাটসম্যানের অভিজ্ঞতার ওপর আস্থা হারায়নি অস্ট্রেলিয়া। শুধু তাই নয়, ওপেনিংয়ে নামানো হবে কি না, এমন আলোচনাও ছিল। সবশেষ কয়েকটি ম্যাচে ভালো খেলে সেই আলোচনার জবাব দারুণভাবেই দিলেন ওয়ার্নার। বিশ্বকাপে তাই তাকেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইনিংস শুরু করতে দেখা যাবে, এটা এখন অনেকটাই নিশ্চিত।

ভারতের মাটিতে প্রচুর ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও এবারের আসরে ওয়ার্নারের জন্য হতে পারে আশীর্বাদ। এই সুযোগ করে দিয়েছে তাকে আইপিএল। ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ২০০৯ সাল থেকে খেলছেন তিনি। এখন পর্যন্ত এই লিগে তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেননি অস্ট্রেলিয়ার কেউ। আইপিএলে ১৭৬ ম্যাচ খেলা ওয়ার্নারের রান ৬৩৯৭, ব্যাটিং গড় ৪১.৫৪ ও স্ট্রাইক রেত ১৩৯.৯২। ৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন ৬০টি ফিফটি। এই টুর্নামেন্টে রান সংগ্রাহকের তালিকায় তৃতীয় স্থানে তিনি, শীর্ষে বিরাট কোহলি ও দুইয়ে শিখর ধাওয়ান। একটি জায়গায় অবশ্য সবাইকে ছাড়িয়ে ওয়ার্নার। তার চেয়ে বেশি পঞ্চাশ নেই আইপিএলে আর কারও, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ ফিফটি আছে কোহলি ও ধাওয়ানের।

গত বিশ্বকাপটা দুর্দান্ত কেটেছিল ওয়ার্নারের। তিনটি করে সেঞ্চুরি-ফিফটিতে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৪৭ রান করেন তিনি ১০ ম্যাচে। চার বছর আগের সেই পারফরম্যান্স, ভারতে সাম্প্রতিক ফর্ম, পরিসংখ্যান সব যদিও কথা বলছে ওয়ার্নারের হয়ে। তবে মাঠে নেমে কাজটা কিন্তু করতে হবে তাকে। অস্ট্রেলিয়াকে ভালো শুরু এনে দেওয়ার দায়িত্বটা পালন করতে হবে এই ব্যাটসম্যানকে। এখানকার কন্ডিশনে সফলতার গল্পগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন কিনা ওয়ার্নার, নাকি ব্যর্থতা সঙ্গী হয় তার সেটাই এখন দেখার। বুমরার জন্য সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশিই। ওয়ার্নার ভারতে যতই খেলুক না কেন, ঘরের কন্ডিশনের সহায়তা বেশি কাজে লাগাতে পারবেন বুমরাই। বৈশ্বিক আসরে নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারেন তারা, সেটা এখন সময়ের হাতে তোলা।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৮ অক্টোবর ২০২৩,/বিকাল ৪:২৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit