বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৫ অপরাহ্ন

পেঁয়াজ-আলু-ডিমের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হয়নি

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১১৫ Time View

ডেস্কনিউজঃ গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাড়তে থাকা দামের লাগাম টানতে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দেন। তাতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

কথা হয় নগরীর পূর্ব রাজাবাজারের মুদি দোকানি দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তার দোকানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৯০ টাকায়। পাশাপাশি ডিম ১৩ টাকায় ও আলু ৪৮ টাকায় বিক্রি করছিলেন তিনি।

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের প্রসঙ্গে কথা উঠলে তিনি বলেন, ‘সরকার তো ঘোষণা দিয়েই খালাস। আমরা যে পাইকারি আড়ৎ থেকে মাল কিনি, সেইখানে তো দাম কমে নাই। ৮০ টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনে তো ৬৫ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব না।’

একই এলাকার সবজি বিক্রেতা আসাদ দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা ও আলু ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন।

এর আগে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার শামীম সরনিতে সুপার সপ ডেইলি শপিং’র একটি আউটলেটে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হতে দেখা গেল সাড়ে ১২ টাকায়। সেখানে পেঁয়াজ ও আলুর দাম ছিল যথাক্রমে ৯৫ ও ৪৪ টাকা।

জানতে চাইলে ওই আউটলেটের বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, ‘কোম্পানি’ থেকে দাম পুনঃনির্ধারণের কোনো নির্দেশনা তারা এখনো পাননি।

কাছাকাছি আরেক সুপারশপ স্বপ্ন’র একটি আউটলেটে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হলেও পেঁয়াজ ৭৫ টাকা ও আলু ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

এ বিষয়ে ওই আউটলেটের ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল হোসেন বললেন, ‘আমাদের প্রতিটি আউটলেটে নতুন দাম কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুসারে প্রথম দিনে আমরা ডিম ১২ টাকায় বিক্রি করছি। ধীরে ধীরে পেঁয়াজ, আলুর দামও কমানো হবে।’

এদিকে কারওয়ানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. মুছিরউদ্দিনকে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেল ৪০০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৮০ টাকা।

কাছাকাছি আরও কয়েকজন একই দামে পেঁয়াজ বিক্রির কথা জানালেন।

আর বাজারের আলুপট্টিতে আকার ও ধরনভেদে প্রতি পাল্লা আলু ২২০ থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা যায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা।

এ ছাড়া এখানে প্রতি ডজন লাল ফার্মের ডিমের দাম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা চাইলেন বিক্রেতারা। জানালেন, আড়তদারদের কাছ থেকে তারা যে দামে কিনেছেন, সে অনুসারেই ডিম বিক্রি করছেন তারা।

এর আগে ইন্দিরা রোড এলাকায় কথা হয় ক্রেতা আহসানুল কবিরের সঙ্গে। বাড়ির পাশের একটি দোকান থেকে ৮৫ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনলেন তিনি। এ সময় পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েই বলে ওঠেন, ‘সরকারের এই ঘোষণায় আস্থা রাখার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না। সরকার নিয়মিত সিলিন্ডার গ্যাসের দাম সমন্বয় করে। কিন্তু সে দামে আমরা কখনো কিনতে পারি না। একইভাবে চিনি ও তেলের দামও বিভিন্ন সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। সেটাও কোথাও কার্যকর হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তাই আলু, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এটা কার্যকর হবে—তা আমি বিশ্বাস করি না।’

গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩ পণ্যের যে দাম ঘোষণা করেছে, তা কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮–এর ক্ষমতাবলে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এত দিন আমরা কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিইনি। আজই (বৃহস্পতিবার) প্রথম তা করে দিলাম। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তা করা হয়েছে। আশা করছি এটা বাস্তবায়ন করতে পারব।’

এর আগে গত বুধবার কৃষিপণ্যের মূল্য পর্যালোচনাসংক্রান্ত সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উপস্থাপনা দেওয়া হয়। সেখানে বলায় হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম কমেছে। এই সময়ে পেঁয়াজের দাম প্রতি মেট্রিক টনে কমেছে ১২ শতাংশ, আদার দাম কমেছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, কাঁচা মরিচের দাম ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ডিমের দাম প্রতিটিতে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে শুধু রসুনের দাম অপরিবর্তিত আছে।

অথচ গত এক মাসে দেশের বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনায় বলা হয়।

এই উপস্থাপনায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব উদ্ধৃত করে বলা হয়, দেশে চলতি বছর ডিমের চাহিদাতিরিক্ত সরবরাহের পরিমাণ ১৩৪ কোটি ৫৮ লাখ পিস। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, অতিরিক্ত সরবরাহ বিবেচনায় দেশে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিটি লাল ডিম বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ছয় টাকা এবং প্রতিটি সাদা ডিম পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও বলছে, দেশের পাইকারি বাজারে গত ২২ আগস্ট প্রতি কেজি আলুর বিক্রয়মূল্য ছিল ৩৩ টাকা ৮৪ পয়সা এবং ১১ সেপ্টেম্বর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ টাকায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ দিনে পাইকারি বাজারে আলুর দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ, যার সঙ্গে অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্পৃক্ততা নেই।

কিউএনবি/বিপুল /১৫.০৯.২০২৩/ রাত ৯.১৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit