শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবা-মাকে বাড়ি ছাড়া করলো ৩ ছেলে

তোবারক হোসেন খোকন,দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  • Update Time : রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১০৯ Time View

তোবারক হোসেন খোকন,দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি : কৌশলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন ৩ ছেলে। ছেলের বউ দিয়েছে টাকা চুরির অপবাদ। শুধু তাই নয়, পেটের তাগিদে তাদের করতে হয়েছে ভিক্ষাও। এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছাড়তে হয়েছে সেই বাড়ি। নদীর পাড়ে শাড়ি আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বৃদ্ধ বাবা সুরেশ চন্দ্র দাস (৭০) ও বৃদ্ধ মা বেলি রাণী দাস (৬০)।এ নিয়ে রোববার সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের সাধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ মা বেলি রাণী দাস জানান, চার ছেলে সন্তান নিয়েই ছিল তাদের সংসার। স্বামী ছিলেন সহজ-সরল। সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে শেষ সম্বলের ২০ শতাংশ জায়গার ১৮ শতাংশ তিন ছেলে শ্যামল, সাগর ও সজল তাদের নামে লিখে নিয়েছে। সবার বড় ছেলে পরিমল বাবা মতোই সরল হওয়ায় তাকে দেয়নি কিছুই। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর যখন ছেলেদের সঙ্গেই তাদের ঘরে থাকতে হয়েছে। সে-সময় প্রায়ই না খেয়েও থেকেছেন। আবার পেটের তাগিদেও দুইজনের রাস্তা রাস্তায় ভিক্ষা করেও খাবার জোগাতে হয়েছে। এরপর একদিন তাদের ঘরের টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলের বউ ঘর থেকে লাত্তি মেরে বের করে দেওয়ার কথা বলে। এইসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই বাড়ি ছেড়ে এখন বাড়ির সামনে নদীর পড়ে শাড়ি কাপড় আর টিনের তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, “তারার ঘরো রাইখা আমারে কয়েকদিন ভাতও দিছে না। রান্না কইরা তারা খাইয়া গেছে গা পরে আমি নিজে নিজে লাইয়া খাইছি। কয়েকদিন পরে ঝগড়া লাইগা ছেলের বউ আমারে লাত্তিয়া ঘরতে বাইর করে আর আমারে কই আমি তারার ঘরের এইটা-ওইটা চুরি কইরা লাই তারার ঘরো টাকা রাখলে টাকা থাহে না। পরে আমি কইছি এহন ২০০ টাকা নাই, আরেকদিন কইবো তারার দরজা খোলা আছিন ৫ লাখ টাকা নাই আমি চুরি করছি তাই এই লজ্জায় বাড়ি ছাইরা এইনে এই ঘরো থাকতাছি, বৃষ্টি আইলে ঘরের ভিতরে পানিও পড়ে।বাবা সুরেশ চন্দ্র দাস জানান, তিন ছেলে তার টিপসই চাইলে তিনি টিপসই দিয়ে দেন। এরপর তিন ছেলে মিলে যা শিখিয়েছে তাই বলেছেন। এভাবেই আমার শেষ সম্বল, তারা নিজেদের নামে লিখে নিয়েছে তিনি বুঝতেই পারিনি। আমি এখন পথের ফকির হয়ে গেলাম।

বড় ছেলে পরিমল চন্দ্র দাস জানান, তিন ভাই বাবার সব জায়গা তাদের নামে লিখে নেওয়ার প্রায় এক বছর পর তিনি জানতে পেরেছেন। পরবর্তীতে দরবারে তিন ভাই মিলে নেওয়া জায়গা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তারা ফেরত দেয়নি। আমি বাবা মা কে নিয়ে চলতে কস্ট হচ্ছে।অভিযুক্ত ছেলেদের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাসের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অস্বীকার করে জানান, বাবা-মায়ের সব অভিযোগই মিথ্যা। বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জায়গা লিখে দিয়েছেন। আর বাড়ি ছাড়া আমরা করেনি। তারাই সেখানে গিয়ে থাকছেন। আমি প্রতিমাসে টাকাও দিচ্ছি। তারই বউয়ের দেওয়া ঘর থেকে টাকা চুরির অপবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে কথাটি এড়িয়ে যান তিনি।

এ প্রসঙ্গে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ নুরুল আকরাম খান জানান, তিন ছেলে মিলে তাদের বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেওয়ার ঘটনাটি সত্যি। আমি তিন ছেলেকে অনেকবার বলেছি কিন্তু তারা কিছুই শুনেনি। ছোট দুই ছেলে খুবই খারাপ। বড় দুইজন বাবা-মাকে দেখাশোনার কিছুটা চেষ্টা করে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

কিউএনবি/অনিমা/০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/দুপুর ২:৪৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit