বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম
আরও ৩০ ফিলিস্তিনির নিথর দেহ ফেরত দিল ইসরায়েল দুর্দশায় কুড়িগ্রামের শিক্ষা: ৯ কলেজে কেউই পাস করেনি পশ্চিমা আগ্রাসন ঠেকাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঐক্যের ডাক ইরানের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নওগাঁয় বৃক্ষরোপণ  রেকর্ড গড়েও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পার্বত্য ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা তিস্তা মহাপরিকল্পনার দাবিতে উত্তাল উত্তরাঞ্চল: পাঁচ জেলায় মশাল প্রজ্জ্বলন, রংপুর অচল করার হুঁশিয়ারি উপদেষ্টাদের কল রেকর্ড কোনো ব্যক্তি বা দলের নিকট থাকা ‘বেআইনি-ব্লাকমেইলিং’ ‘হামাসের সঙ্গে কথা বলেছি, ওরা নিরস্ত্র হবে’— দাবি ট্রাম্পের দরুদ পাঠের ফজিলত

স্বর্ণ মন্দিরে অভিযান: শিখদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছিল যেভাবে

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৯১ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল কুলদীপ বুলবুল ব্রার। কিন্তু ১৯৮৪ সালের ৩১ মে সন্ধ্যায় একটি ফোন আসে তার কাছে। তাকে জানানো হয় পরের দিন সকালে চন্ডীগড়ে একটা জরুরি বৈঠক রয়েছে। সেখানে হাজির হতে হবে তাকে।

সেই সময় পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদের আগুন জ্বলছিল। শিখ সম্প্রদায়ের গুরদোয়ারাগুলোতে পাঞ্জাবকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক খালিস্তান সৃষ্টির পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছিল। এটাও বলা হচ্ছিল প্রয়োজনে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

পাঞ্জাবের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় ছিল দিল্লি। ইন্দিরা গান্ধীর সরকার তখন শিখদের পবিত্র তীর্থস্থান স্বর্ণ মন্দিরে সেনাবাহিনীর অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ব্লু স্টার’। সেদিন ফোনে ডেকে নিয়ে এই অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মেজর জেনারেল ব্রারকে।

জেনারেল ব্রার বলেন, তাকে দ্রুত অমৃতসর পৌঁছাতে বলা হয়। কারণ স্বর্ণ মন্দির দখল করে নিয়েছেন জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে। পাঞ্জাবের আইন শৃঙ্খলা তখন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। অবস্থা সামলাতে না পারলে হয়তো অঞ্চলটি ভারতের হাতছাড়া হয়ে যাবে, এমনই আশঙ্কা করছিল দিল্লি।

স্বর্ণ মন্দিরে অভিযান: শিখদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছিল যেভাবে

ভিন্দ্রানওয়ালেকে প্রথম দিকে কংগ্রেসই উৎসাহ দিয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল আকালীদের বিপরীতে একজন শিখ নেতা তৈরি করা, যাতে তিনি শিখ সম্প্রদায়ের দাবি দাওয়া নিয়ে সরব হতে পারেন, অন্যদিকে আকালীদের জনসমর্থনও কিছুটা কমানো যায়। ভিন্দ্রানওয়ালে নানা স্পর্শকাতর বিষয়ে উত্তেজক ভাষণ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এক সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকেও নিশানা করতে থাকলেন।

১৯৮২ সালে ভিন্দ্রানওয়ালে চক গুরদোয়ারা ছেড়ে প্রথমে স্বর্ণ মন্দির চত্বরে গুরু নানক নিবাসে আশ্রয় নিলেন। তার কয়েক মাসের মধ্যেই আকাল তখত থেকেই তিনি নিজের মতামত ব্যক্ত করতে শুরু করলেন। শিখদের পবিত্র তীর্থস্থান স্বর্ণ মন্দিরে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ৪ জুন থেকে ভিন্দ্রানওয়ালের লোকেরা কোথায় আছে, সেটা জানতে নজরদারি শুরু করা হয়। এজন্য একজন অফিসারকে সাদা পোশাকে স্বর্ণ মন্দিরের ভেতরে পাঠানো হয়েছিল।

পরের দিন সকালে সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা অপারেশনে অংশ নেবে, তাদের ব্রিফ করেন মেজর জেনারেল ব্রার। তার ভাষ্য, ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি প্রত্যেকটা ব্যাটালিয়নের কাছে গিয়ে সেনা সদস্যদের সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টা করে কথা বলেন। তাদের বলা হয়, স্বর্ণ মন্দিরের ভেতরে ঢোকার সময়ে এটা মাথায় রাখার দরকার নেই যে তারা কোনও পবিত্র তীর্থে ঢুকছে। বরং তারা স্বর্ণ মন্দিরে যাচ্ছে ভেতরটা পরিষ্কার করতে। তাই যত কম মৃত্যু হয়, ততই মঙ্গল।

অপারেশন ব্লু স্টার শুরু হয়েছিল রাত ১০টায়। এর নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল সুন্দরজীৎ, জেনারেল দয়াল আর জেনারেল ব্রার। তারা ঠিক করেছিলেন পুরো অপারেশন রাতের অন্ধকারে চলবে। তাই রাত ১০টায় মন্দিরের সামনের দিক থেকে আক্রমণ করা হয়।

প্রথম ব্যাটালিয়নের সেনাদের সঙ্গেই প্যারাশুট রেজিমেন্টের কমান্ডোরা ছিল। তাদের ভেতরে গিয়ে দ্রুত আকাল তখতের দিকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কমান্ডোরা এগোতেই তাদের ওপরে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। মাত্র কয়েকজন কমান্ডোই প্রাণে বেঁচেছিলেন।

তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে যান লেফটেনান্ট কর্নেল ইসরার রহিম খাঁ। ওদিকে ১০ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সিঁড়ির দুই দিকে ভিন্দ্রানওয়ালের সঙ্গীদের মেশিনগানগুলো অকেজো করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সরোবরের উল্টো দিক থেকে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ শুরু হয়।

স্বর্ণ মন্দিরে অভিযান: শিখদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছিল যেভাবে

ভারতীয় সেনাবাহিনী ভাবতেও পারেনি তাদের এরকম প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে। জেনারেল ব্রার বলেন, প্রথম ৪৫ মিনিটেই আমরা বুঝে যাই ওদের পরিকল্পনা। অস্ত্র ভান্ডার নিয়ে তারা বেশ শক্ত দূর্গ গড়ে তুলেছে। আমরা ঠিক করেছিলাম আকাল তখতের ভেতরে স্টান গ্রেনেড ছুড়ব। কারণ ওই গ্রেনেডে মানুষ মরে না। ফাটলে গ্যাস বেরোয়, চোখ পানি আসে, মাথা ঝিম ঝিম করে। কিন্তু গ্রেনেড ছোড়ার কোনও জায়গাই পায়নি সেনারা। প্রত্যেকটা জানালা, দরজায় বালির বস্তা রাখা ছিল। ফলে গ্রেনেড ছুড়লে সেগুলো সেনাদের দিকেই উড়ে আসছিল।

সেদিন মন্দির চত্বরের উত্তর আর পশ্চিম দিক থেকেই যে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা গুলি চালাচ্ছিল তা নয়। ভূগর্ভস্থ নালাতে যে ম্যানহোল থাকে সেগুলোর ঢাকনা খুলে গুলি চালিয়ে আবারও তারা ভেতরেই লুকিয়ে পড়ছিল।

এক প্রাক্তন সেনা জেনারেল শাহবেগ সিং ভিন্দ্রানওয়ালের দলকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তাদের শেখানো হয়েছিল সেনাসদস্যদের হাঁটুর কাছে গুলি করতে। তাদের ধারণা ছিল সেনাবাহিনী গুলি চালাতে চালাতে এগোবে। সেজন্যই বেশিরভাগ সেনাসদস্যের পায়ে গুলি লেগেছিল। আর সেনাবাহিনী যখন এগোতে পারছিল না, তখন জেনারেল ব্রার নির্দেশ দেন আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ব্যবহার করতে।

ওই গাড়ি গুলি নিরোধক হলেও আকাল তখতের দিকে এগোতেই চীনা রকেট লঞ্চার দিয়ে সেটা উড়িয়ে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী ভাবতেই পারেনি তাদের কাছে রকেট লঞ্চার আছে। ওই পরিস্থিতিতে ট্যাঙ্ক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন জেনারেল ব্রার। তারা আশঙ্কা করছিলেন, ভোর হলেই চারদিক থেকে হাজার হাজার লোক এসে সেনাবাহিনীকে ঘিরে ফেলবে। তখন ঠিক করা হয় ট্যাঙ্ক থেকে আকাল তখতের ওপরের তলাগুলো লক্ষ্য করে গোলা ছোড়া হবে।

জেনারেল ব্রার বলছিলেন, হঠাৎ ৩০-৪০ জন লোক বাইরে আসার জন্য দৌড়াচ্ছিল। ওদিক থেকে গুলি চালানোও বন্ধ হয়ে যায়। তখনই জানা যায়, জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে আর জেনারেল শাহবেগ সিং নিহত হয়েছেন।

অপারেশন ব্লু স্টারে ৮৩ জন ভারতীয় সৈনিক নিহত হন। ২৪৮ জনের গুলি লেগেছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী মারা যান ৪৯২ জন আর দেড় হাজারেরও বেশি লোক গ্রেপ্তার হন। এর ফলে শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বে শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিতভাবেই জয়ী হয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছিল ভারত সরকারের। যার মূল্য প্রাণ দিয়ে চুকিয়েছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

এ বিষয়ে আরও নিউজ পড়ুন,

খালিস্তান আন্দোলন কি? কে এই শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার এই লিংকে

যে কারণে শিখদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের আন্দোলন এই লিংকে

এবার কানাডীয় কূটনীতিককে ভারত ছাড়ার নির্দেশ এই লিংকে

ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কানাডা থেকে ‘র’ প্রধানকে বহিষ্কার এই লিংকে

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit