শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ অপরাহ্ন

কবি টেড হিউজ: বাজপাখির মন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩
  • ১০১ Time View

সাহিত্যপাতা ডেস্ক : যদিও হিউজ এখন দ্ব্যর্থহীনভাবে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসাবে স্বীকৃত। তার জীবদ্দশায় তিনি খুব বেশি আলোচনায় আসেন সম্ভবত দুটি বড় ঘটনার কারণে– ১৯৬৩ সালে তার স্ত্রী সিলভিয়া প্লাথের আত্মহত্যা এবং ১৯৬৯ সালে আসিয়া ওয়েভিলের আত্মহনন। কেননা এই মহিলার জন্য তিনি সিলভিয়া প্লাথকে ছেড়েছিলেন। আসিয়া ওয়েভিলের তাদের অল্পবয়সী মেয়ে সুরাকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এখন আমরা তার একটি বিখ্যাত কবিতা পড়ে নিতে পারি।

বাজপাখি ভাজা

 

বসে আছি কাঠের ওপর, চোখ বন্ধ।
নিষ্ক্রিয়, কোন মিথ্যা স্বপ্ন নয়;
আমার বাঁকানো মাথা পায়ে জড়ানো
বা ঘুমের মধ্যে নিখুঁত হত্যা আর খাওয়ার চর্চা-
 
আছি আমি উঁচু গাছের সুবিধায়!
বাতাসের উচ্ছ্বাস এবং সূর্যের রশ্মি
আমার জন্য সুবিধাজনক;
পৃথিবীর মুখ উপুড় করে আছে আমার দিকে আমার পর্যবেক্ষণের আশায়।
 
রুক্ষ ছালে আটকে আছে আমার পা।
এটি নিয়ে নিলো সৃষ্টির পুরোটাই
আমার পা, আমার প্রতিটি পালক তৈরি করতে;
এখন আমি আমার পায়ে সৃষ্টিকে ধরে রাখি
অথবা উড়ে যায়, অতঃপর ধীরে ধীরে সবকিছু ঘুরতে থাকে-
এখন আমি যেখানে খুশি খুন করি কারণ এসবই আমার।
আমার শরীরে কোন চতুরতা নেই,
শিষ্টাচারে ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার মাথা-
 
মৃত্যু বরাদ্দ!
কারণ আমার উড়ালের পথ একটিই-
সরাসরি জীবিতদের হাড়ের মাঝদিয়ে।
কোনো যুক্তিই আমার অধিকারের ওপর জোর খাটাতে পারে না;
 
সূর্য আমার পেছনে,
কিছুই পরিবর্তন হয়নি আমি শুরু করার পর থেকে।
কোন পরিবর্তন আমার নজর কাড়তে পারেনি,
আমি সবকিছুর যত্ন নেই এভাবে।
 

টেড হিউজের কবিতায় মানবতা এবং প্রকৃতির মধ্যকার জটিল সম্পর্কের বিষয়গুলো উঠে এসেছে গভীরভাবে। ধরা দিয়েছে সেসব বিষয়, মানুষের কাঁচা আবেগ এবং আদিম প্রবৃত্তি যা আমাদেরকে প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত করে। এটি মূলত মানুষের জ্বলে ওঠার এবং বিস্ময়ের উৎস। টেড হিউজের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতাগুলোর মধ্যে একটি হলো, ‘হক রোস্টিং’ (বাজপাখি ভাজা)। প্রাকৃতিক বিশ্বের সারমর্ম এবং মানুষের আদিম আচরণকে এতে তুলে ধরেছেন কবি।
১৯৬০ সালে তার কবিতা সংগ্রহ ‘লুপারকাল’ এর অংশ হিসাবে প্রকাশিত হয় ‘হক রোস্টিং’। হৃদয়স্পর্শী বর্ণনায় কবি একটি বাজপাখির মনের আলো ফেলেছেন এ কবিতায়। কবিতাটি একটি নাটকীয় মনোলোগ, যা পাঠককে বাজপাখির অন্তরে প্রবেশ করতে এবং তার দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বকে দেখার সুযোগ করে দেয়। এই অন্তর্মুখী অন্বেষণের মাধ্যমে হিউজ মানুষের ক্ষমতা, আধিপত্য এবং আদিম প্রবৃত্তির থিমগুলোকে সম্বোধন করেছেন। কারণ এসবই জীবকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এ কবিতায় বাজপাখি পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে বাতাসের সাথে কথা বলে, নিজেকে চিত্রিত করে একজন চূড়ান্ত শিকারি এবং তার এলাকার একজন শাসক হিসাবে। হক রোস্টিং-এ হিউজের ভাষা এবং চিত্রকল্পের ব্যবহার খুবই প্রাণবন্ত এবং স্পষ্ট। কবি একটি বাস্তব পরিবেশ তৈরি করে সংবেদনশীল বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। পাঠককে তিনি বাজপাখির আধিপত্য এবং ক্ষমতা উপলব্ধি করার সুযোগ করে দেন।
বাজপাখির আক্ষরিক চিত্রায়নের বাইরেও কবিতাটি মানব প্রকৃতির একটি আয়না ধারণ করে। হিউজ, প্রায়শই প্রাকৃতিক বিশ্বের সাথে তার সংযোগ এবং প্রাণিদের সাথে তার মুগ্ধতার যোগাযোগ এবং মানুষের আচরণের প্রাথমিক দিকগুলো পরীক্ষা করার জন্য বাজপাখিকে একটি বাহন হিসাবে ব্যবহার করেন। এ কাজটি করতে গিয়ে তিনি সভ্যতা এবং অদম্য প্রবৃত্তির মধ্যে সরু রেখা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একটি বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে, ‘হক রোস্টিং’ হিউজের বৃহত্তর কাজের প্রতীক।

যদিও ১৯৬০-এর দশকে হিউজের জন্য বেদনা-বিধুর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তিনি পরবর্তী জীবন লেখালেখি এবং কৃষিকাজে কাটান। কবি ১৯৭০ সালে ক্যারল অর্চার্ডকে বিয়ে করেন এবং তারা তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডেভনের একটি ছোট খামারে বসবাস করেন। হিউজ ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৮ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ৯:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2023
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit