এম,এ,রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় অটোরাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না হাসকিং (মিল-চাতাল) মালিকরা। লোকসান গুনতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাবসায়ীরা। ফলে লোকসান সামলাতে প্রায় অর্ধশত মিল-চাতাল বন্ধ করে দিচ্ছেন।
দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম চালের মোকাম উপজেলার সলুয়া, পুড়াপাড়া, সিংহঝুলী, পাশাপোল অর্ধশতাধিক হাসকিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ না করায় উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক চালকল মালিক সরকারের কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এক সময়ে হাসকিং মিলের মালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের পদচারণায় মুখরিত থাকত এ জনপথ। অটোরাইস মিলের দাপটে টিকতে না পেরে হাসকিং মিলের বেশির ভাগই এখন বন্ধ। কোনো কোনো মিল মালিক চাতালে গাড়ির গ্যারেজ, গরুর খামার ও অন্য কাজের জন্য ভাড়া বসিয়েছেন। এসব চাতালে কর্মরত প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক জীবিকার তাগিদে পেশা বদলেছেন।
চৌগাছা চালকল মালিক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানায়, ১০ বছর আগে চৌগাছাতে প্রায় দুই শতাধিক তালিকাভুক্ত হাসকিং মিল চালু ছিল। এর বাইরেও আরও প্রায় শতাধিক মিল-চাতাল গড়ে ওঠেছিল। এখন সর্বসাকুল্যে অর্ধশত মিল চালু আছে। বাকি মিল-চাতাল বন্ধ। যেগুলো চালু রয়েছে এগুলোর অবস্থা নাজুক। ব্যাংক ঋণ ও দায়দেনায় এসব মিল মালিকরা জর্জরিত। হাসকিং মিলে প্রায় ৫ হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। তারা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অনেকেই পেশা বদল করেছেন।
এদিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে চৌগাছায় ১টি অটোরাইস মিল ও ২টি মেজর রাইস মিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অটোরাইস মিলে উৎপাদিত চালের উৎপাদন খরচ কম আর হাসকিং মিলে বেশি। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি মজুরি বৃদ্ধি এবং ধান ও চালের দামে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় একে একে বন্ধ হচ্ছে হাসকিং মিল। খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষকদের যেমন ধান উৎপাদনের প্রণোদনার সুবিধা প্রদান করা হয়, তেমনি চালকল মালিকদের প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন হাসকিং মিলের মালিকরা।
হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল আলীম জানান, নব্বইয়ের দশক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম হিসেবে চৌগাছার পরিচিত ছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান এনে হাসকিং মিলে চাল উৎপাদন করতেন। পৌর এলাকা উপজেলার পাশাপোর, সলুয়া ও পুড়াপাড়া এলাকায় বেশির ভাগ মিল ও চাতাল ছিল। এছাড়াওউপজেলা জুড়ে ছোট-বড় সহস্রাধিক মিল-চাতাল গড়ে ওঠে। চাল বেচাকেনার জন্য গড়ে উঠেছিল শতাধিক রাইস এজেন্সি। এসব রাইস এজেন্সির মালিকরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুষ্টিয়া ও সিলেটসহ বিভিন্ন শহরে চাল সরবরাহ করতেন। ২০১২ সালের দিকে প্রথম পুড়াপাড়ায় অটোরাইস মিল স্থাপন হলে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে হাসকিং মিল। লোকসানে পড়ে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা অনেকে হয়েছেন নিঃস্ব। পৌর এলাকার মিলমালিক আমজেদ ধনী বলেন, অটো রাইস মিল ও মেজর মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হাসকিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায় লোকসানের ফলে তারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করতে পেরে কেউ কেউ ঋণখেলাপি হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন।
চালকল মালিক গ্রুপের উপজেলা সভাপতি রাজু দফাদার বলেন, চৌগাছা এলাকায় একসময়ে বিপুল হাসকিং মিল থাকলেও এখন কমে ৬০/৭০-তে দাঁড়িয়েছে। মিলমালিকরা পুঁজি হারিয়েছেন। মিলের যন্ত্রাংশ ও জমি বিক্রি করে অনেকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেছেন। ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে হাসকিং মিলে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। অটোরাইস মিলে দুই-এক দিনের মধ্যে চাল উৎপাদন করে বাজারজাত হয়। তাদের উৎপাদন খরচও অনেক কম। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাচ্ছে না।তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ধান ও চালের দামে অসামঞ্জস্যতার কারণে খাদ্যগুদামে সরকারনির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ না করায় অনেক চালকল কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে পুঁজি হারিয়ে মিল মালিকরা মিল বন্ধ করে দিয়েছেন।
কিউএনবি/আয়শা/২৯ অগাস্ট ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:২৫