শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

শিশুর মানসিক চাপ কী, জেনে নিন লক্ষণ ও উপসর্গ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১০৯ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : আমরা এমন একটি সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যখন বিশ্বব্যাপী মানসিক চাপ বাড়ছে। বড়দের মতো অনেক শিশু এই মুহূর্তে সংগ্রাম করছে। যেমন- বাড়িতে নেতিবাচক পরিস্থিতি, স্কুলে সহিংসতা বা পরীক্ষা। এমনকি নতুন বন্ধু তৈরি করার মতো ইতিবাচক পরিবর্তনও শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি করছে।

মানসিক চাপের কারণ

বড়রা যেভাবে মানসিক চাপ অনুভব করে শিশুরা সবসময় সেভাবে তা করে না। যেখানে বড়দের ক্ষেত্রে কাজ-সম্পর্কিত মানসিক চাপ খুব সাধারণ ঘটনা, সেখানে বেশিরভাগ শিশু চাপ অনুভব করে যখন তারা হুমকির সম্মুখীন হয় এবং কঠিন বা বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: নিজেদের সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা বা অনুভূতি। বয়ঃসন্ধিকাল শুরুর মতো তাদের শরীরিক পরিবর্তন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কুল থেকে পরীক্ষা ও বেশি বেশি হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজের চাপ। স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে মনোমালিন্য ও সামাজিকতা। বাড়ি বদল, স্কুল পরিবর্তন বা বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের মতো বড় পরিবর্তন। দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, পরিবারে আর্থিক সমস্যা বা প্রিয়জনের মৃত্যু। বাড়িতে বা বাড়ির আশেপাশের অনিরাপদ পরিবেশ।

শিশুদের মাঝে মানসিক চাপের লক্ষণ ও উপসর্গ

যখন শরীর চাপের মধ্যে থাকে তখন এটি অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসলের মতো হরমোন তৈরি করে, যা আমাদের জরুরি পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করে, এটি ‘ফাইট বা ফ্লাইট’ প্রতিক্রিয়া হিসেবেও পরিচিত। এটি একটি শিশুর মন ও শরীরের ওপর অনেক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন- দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, ঘাম ও হার্টবিট বেড়ে যাওয়া। মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ও ঘুমাতে অসুবিধা। বমি বমি ভাব, বদহজম বা হজমের সমস্যা। খুব বেশি বা খুব কম খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস। অস্বস্তি ও ব্যথা এবং প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়া। আবেগীয় ও মানসিক প্রভাব। বিরক্তি ও রাগ, মেজাজ বিগড়ে যাওয়া বা পরিবার ও বন্ধুদের থেকে সরে যাওয়া। দায়িত্বে অবহেলা করা, কার্য সমাধানে কম দক্ষতা বা মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া। ক্রমাগত দুঃখ বোধ করা বা অশ্রুসিক্ত হওয়ার মতো মানসিক যন্ত্রণা। এই লক্ষণগুলো প্রায়ই আরও মানসিক চাপের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আপনার সন্তানকে এ ধরনের মানসিক অবস্থা সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে সাহায্য করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা এমনটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মোকাবিলা করতে পারে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সাহায্য করার উপায়

শিশুরা যখন মানসিক চাপ অনুভব করে, তখন তা সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে বাবা-মা তাদের সাহায্য করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। বড়দের মতো, শিশুদেরও মাঝে মাঝে নিজেদের প্রতি সদয় হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে হয়।

কারণগুলো চিহ্নিত করুন: আপনার সন্তান কখন চাপ অনুভব করে তা বুঝতে এবং সেই সময়ের কথা মনে রাখা শুরু করতে সহায়তা করুন। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখানোর পন্থাগুলো খেয়াল করুন। তখন কী ঘটেছিল? মানসিক চাপ অনুভব করার ঠিক আগে তারা কী ভাবছিল, অনুভব করেছিল বা করছিল? তাদের চাপ অনুভব করাতে পারে– এমন অসুবিধাগুলো তারা শনাক্ত করতে পারলে আপনি তাকে সঙ্গে নিয়ে একত্রে মানসিক চাপ প্রতিরোধ করার বা দ্রুত এটি সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে পারবেন।

ভালোবাসার সঙ্গে উত্তর দিন: আপনার সন্তানকে অতিরিক্ত ভালোবাসা, সময় এবং তার প্রতি মনোযোগ দিন। মানসিক চাপ তাদের স্বাস্থ্য, আচরণ, চিন্তা বা অনুভূতিকে প্রভাবিত করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করুন। তাদের কথা শোনার কথা স্মরণে রাখুন, সদয়ভাবে কথা বলুন এবং তাদের আশ্বস্ত করুন।

রোল মডেল হোন: আপনি যেভাবে মানসিক চাপের পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন সে সম্পর্কে আপনার সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে, আপনি আপনার সন্তানকে মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার অভ্যাস খুঁজে পেতে উৎসাহিত করতে পারবেন, যা তাদের জন্য কাজে আসবে।

ইতিবাচক চিন্তার প্রচার করুন: শিশুদের, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিজেদের সম্পর্কে খারাপ চিন্তা করা সহজ। আপনি যদি ‘আমি কোনও কিছুতেই ভালো নই’, ‘আমি নিজেকে পছন্দ করি না’ বা ‘আমি বাইরে যেতে ভয় পাই’- এর মতো কথা শুনতে পান, তাহলে তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে তাদের এই অনুভূতির কারণ কী এবং তাদের এমন সব সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিন যখন তারা কোনও কাজ সম্পন্ন করেছিল, আর কীভাবে তা করেছিল। আপনার কাছ থেকে এমন ইতিবাচক কথা শুনলে, তারা যে মানসিক চাপের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে সে বিষয়টি বুঝতে পারবে ও আত্মবিশ্বাসী হবে।

ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করুন: ঘুম এবং ভালো খাওয়া-দাওয়া মানসিক চাপের মূল উপশমকারী। বিশেষজ্ঞরা ৬ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য রাতে ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেন। কিশোর-কিশোরীদের রাতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ভালো ঘুমের জন্য রাতে স্ক্রিন ব্যবহার সীমিত করুন এবং বেডরুমে ডিজিটাল ডিভাইস রাখা এড়িয়ে চলুন। আপনার শিশু যত ভালো পুষ্টি ও বিশ্রাম পাবে, তত বেশি সে মানসিক চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। আপনার সন্তানকে ঘরের বাইরে যেতে, খেলাধুলা করতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে উৎসাহিত করুন। যোগ ব্যায়াম ও গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার মতো ব্যায়াম ও কার্যকলাপ মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।

কখন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেবেন

যদি আপনার সন্তান মানসিক চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়ে, তাহলে একজন প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি বিবেচনা করুন, যিনি সাহায্য করতে পারেন। পরামর্শের জন্য আপনার পারিবারিক চিকিৎসক বা একজন পরামর্শদাতার সঙ্গে কথা বলুন। তারা আপনাকে বিদ্যমান চিকিৎসার বিষয়ে পরামর্শ দিতে সক্ষম হবেন। যেমন, একজন মনোবিজ্ঞানীর সঙ্গে সময় কাটান, যিনি মানুষকে মানসিক চাপ সামাল দিতে এবং ইতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করেন। আপনার সন্তানের জন্য পেশাদারদের কাছে সাহায্য চাইতে ভয় পাবেন না। যদি মানসিক চাপ আপনার সন্তানের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা ভালো অনুভব করতে শুরু করে।

সূত্র: ইউনেসেফ

কিউএনবি/অনিমা/১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৩:৪২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit